স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় এক নারীর এক্সিলা (বগল) রিজিয়নে করা একটি গুরুতর অপারেশন নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। প্রথমে দেশ ক্লিনিকের পরিচালকের বিরুদ্ধে অপারেশন করার অভিযোগ উঠলেও পরে শোনা যায়, একজন মেডিকেল অফিসার ওই অপারেশনটি করেছেন। তবে অপারেশন নোট না থাকায় আরও বেশি ধোয়াঁশা সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এক চিকিৎসক অপারেশনটি করলে কেন অপারেশন নোট থাকবে না? জানাগেছে, গত ১৬ মে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল রোডের দেশ ক্লিনিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাতিকাটা গ্রামের ফেরদৌসি নামের এক নারীর একটি অপারেশন করা হয়। প্রায় ১০ দিন হলেও ওই রোগী সুস্থ্য হচ্ছিলেন না। নিয়মিত দেশ ক্লিনিকেই তিনি ড্রেসিং করছিলেন। শেষ পর্যন্ত গতকাল শনিবার তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দারস্থ হন। সেখানে গিয়েই তৈরি হয়, আরও এক ধোঁয়াশা। অপারেশন করা ওই নারীর প্রেসক্রিপশন দেখে অবাক হন অন্য চিকিৎসকসহ গণমাধ্যমকর্মীরা। প্রেসক্রিপশনে ছিলো না কোনো অপারেশন নোট। সুতরাং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও বুঝতে পারছিলেন না, অপারেশনটি কি কারণে করা হয়েছে। তার ওপর আবার ওই নারী অভিযোগ করেন, অপারেশনটি দেশ ক্লিনিকের পরিচালক শান্ত করেছেন। সেসময় ক্লিনিক মালিক সমিতির নেতাদের কানেও পৌছায় ঘটনাটি। এদিকে, ঘটনাটি জানাজানি হলে, দেশ ক্লিনিকের পরিচালক শান্ত ওই নারীর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন। পরে ওই নারীর এক আত্মীয়ের মাধ্যমে বিষয়টি ধামা-চাপা দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। শেষ-মেষ অপারেশনটি মেডিকেল অফিসার ডা. মশিউর রহমান করেছেন বলে জানায় দেশ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। তবে তারপরও রয়ে গেছে আলোচনা-সমালোচনা। প্রশ্ন উঠেছে, একজন সরকারি চিকিৎসক বাইরে অপারেশন করতেই পারেন। তবে তিনি অপারেশন নোট লিখতে কিভাবে ভুলে যান। আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, একজন মেডিকেল অফিসার এক্সিলা রিজিয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও রিস্কি এরিয়ায় এই ধরনের বড় অপারেশন কিভাবে করেন? দেশ ক্লিনিকের প্যাডে দেয়া চিকিৎসাপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ‘রোগীর নাম পর্যন্ত নেই চিকিৎসাপত্রে। অসম্পূর্ণ চিকিৎসাপত্রে কয়েক প্রকার ওষুধ লেখা হলেও চিকিৎসকের স্বাক্ষর নেই। চিকিৎসা পত্রটি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, সেটি দেশ ক্লিনিকের শান্ত’র লেখা।’ তবে সকালে এক রকম ঘটনা থাকলেও সন্ধ্যায় পরিবর্তন হয়, রোগীর কথার। প্রথমে শান্তর নামে অভিযোগ করলেও, সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী ফেরদৌসি নামের ওই নারী গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘অপারেশনটি সম্ভবত ডা. মশিউর রহমান করেছেন। এ সময় শান্তও ওখানে উপস্থিত ছিলো। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি।’ অপারেশন নোটের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এসব বুঝিনা। কি করে বলবো। ওসব ডাক্তার জানে।’ এদিকে, এই ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে জেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান শান্তর হয়ে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে মুঠোফোনে সংবাদটি বন্ধ করার অনুরোধও করেছেন তিনি। দেশ ক্লিনিকের পরিচালক শান্ত বলেন, ‘আমি অপারেশন করিনি। অপারেশনটি ডা. মশিউর রহমান করেছেন। আমি শুধু নিয়মিত রোগীটির ড্রেসিং করি। আর অপারেশনের সময় ছিলাম।’ সার্জারি কনসালট্যান্ট (এফসিপিএস) ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘রোগীটির অপারেশন কে করেছে, সেটা আমি জানিনা। এক্সিলা রিজিয়নে কোনো এবসেস হয়েছিলো বলে মনে হয়েছে। অপারেশনের কোনো নোট লেখা না থাকায় আমি সঠিক বলতে পারছি না। এই ধরনের অস্ত্রোপচার কোনো মেডিকেল অফিসার করতে পারেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এক্সিলারি তো রিস্কি এরিয়া। এটা নিয়ে আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না। এটা প্রশাসনের কাছে জানলে ভালো হয়।’ চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘এক্সিলা রিস্কি এরিয়া। অনেক নার্ভ এবং অনান্য বিষয় থাকে। মেডিকেল অফিসারের এ ধরনের অপারেশন না করাই ভালো। তবে ওইটা কি অপারেশন ছিলো, সেটি জানতে হবে। না জেনে বলা সম্ভবও না। আর রোগীর পরিবারের লোক যদি কোনো লিখিত অভিযোগ করেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. মশিউর রহমান বলেন, ‘ফেরদৌসি নামের ওই রোগীর শরীরে একটি ফোঁড়া (অনংপবংং) ছিল। অপারেশনটি আমিই করেছিলাম। আমার গাইনি সার্জারি পিজিটি ডিগ্রি আছে, এছাড়া আমি সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারও করি।’ অস্ত্রোপচার করা হলেও রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্রে অপারেশন নোট কেন লেখা হয়নি জানতে চাইলে ডা. মশিউর রহমান বলেন, ‘সম্ভবত রোগীকে ছাড়পত্র দেয়ার সময় আমি ক্লিনিকে ছিলাম না। তবে অপারেশনের পর রোগীকে চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র আমিই লিখেছিলাম। তবে, আমি ছাড়া অন্য কেউ রোগীকে ছাড়পত্র দিলে তা ভুল হয়েছে। এটি অনুচিত।’
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.