গরুতে ঠাসা হাট : হাতবদলে সীমাবদ্ধ

মাজেদুল হক মানিক: চারদিকে যতদূর নজর যায় গরু আর গরু। সাথে প্রচুর সংখ্যক মানুষ। এক হাঁটু কাদা উপেক্ষা করে মলিন মুখে গরুর রসি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন তারা। বিপুল মানুষের উপস্থিতি দেখে মনে হতে পারে কতই না বেচাকেনা চলছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। যে মানুষগুলো দেখা যাচ্ছে তার বেশিরভাগই গরুর মালিক। দিন শেষে বেশিরভাগ মানুষ গরু ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। দেখা পাওয়া যায়নি গরু ক্রেতাদের। হাতেগোনা কয়েকজন ব্যাপারী আসলেও দামে পড়তা হয়নি। এর মধ্যে যারা ভাগ্যবান ব্যক্তি হিসেবে গরু বিক্রি করতে পেরেছেন তারও নেই স্বস্তিতে। কারণ বেশিরভাগ গরুতে লোকসান গুনতে হয়েছে। নেই বাইরের ব্যাপারী তাই স্থানীয় ব্যাপারীদের এক জন কিনে আরেকজনের কাছ থেকে বিক্রি করছেন। চলছে হাত বদল তাই হাটে আনা গরুর সংখ্যা কমছে না। এই চিত্র মেহেরপুর ও আশেপাশের জেলার সবচেয়ে বড় কোরবানির পশু হাট বামন্দী-নিশিপুর হাটের। গতকাল শুক্রবার পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙ্গে বিপুল সংখ্যক গরু আমদানী হলেও বাইরের ব্যাপারী সংখ্যা ছিলো হাতেগোনা। হাটঘুরে জানা গেছে, মেহেরপুর জেলা ছাড়াও কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার জেলার মানুষ বামুন্দী-নিশিপুর পশু হাটে গরু কেনা-বেচা করে থাকেন। কোরবানির বাকি আর মাত্র কয়েকদিন তাই কেনাবেচায় তাড়া রয়েছে। তবে গরু খামারী, স্থানীয় ব্যাপারী এবং ক্রেতাদের কেউই সন্তোষ প্রকাশ করেননি। গরু ব্যাপারী গাংনী উপজেলার কামারখালী গ্রামের আছেল উদ্দীন বলেন, গ্রাম থেকে স্থানীয় ব্যাপারীরা গুরু কিনে হাটে তোলেন। খামারি এবং প্রান্তিক কৃষকদের বেশিরভাগ হাটে গরু বিক্রি করেন না। এবার কোরবানির পশু হাটে এবার ঢাকার ব্যাপারীর সংখ্যা কম। তাই স্থানীয় ব্যাপারীদের মধ্যে কেনাবেচা বেশি হচ্ছে। হাটে কিনে হাটেই বিক্রির চেষ্টা চলছে। গরু ব্যাপারী মালসাদহ গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, আজকের হাটে দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকা দামের গরু কিছুটা চাহিদা রয়েছে। আড়াই লাখের বেশি দামের গরুর কাস্টমার নেই বললে ভুল হবে না। কারণ ঢাকার ব্যাপারীরা সব সময় বড় গরু কিনে থাকেন। এবার হাটে তাদের সংখ্যা যেমনি কমেছে তেমনি বড় গরু এড়িয়ে যাচ্ছেন ঢাকার ব্যাপারীরা। কেনাবেচার বিষয়ে কয়েকজন ব্যাপারী জানান, গোখাদ্যের দাম বাড়ার কারণে গরু পালনকারীদের কাছ থেকে বেশি দামে গরু কিনতে হচ্ছে। সেই গরু হাটে তুলে বিক্রি হচ্ছে লোকসানে। হাতবদল হলে ব্যাপারীদের কি লাভ? এমন প্রশ্নে কয়েকজন ব্যাপারী বলেন, স্থানীয় ব্যাপারীরা গরু কিনে বিভিন্ন হাটে তোলেন। হাট থেকে গরু কেনার পরই বেচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। যেগুলো অবিকৃত থাকে সেগুলো ব্যাপারীদের বাড়ির গোয়ালে রাখা হয়। পরের দিন অন্য কোন হাটে তোলা হয় এসব গরু। এ বছর গরু হাত বদল হলেও বাইরে যাচ্ছে খুবই কম। তবে রাজধানী ঢাকার কোরবানির পশু হাটে গরু পাঠানো শুরু হয়েছে জানিয়ে কয়েকজন খামারী ও ব্যাপারী জানান, স্থানীয়ভাবে এবার বিক্রি কম। তাই ঢাকার বাজারগুলোতে বেচার লক্ষ্য রয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যে গরু বিক্রি না হলে স্থানীয় ব্যাপারীদের প্রায় সকলেই ঢাকার হাটে যাবেন।
মেহেরপুর জেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে জেলায় কোরবানির পশু রয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার ৭৫৩টি। জেলায় মোট কোরবানির চাহিদা ৯০ হাজার ১৯৩টি পশু। তাই উদ্বৃত পশুর সংখ্যা ৮১ হাজার ৫৬০টি। এর মধ্যে গরুর সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। উদ্বৃত্ত এই গরুর বেশিরভাগ চলে যাবে রাজধানীর বাজারগুলোতে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More