গাংনীর বিটিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, অনুমোদনবিহীন শাখাতে তিন শিক্ষক এমপিও

গাংনী প্রতিনিধি: ‘গ’ শাখা অনুমোদন ছাড়াই তিন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে এলাকার মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন গাংনীর বি.টি.ডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক। শিক্ষাবোর্ড বলছে বিদ্যালয়টিতে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ‘গ’ শাখার অনুমোদন নেই। অথচ এই শাখাগুলোতে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং তারা এমপিওভুক্ত হয়েছেন। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ব্যাকডেটে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। অভিযোগের তদন্তেও সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে বলে তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা (ষষ্ট, সপ্তম ও অষ্টম) খোলার জন্য প্রথমেই ৫টি শ্রেণিতে সর্বনিম্ন ৫২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী থাকতে হবে। যার বিপরীতে ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে দেড়শ মতো। এ সত্বেও প্রধান শিক্ষক এনামুল হক ‘গ’ শাখায় তিন জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেন ২০০৪ সালে। ব্যাকডেটে সকল কাগজপত্র তৈরী করে তিনি নিয়োগ বাণিজ্য করেন। গত বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত মাসিক এমপিও তালিকায় ওই তিন শিক্ষকের নাম ছিলো না। পরের মাসে সেপ্টেম্বর/২২ এমপিও শিটে তাদের নাম তালিকাভুক্ত করায় অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি সামনে আসে।

জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে যে ‘গ’ শাখার অনুমোদন নেই তার প্রত্যয়ন দিয়েছে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম। গত ১০ জানুয়ারি বিঅ-৬/৫৮৩১/৩১৮ নং স্মারকে তিনি এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা অফিসারকে তিনি এ পত্র দেন।

অভিযোগে জানা গেছে, ভরাট গ্রামে অবস্থিত বি.টি.ডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক ২০০৪ সালে ব্যাকডেটে ‘গ’ শাখায় তিন জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেন। এরা হলেন শেফালী খাতুন, আল মামুন ও শাহনাজ পারভীন। এদের মধ্যে শেফালী খাতুন ২০১১ সালের ২৫ জুন থেকে এ বিদ্যালয়টিতে লাইব্রেরিয়ান পদে (ননএমপিও) কর্মরত আছেন। একই ব্যক্তি লাইব্রেরিয়ান পদে থেকে কিভাবে সহকারী শিক্ষক পদে ২০০৪ সালে নিয়োগ পেলেন? একই ব্যক্তি দুই পদে নিয়োগ দেখানোর ফলেই বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। তাছাড়া সহকারী শিক্ষক পদে এমপিও হওয়া আল মামুন ও শাহনাজ পারভীনকে ২০২২ সালের আগস্ট মাসের আগে কেউ কখনও বিদ্যালয়ে আসতে দেখেননি। কোনো হাজিরা খাতাতেও তাদের নাম ও হাজিরা স্বাক্ষর নেই। ফলে বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে এ তিনজনকে ব্যাকডেটে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেখানো হয়েছে। একই সাথে শিক্ষক ও শাখা অনুমোদনের তথ্য গোপন করে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।

এলাকার মানুষের দাবি, বর্তমান সরকার শিক্ষাখাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে। এলাকায় হাজার হাজার মানুষ বেকার রয়েছেন। যাদের মধ্যে অনেকেই মেধাবি। যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেলে এলাকায় শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু তাদের কোনো সুযোগ না দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ চলছে। বিটিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মতই অনেক বিদ্যালয়ে একই পন্থায় অনেক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব অবৈধ নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যে যারা জড়িত তাদেরকে শনাক্ত করে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

জানা গেছে, লাইব্রেরিয়ান হিসেবে নিয়োগ পাওয়া শেফালি খাতুন আগস্ট/২২ পর্যন্ত হাজিরা খাতায় লাইব্রেরিয়ান পদেই হাজিরা স্বাক্ষর করে আসছেন। পাশাপাশি মাসিক শিক্ষক প্যাটার্নে লাইব্রেরিয়ান পদেই রয়েছেন তিনি। এ প্যাটার্নে শিক্ষকের নাম, পদবী, শিক্ষাগত যোগ্যতা, এমপিওভুক্তির তারিখ ও প্রতিষ্ঠানের যোগদানের তারিখসহ বিভিন্ন তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। এখানেও শেফালি ছাড়াও আল মামুন ও শাহনাজ পারভীনের নাম নেই। তাহলে কিভাবে ২০০৪ সালে তারা সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেন? এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি।

এদিকে ২০২২ সালের ক্লাস রুটিন এবং অন্যান্য নথিপত্রেও ওই তিনজনকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নাম পাওয়া যায়নি। এতে স্পষ্ট হয় যে, প্রধান শিক্ষক অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে তাদের নিয়োগ দিয়েছেন এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে এমপিওভুক্ত করিয়েছেন। ফলে রাষ্ট্রের অর্থ নষ্ট করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন প্রধান শিক্ষক।

এদিকে শাখা খোলা ও তিনি শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেছেন সেই সময়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্যদের সভাপতির দায়িত্বে থাকা ভরাট গ্রামের সিরাজুল ইসলাম। তিনি লিখিতভাবে বলেছেন যে, ষষ্ট, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শাখা খোলার অনুমোদন ছিলো না। উক্ত শাখায় সহকারী শিক্ষক পদে শেফালি খাতুন, আল মামুন ও শাহনাজ পারভীনকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষক এনামুল হক তার স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগের কাগজপত্র প্রস্তুত করে বোর্ডে প্রেরণ করেছেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ইনামুল হক বলেন, আমি যা করেছি তা বৈধভাবেই করেছি।

এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুটি তদন্ত চলমান। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চলের উপ পরিচালকের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রধান কুষ্টিয়া জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। এই তদন্ত কমিটি অভিযোগ তদন্তে ইতঃমধ্যে সরজমিন এলাকা ঘুরে গেছেন। তদন্তের বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রমজান আলী বলেন, শাখার কোনো অনুমোদন নেই। অনুমোদন জালিয়াতি এবং অবৈধ নিয়োগের বিষয়ে সত্যতা মিলেছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই উপ-পরিচালক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More