গাংনীতে একই নামে দুটি বিদ্যালয় : বিপাকে শিক্ষার্থীরা

মামলা জটিলতায় আটকে গেছে সকল কার্যক্রম : দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি
গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনীর মোমিনপুরে স্থাপিত এমজিজিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয় নিয়ে স্থানীয় দুই গ্রামের লোকজনের মধ্যে চলছে রশি টানাটানি। মোমিনপুর ও গোয়ালগ্রামে একই নামে রয়েছে এ দুটি বিদ্যালয়। গোয়ালগ্রামের লোকজন বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়েছে মর্মে দাবী করলেও সেটি মানতে নারাজ মোমিনপুর গ্রামবাসী। এতে মোমিনপুরের লোকজন উচ্চ আদালতে রিট করায় আটকে গেছে বিদ্যালয় দুুটির এমপিওভুক্তিসহ উন্নয়ন কার্যক্রম। দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে কোনো বেতন ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করে বিদ্যালয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী স্থানীয়দের।
জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে মেহেরপুরের গাংনীর মোমিনপুরে স্থাপিত হয় ‘এমজিজিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ চার গ্রামের নামের প্রথম অক্ষর (মোমিনপুর, গোয়ালগ্রাম, চরগোয়ালগ্রাম, মোহাম্মদপুর) দিয়ে শুরু হওয়া এ বিদ্যালয়টি বেশ সুনামের সাথে শিক্ষা কার্যক্রম চলছিলো। বিদ্যালয়টিতে গোয়ালগ্রামের শিক্ষার্থী সংখ্যা আনুপাতিক হারে একটু বেশি ছিলো। তাই গোয়ালগ্রামের লোকজন তাদের গ্রামেই এমজিজিএম নামের বিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। মোমিনপুর গ্রামের লোকজন ও বিদ্যালয়ের কমিটির মতামত ছাড়াই ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করে তারা। মোমিনপুরে স্থাপিত বিদ্যালয়ের আইডি ব্যবহার করেই শুরু করে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম।
গোয়ালগ্রামে স্থাপিত বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলায় ওই গ্রামের শিক্ষার্থীরা মোমিনপুরে আসতে অনিচ্ছুক। এদিকে পারগোয়ালগ্রাম, মোমিনপুর ও মহাম্মদপুর গ্রামের শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় তারা মোমিনপুরে পড়াশোনা করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। বর্তমানে মোমিনপুর বিদ্যালয়টিতে রয়েছে ১৩৯জন শিক্ষার্থী। একই নামে দুটি বিদ্যালয় স্থাপিত হওয়ায় দুটি গ্রামের লোকজনের মধ্যেও সৃষ্টি হয় মনস্তাত্বিক লড়াই। গোয়ালগ্রামে স্থাপিত বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে একটি মামলা করেন মোমিনপুর গ্রামের এনামুল হক। একই বছরে ওই মামলাটি মোমিনপুরের পক্ষে রায় হয়।
মামলায় রায় গোয়ালগ্রামে স্থাপিত বিদ্যালয়ের বিপক্ষে যাওয়ায় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল হুদা উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে একটি আপিল করেন ২০২১ সালে। সেই সাথে মেহেরপুর জেলা শিক্ষা অফিসের দ্বারস্থ হন তিনি। মোমিনপুর গ্রামের আশেপাশে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই এবং আশেপাশের গ্রামের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত নয় এমন তথ্য প্রদান করে শিক্ষা অফিস থেকে একটি সনদ নেন। পরে ওই লিখিত সনদ উচ্চ আদালতে পেশ করলে গোয়ালগ্রামের এমজিজিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের পক্ষে রায় হয় ২০২১ সালে। একই সময়ে শিক্ষা অফিসের দেয়া সনদটি সঠিক নয় মর্মে বেশ কয়েকটি প্রমাণপত্র যোগাড় করেন মামলার বাদী এনামুল হক। তিনি ওই সনদপত্র আদালতে পেশ করে রিট করলে গোয়াল গ্রামের বিদ্যালয়ের পক্ষে দেয়া রায় স্থগিত হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, মোমিনপুরে স্থাপিত বিদ্যালয়টিতে সব ধরণের সুবিধা রয়েছে। যাতায়াত ও শিক্ষা ব্যবস্থাটি সুন্দর। পক্ষান্তরে গোয়াল গ্রামের বিদ্যালয়টিতে রয়েছে নানা সমস্যা। বিশেষ করে বিদ্যালয়ে যাবার কোনো পথ নেই। অন্যের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করায় ওই জমির মালিক স্কেভেটর দিয়ে খুড়ে রাস্তা বন্ধ করে দেন। তাছাড়া সরকারি রাস্তাটি নদী ভাঙ্গনের কারণে বিলীন হয়েছে বছর দশেক আগে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সমস্যা প্রকট। এছাড়াও এক কিলোমিটার দূরে রামনগর বিদ্যালয়। ফলে শিক্ষার্থী সঙ্কট হতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
মোমিনপুর এমজিজিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন জানান, মোমিনপুর বিদ্যালয়ের আইডি ব্যবহার করে অতিগোপনে গোয়ালগ্রামের লোকজন প্রধান শিক্ষকসহ বেশ কয়েকজনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। বিদ্যালয় সম্পর্কে ভূয়া তথ্য প্রদান করে মোমিনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির কার্যক্রমে বাঁধা সৃষ্টি করছে। একের পর এক মামলার কারণে বিদ্যালয়টির এমপিওভুক্তিসহ সব কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। ফলে শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
গোয়ালগ্রাম এমজিজিএম বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল হুদা জানান, তিনি এলাকাবাসীর স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে বিদ্যালয় স্থানান্তর করেছেন। সকল নিয়ম মেনে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর হাবিবুল বাশার জানান, ইচ্ছা করলেই কেউ প্রতিষ্ঠান হস্তান্তর করতে পারেন না। তাছাড়া হস্তান্তর সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে নেই। কীভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্থানান্তরের অনুমতি নেয়া হলো বা দেয়া হলো সেটা তিনিও বুঝতে পারেন না বলেও জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। তিনি আরো জানান, মামলা থাকার কারণে নতুন পুরাতন কোনো স্কুলেই কমিটি নেই। আর কমিটি না থাকার কারণে অনেক কার্যক্রমই করা সম্ভব হচ্ছে না।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More