চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার উপজেলার সীমান্তবর্তী ১৬ গ্রামে চলছে কঠোর লকডাউন

চুল ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীদের জন্যই বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর হার

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় পর্যায়ক্রমে ১৬টি গ্রামের সাধারণ মানুষর চলাচলে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হলেও কমছে না শনাক্তের হার। প্রতিদিনই বাড়ছে এখানে আক্রান্ত রোগীর হার। অভিজ্ঞ মহল এর জন্য দায়ী করছেন চুল ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীদের। তবে এক-দেড় সপ্তাহের মধ্যে এর হার কমতে শুরু করবে, এমনটাই আশা করছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রথম দিকে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় অনেক মানুষের মধ্যে কোভিড-১৯-এর উপসর্গ দেখা দিলেও তারা সতর্কতা অবলম্বন না করে সাধারণ জ্বর ভেবে সাধারণ মানুষের মতো চলাফেরা করেন। ধীরে ধীরে কয়েক দিনের মধ্যে তা ব্যাপক আকার ধারণ করায় প্রশাসনের নজরে আসে। চলতি মাসের ২ তারিখ উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি উপসর্গ দেখা দেয় সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নে। সেদিন শিবনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্যাম্প বসিয়ে ১১৮ জনের স্যাম্পল সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হলে নারীসহ ২৪ জনের কভিড শনাক্ত হয়। ওই দিনই সীমান্তঘেঁষা শিবনগর, হরিরামপুর, মুন্সিপুর, কুতুবপুর, জগন্নাথপুরসহ সাতটি গ্রামের প্রবেশমুখে সাধারণ মানুষের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সড়কে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এরপর ভাইরাসটি বিস্তার করে কুড়–লগাছি ও পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোয় ছড়িয়ে পড়ে। গত শনিবার উপজেলা ও স্বাস্থ্য বিভাগ দুই ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ৯টি গ্রামে লকডাউন ঘোষণা করে। পরদিন রোববার সকাল থেকে পুলিশ ও গ্রাম পুলিশের প্রহরায় কঠোর লকডাউন চলছে। প্রথম দিকে লকডাউন ঢিলেঢালা হলেও রোববার থেকে নিজ নিজ ইউপি চেয়ারম্যান পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় পুলিশ ও গ্রাম পুলিশের প্রহরায় কার্যকর করা হচ্ছে কঠোর লকডাউন।
সরেজমিনে সীমান্তবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এলাকার সড়কগুলো জনশূন্য, বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ এবং পুলিশ টহল দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ বাড়ি থেকে খুব প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছে না। লকডাউনের স্থানে পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ প্রহরায় রয়েছে।
কার্পাসডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান ভুট্টো ও কুড়–লগাছি ইউপি চেয়ারম্যান শাহ এনামুল করিম ইনুর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলায় দুই শতাধিক ছোট-বড় চুলের কারখানা রয়েছে। চুলের বেশিরভাগই ভারত থেকে আসে। ধারণা করা হচ্ছে চুল ব্যবসায়ীদের কারণে ভারত থেকে আসা চুল থেকে এ ভাইরাস ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। চুল প্রসেসিং কারখানাগুলোয় শত শত নারী-পুরুষ কাজ করেন। তাদের মাধ্যমে ব্যাপকহারে ছড়িয়েছে এ ভাইরাস। অনেকে বলছেন, ভারতের শ্মশান থেকে কেটে রাখা চুল কেনা হয়। লকডাউনের প্রথম দিকে এসব চুল ব্যবসায়ীরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে চোরাপথে রাতের আঁধারে চুল এনে তাদের কার্যক্রম চালালেও রোববার থেকে লকডাউন কঠোর হওয়ায় দিনরাত পুলিশ ও বিজিবির কঠোর নজরদারি থাকায় মানুষ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না। এমন অবস্থায় কয়েক দিন স্থায়ী হলে রোগী শনাক্ত হওয়ার হার কমে যাবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু হেলা মোহাম্মদ জামাল শুভ জানান, চোরাকারবারী ও চুল ব্যবসায়ীদের চোরাপথে ভারতে আসা-যাওয়ার কারণে এ এলাকায় করোনাভাইরাস ব্যাপকহারে ছড়িয়েছে পড়েছে। তবে বর্তমানে মানুষ বেশ সচেতন। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সুদীপ্ত কুমার সিংহ বলেন, এলাকায় কভিড শনাক্তের হার না কমা পর্যন্ত লকডাউন কঠোরভাবে চলবে। অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More