চুয়াডাঙ্গায় আবারও উচ্চ ক্ষমতার বিদ্যুত সরবরাহ লাইনের পাশে বাড়ি নির্মাণ : আবারও বিপত্তি

বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের রড বাঁধতে গিয়ে ঝলসে গেলেন মিস্ত্রি
স্টাফ রিপোর্টার: নিরাপদ দূরুত্ব না মেনে ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রেখে দ্বিতল ভবনের ছাদের ঢালাইয়ের সময় উচ্চ ক্ষমতার বিদ্যুতস্পৃষ্টে ঝলসে গেছেন একজন রড ও রাজমিস্ত্রি। গতকাল রোববার সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ফার্মপাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। গুরুতর জখম রাজমিস্ত্রি সুমনকে (৩০) আশঙ্কাজনক অবস্থায় গতকালই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়া হয়েছে। সে জেলা শহরের দক্ষিণ গোরস্তানপাড়ার মো. সালামের ছেলে।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা ফার্মপাড়ার সরোয়ার হোসেনের বাড়ির কোলঘেষে রয়েছে উচ্চ ক্ষমতার বৈদ্যুতিক তার। বাড়ির দোতলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয় সম্প্রতি। ছাদ ঢালাইয়ের জন্য রড বাঁধার কাজ করছিলেন মিস্ত্রিরা। রড বাধার সময় রডের একাংশ তারের সাথে লেগে যায়। বিদ্যুতস্পৃষ্টে ঝলসে যান মো. সুমন। উচ্চ ক্ষমতার তারের অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আগুনের ফুলকি ঝরতে থাকে। সুমনকে দ্রুত উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সহনীয় যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে সুমন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়ার পরামর্শ দেন সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময় বলেন, সুমনের শরীরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ঝলসে গেছে। অবস্থা গুরুতর।
বিদ্যুতস্পৃষ্টে ঝলসে যাওয়া সুমনের স্ত্রী মৌসুমি খাতুন বলেন, অভাবের সংসার। সাড়ে ৪শ’ টাকা হাজিরায় রড ও রাজমিস্ত্রির কাজ করে। অন্যান্য দিনের মতো রোববার সকালেও কাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হন। কিছুক্ষণ পরই শুনি বিদ্যুতে পুড়ে গেছে মানুষটা। দু সন্তানের মধ্যে ছেলে রাজনের বয়স ৪ বছর, মেয়ে সুমাইয়ার বয়স ১০ বছর। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটা পুড়ে পড়ে থাকলে চিকিৎসা হবে কীভাবে, সংসারই বা চলবে কীভাবে? এসব এখন কিছুই বুঝতে পারছি না। সুমনের শয্যাপাশে ছিলেন এলকার জনপ্রতিনিধি মহিলা কাউন্সিলর মোছাঃ শেফালী খাতুন। তিনি বলেন, রোগীর চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যেই বাড়ির মালিকের স্ত্রী পারুলা খাতুন ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। লাগলে আরও দেবেন। বাড়ির মালিক সরোয়ার হোসেনের স্ত্রী পারুলা খাতুন বলেন, স্বামী দেশের বাইরে থাকে। আমাদের বাড়ি নির্মাণের কাজ করেন জিয়া মিস্ত্রি। ওই জিয়া মিস্ত্রিই রড ও রাজমিস্ত্রি সুমনকে নিয়ে এসেছিলেন।
উচ্চ ক্ষমতার বৈদ্যুতিক তারের পাশে নির্মাণ কাজ করছেন কীভাবে? অনুমোদন দেয়া হয়েছে? মিস্ত্রিদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিলো? এসব প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি বাড়ির মালিক সরোয়ার হোসেনের স্ত্রী পারুলা খাতুন। তিনি বলেছেন, বাড়ির পাশের ওই তারে যে রড ঠেকে এরকম ঘটনা ঘটবে কে জানতো!
এদিকে রোববার সকালে উচ্চ ক্ষমতার বৈদ্যুতিক তারের পাশে বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে রড ও রাজমিস্ত্রি বিদ্যুতায়িত হয়ে ঝলসে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে আলোচনায় উঠে আসে গত বছরের ১৯ মার্চ সকালে চক্ষু হাসপাতালপাড়ার শরিফুল ইসলামের বাড়ির তিনতলায় উঠে বিদ্যুতায়িত হয়ে শিশু আলিফের ঝলসে যাওয়ার প্রসঙ্গ। উচ্চ ক্ষমতার তারের নিকট বাড়ি নির্মাণ করা হলেও তা পৌরসভা অনুমোদন দেয় কীভাবে? এ প্রশ্নের পাশাপাশি প্রশাসনের আশু পদক্ষেপ কামনা করে বলেন, উচ্চ ক্ষমতার বিদ্যুত সরবরাহের তার থাকা অবস্থায় বাড়ি নির্মাণ করে এখন ওই তার স্থানান্তরের আবেদন করছে। এটা কেমন কথা? বৈদ্যুতিক তার বাড়ি নির্মাণের পর টানা হলে না হয় কথা ছিলো। পূর্বে থাকা তারকে তোয়াক্কা না করে তা ঘেষে বাড়ি নির্মাণ কোন সভ্যতা?

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More