চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের ২৬ জেলায় তাপপ্রবাহ : থাকবে আরও ৩দিন প্রকৃতির বিরূপ আচরণে তপ্ত জনজীবন: গরমে হাঁসফাঁস প্রাণিকুল
স্টাফ রিপোর্টার: ‘শুষ্ক বালি, ডালপালা ক্লান্ত, চাতক মাখছে রোদ, তপ্ত বাতাস, আগুন হাওয়া…’ কবিতার এই চিত্রই যেনো বাস্তব হয়ে উঠেছে দেশ। চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন জেলায় মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহে নাকাল জনজীবন। একটানা প্রচ- গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ, প্রাণিকুল ও প্রকৃতি। তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকলেও বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকায় গরম অনুভূত হচ্ছে আরও বেশি। রাস্তাঘাট, কর্মস্থল, বাসা সব জায়গাতেই ভ্যাপসা গরম। ৫ মিনিট রোদে দাঁড়ালেই ঘামে ভিজে যাচ্ছে শরীর। সূর্যের তীব্রতা এতটাই যে দিনের বেলা রাস্তায় চলাচল করাই দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় রাজশাহীতে ৩৭ দশমিক ৩ ডিগ্র্রি সেলসিয়াস। যা মাঝারি তাপপ্রবাহ হিসেবে গণ্য। এছাড়া ঢাকায় সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশের ২৬ জেলায় তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এই তাপপ্রবাহ থাকতে পারে আরও তিনদিন। ফলে এই সময়ে বরাবরের মতো ভ্যাপসা গরম ও থাকবে। ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে কুতুবদিয়ায়। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে কয়েকটি জেলায় হালকা বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। এসময় সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, বর্ষা মরসুমে এমন ভ্যাপসা গরম স্বাভাবিক। ভারী বৃষ্টি অথবা দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টি না হলে এই ভ্যাপসা গরম কমবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, আগামী ১৬ তারিখ থেকে দেশের অধিকাংশ এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ফলে তখন গরম অনেকটা কমে যাবে। এর আগ পর্যন্ত আগামী তিনদিন তাপপ্রবাহ কমবে বাড়বে। তিনি বলেন, এখন বর্ষাকাল প্রতিদিন প্রতিটি বিভাগেই বৃষ্টির আভাস থাকে। বিভাগগুলোর সব জেলায় বৃষ্টি হয় না বা হলেও বেশিক্ষণ বৃষ্টি হয় না। তাই তাপপ্রবাহ বা গরম কমছে না। আবহাওয়াবিদদের মতে, এমন গরম বর্ষাকালেও বিরল নয়, তবে সম্প্রতি এ প্রবণতা বেড়েছে। আগামী রোববার থেকে আষাঢ় মাস শুরু হলে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যা তাপমাত্রা কিছুটা কমাতে পারে।
এদিকে ঈদের ছুটি শেষে ধীরে ধীরে শহরে কর্মচাঞ্চল্য বাড়ছে। যদিও অধিকাংশ অফিস-আদালত ও দোকানপাট পুরোদমে খুলবে রোববার থেকে, তবু প্রয়োজনীয় কাজে অনেকেই রোদ উপেক্ষা করে রাস্তায় বের হচ্ছেন। কেউ ছাতা মাথায় দিয়ে, কেউ মুখে পানি ছিটিয়ে নিজেকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছেন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ছিন্নমূল ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। কাজের জন্য ঘর থেকে বের হলেও বেশি সময় রোদে টিকে থাকা যাচ্ছে না। রিকশাচালকরা রোদ উপেক্ষা করে যাত্রী বহন করছেন, আবার কেউ কেউ রাস্তায় জিরিয়ে নিচ্ছেন। শিশু-কিশোররা গরম থেকে মুক্তি পেতে পুকুর-নদীতে নেমে জলকেলিতে মেতে উঠেছে। তীব্র গরমে চাহিদা বেড়েছে ঠান্ডা পানীয়, ডাব, দই ও ঘোলের।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গরমে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। রোদ এড়িয়ে চলা, সুতির কাপড় পরিধান এবং পর্যাপ্ত পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। পরিবেশবিদদের মতে, এই রুদ্র প্রকৃতির পেছনে দায়ী মানুষের অসচেতন কর্মকা-—অবাধ বৃক্ষনিধন, বন উজাড় ও পাহাড় কাটা। প্রকৃতির স্বাভাবিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে এখনই ব্যাপক বৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নেই বলে মত দিয়েছেন তারা। চুয়াডাঙ্গা শহর ঘুরে দেখা যায়, প্রচন্ড গরমে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। শহরের প্রধান প্রধান সড়কে যানবাহনসহ মানুষের চলাচল সামান্য দেখা যায়। কাজের প্রয়োজনে যারা বেরিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই ছাতা বা মাথায় গামছা ব্যবহার করছেন। মার্কেটগুলোতে ক্রেতা নেই বললেই চলে। তবে এই অসহনীয় গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তীব্র গরম থেকে স্বস্তি পেতে মানুষ বৃষ্টির অপেক্ষায় দিন গুনছেন। তীব্র গরমের কারণে স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অসুস্থ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.