চুয়াডাঙ্গার ভি.জে স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে থ্রি-পিসের বিজ্ঞাপন-প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য ও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাঠদান উপেক্ষা করে কোচিং বাণিজ্যে লিপ্ত থাকার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন প্রচারের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, প্রশ্নফাঁস থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের মানসিক নির্যাতন এবং পরীক্ষায় ইচ্ছাকৃতভাবে নম্বর কেটে দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। ১৮৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০১১ সাল থেকে প্রভাতি ও দিবা শিফটে পরিচালিত হয়ে আসছে। ভিজে স্কুল থেকে উর্ত্তীণ হয়ে দেশের নামকরা শিক্ষক, বিসিএস ক্যাডারসহ বিভিন্ন স্থানে নানা পেশায় সুনাম অর্জন করেছে হাজারো শিক্ষার্থী। যুগযুগ ধরে সুনাম অর্জন করা প্রতিষ্ঠান ডুবতে বসেছে মুষ্টিমেয় কিছু শিক্ষকদের অবহেলা ও কোচিং বাণিজ্যের জন্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয়ের এই শিক্ষার মান ও পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। চুয়াডাঙ্গা ভিজে স্কুলের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বাংলা বিভাগের শিক্ষক মোমিন ক্লাসে পাঠদান না করে তার স্ত্রীর অনলাইন থ্রি-পিস ব্যবসার বিজ্ঞাপন দেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ক্লাসে তিনি বলেন, “আমার বাড়িতে তোমাদের আন্টি থ্রি-পিস বিক্রি করেন, অনেক কম দামে দিতে পারবো।” এমনকি এসব পণ্য কেনার বিষয়ে সরাসরি উৎসাহও দেন। শিক্ষার্থীরা আরও জানান, শিক্ষক মোমিন নিয়মিত ক্লাসে অনুপস্থিত থাকেন, স্মার্টফোনে ব্যস্ত থাকেন এবং পাঠদানে অনীহা প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বারবার অভিযোগ করলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক আশরাফুল হক সম্পর্কে অভিযোগ আরও ভয়াবহ। ভি.জে স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থীদের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি নিজের কোচিংয়ে পড়তে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করেন। কোচিংয়ে না এলে পরীক্ষায় কম নম্বর দেয়া হয় এবং বিভিন্নভাবে হেয় করা হয়। আশরাফুল হকের বিরুদ্ধে ৯ম শ্রেণির রসায়নের প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগের দিন তিন হাজার টাকার বিনিময়ে ফাঁস করার অভিযোগও রয়েছে। শিক্ষার্থীরা আরও জানান, তিনি নিজেকে ‘পীর’ দাবি করে বলেন, ‘আমার কাছে যারা পড়ে তারা মেধাবী, আর না পড়লে গাধা।’ তার আচরণে অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। অভিভাবক ও সচেতন মহলের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক নিয়মিত ক্লাসে অনুপস্থিত থাকেন বা অনাগ্রহীভাবে পাঠদান করেন। কিন্তু নিজ নিজ কোচিং সেন্টারে তারা সময় দেন এবং উপার্জনের একমাত্র উৎস হিসেবে সেটাকেই গুরুত্ব দেন। তারা বলেন, “ভিজে স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। স্কুলে মন নেই, শুধু কোচিংয়ে মনোযোগ।’ এছাড়াও শিক্ষক অসক, মাসুম, হাফিজ এদের বিরুদ্ধেও ক্লাস ফাঁকি, কোচিংয়ে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক আনা এবং অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকরা। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছা. জেসমিন আরা খাতুন বলেন, ‘অভিযোগগুলো সম্পর্কে অবগত হয়েছি। নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক ও ভিক্টোরিয়া জুবলি বিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে কোন অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না। অভিযোগ পেয়েছি বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, কেবল আশ্বাস নয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং একটি স্বচ্ছ তদন্ত ছাড়া এই ধরনের অনিয়ম বন্ধ হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিক প্রচারণা, কোচিংয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ, প্রশ্নফাঁসের মতো অপরাধ শিক্ষার পরিবেশকে ধ্বংস করছে। অভিভাবকরা জোর দাবি জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের প্রতিটি অভিযোগের বিষয়ে স্বচ্ছ ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, কেবল আশ্বাস নয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং একটি স্বচ্ছ তদন্ত ছাড়া এই ধরনের অনিয়ম বন্ধ হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিক প্রচারণা, কোচিংয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ, প্রশ্নফাঁসের মতো অপরাধ শিক্ষার পরিবেশকে ধ্বংস করছে। অভিভাবকরা জোর দাবি জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের প্রতিটি অভিযোগের বিষয়ে স্বচ্ছ ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.