চুয়াডাঙ্গায় আরও ১১৬ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত : আক্রান্ত একজনসহ উপসর্গ নিয়ে আরও মৃত্যু ৬

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সংক্রমণের হার বেড়েছে আরও। গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় একজন করোনা রোগী ও করোনা ভাইরাস আক্রান্তের উপসর্গ নিয়ে আরও ৫ জন মোট ৬জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় আরও ১১৬ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। ২৩২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১৬ জনের কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়। অপরদিকে গতকাল থেকে চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর বিষয়ে সাংবাদিকদের তথ্য দেয়ার বিষয়ে সিভিল সার্জন কঠোরতা আরোপ করে আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে ভোকাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যদিও আরএমওর সাথে গতরাতে যোগাযোগ করেও করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিস্তারিত পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। কতজন সুস্থ হয়েছেন তাও নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ বৃহস্পতিবার নতুন ২৩৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিন স্বাস্থ্য বিভাগ র‌্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় ৬৮ জনের করোনা ভাইরাস পজিটিভ পান। পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করে পজিটিভ পেয়েছে ৬৮ জনের। মোট ১১৬ জনের করোনা ভাইরাস পজিটিভ হয়েছে। তবে কোন উপজেলার কতজন যেমন জানা যায়নি, তেমনই কোন মহল্লায় কতজন প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন তাও জানা সম্ভব হয়নি। স্বয়ং সিভিল সার্জনের সাথে যোগাযোগ করেও এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য মেলেনি। গতরাতে সিভিল সার্জনের সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় নতুন ১১৬ জন করোনা ভাইরাস পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিস্তারিত বলবেন জেলা করোনাই ভাইরাস সংক্রান্ত ভোকালপার্সন সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার। এরপর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে একজনসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও ৫ জন। নতুন সংক্রমিত হয়েছেন ১১৬ জন। উপজেলা ভিত্তিক তথ্য আমাকে দেয়া হয়নি। পুনরায় সিভিল সার্জনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছুটা সময় নিয়ে প্রায় মধ্যরাতে জানান, সব তথ্যই দেয়া হয়েছে। দেখি আমি নিজেই সব দায়িত্ব পালন করতে পারি কিনা। উপজেলা ভিত্তিক তথ্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন নতুন শনাক্ত যে ১১৬ জন তার মধ্যে সদর উপজেলার ৬৫ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৮ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ৯ জন ও জীবননগর উপজেলার ২৪ জন।
এদিকে জানা গেছে, করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের তিতুদহের সুরত আলীর ছেলে দরবেশ আলী সর্দি কাশি জ¦রে ভুগতে থাকেন। গত ১৪ জুন তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নমুনা পরীক্ষায় তার কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়। হাসপাতালেই আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিলো ৭০ বছর। এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে দামুড়হুদা কমোরপুরের মনিরুজ্জামানের স্ত্রী খাদিজা খাতুনকে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। সর্দি কাশি জ¦র ও শ^াসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। তার নমুনা নেয়া হয়। রাত ১০টার দিকে হাসপাতালের হলুদ জোনে মারা যান। একই উপজেলার দর্শনা মদনার মোহর আলীর স্ত্রী সফুরা খাতুনকে গত বুধবার ২৩ জন বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সর্দি কাশি জ¦র ও শ^াস কষ্টে ভুগছিলেন তিনি। তারও নমুনা নেয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে মারা যান তিনি। সফুরা খাতুনের বয়স হয়েছিলো ৪০ বছর। একই উপজেলার একই গ্রামের ফকির মোহাম্মদের ছেলে ইসমাইল গত বুধবার বিকেলে সর্দি কাশি জ¦র ও শ^াস কষ্ট নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। তারও নমুনা নেয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দেড়টার দিকে তিনি মারা যান। মৃতকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭০ বছ। একই উপজেলার দর্শনা চ-িপুর গ্রামের মুক্তার আলীর ছেলে সাবেক মেম্বার আরশাদ আলী সর্দি কাশি জ¦রে ভুগছিলেন। তাকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। শ^াসকষ্টে ভুগতে থাকেন। তারও নমুনা নেয়া হয়। সকাল ১০টার দিকে তিনি হাসপাতালেই মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিলো ৫৫ বছর। একই উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বাদল মোল্লার স্ত্রী মনোয়ারা খাতুনকে ২১ জুন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সর্দি কাশি জ¦র ও শ^াস কষ্টে ভুগছিলেন তিনি। তাকে হলুদ জোনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর।
চুয়াডাঙ্গা করোনা আক্রান্ত তথ্য দেয়ার বিষয়ে কঠোরতা আরোপের কারণে কতোজন সুস্থ হয়েছেন, কতোজন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তা নিশ্চিত করে জানা যেমন সম্ভব হয়নি, তেমনই ভোকাল পার্সনের নিকটও এসব বিষয়ে তথ্য মেলেনি। এসব কারনে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনের প্রতি চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দানা বেধেছে। বেশ ক’জন সাংবাদিক চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধও জানিয়েছেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More