চুয়াডাঙ্গায় নিজের বাল্যবিয়ে বন্ধ করা সেই বর্ষা সংবর্ধিত

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা কন্যাশিশু-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হবো, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো প্রতিপাদ্যে সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা, জীবননগর ও দামুড়হুদায় আলোচনাসভা এবং সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
চুয়াডাঙ্গায় নিজের বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে থানায় হাজির হওয়া স্কুলছাত্রী বর্ষাকে জেলা প্রশাসন ও জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় কন্যা শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। একই সঙ্গে তাকে ‘সাহসী কন্যা’ উপাধি দেয়া হয়। সভায় প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার এ সময় বর্ষার হাতে ক্রেস্ট ও ফুলের স্তবক তুলে দেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাকসুরা জান্নাত। জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, নিজের বাল্যবিয়ে বন্ধে সাহসী ভূমিকার কারণে বর্ষা আজ সাহসীকন্যা। অন্যদের কাছে এটি অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। বর্তমান সভ্য সমাজে বাল্যবিয়ে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বাল্যবিয়ে দেয়া মানে সম্ভাবনাময় একটি মেয়েকে দমিয়ে দেয়া। ১৫-১৬ বছরের একজন মেয়ে জীবনের কী বোঝে? তার শরীর প্রস্তুত নয়। বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েরা শিশুবয়সে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে নিজেও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, সন্তানও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এই অভিশাপ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সব মানুষকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাজিয়া আফরীন বলেন, প্রত্যেক মেয়েকে আগুনের শিখা হয়ে জ্বলতে হবে, তোমার আলোতে যাতে চারদিক আলোকিত হয়। জীবনে যাতে আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে পারো সেই প্রচেষ্টা করতে হবে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা (রোগ নিয়ন্ত্রণ) আওলিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা যখন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হই, তখন ছেলে-মেয়ের অনুপাত ছিলো যথাক্রমে ৬০ ও ৪০ শতাংশ। বর্তমানে ঠিক তার উল্টো চিত্র। অর্থাৎ অনুকূল পরিবেশ পেলেই মেয়েরাও অনেক সাফল্য দেখাতে পারে, পারবে।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাহসী কন্যা বর্ষা বলে, ‘আমার মায়েরও বাল্যবিয়ে হয়েছিলো। জন্মের পর মাকে কখনো সুখী দেখিনি। তাই মায়ের ইচ্ছা আমাকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা। কিন্তু মামা ও খালারা মিলে আমাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে আয়োজন করছিলেন। তাদের অনবরত চাপের কারণে পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম। পুলিশ সহযোগিতা করেছে। আমার বিয়ে বন্ধ হয়েছে। আমি পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত ও স্বাবলম্বী হয়ে আমার মায়ের দুঃখ দূর করতে চাই।’ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে দামুড়হুদা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মুন্না বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান নাবিলা রুখছানা ছন্দা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী বর্ষাকে তার মামা-খালারা জোর করে বিয়ে দেয়ার আয়োজন করছিলেন। তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। মুড়ি তৈরির কারখানায় কর্মরত মায়ের পক্ষে মেয়ের বিয়ে ঠেকানোর উপায় ছিলো না। বাধ্য হয়ে তিনিও রাজি হন। অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে বর্ষা গত মঙ্গলবার সরাসরি সদর থানায় যায় এবং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীনকে পিপিএম (বার) বিস্তারিত জানালে তিনি বিয়ে বন্ধ করে দেন। এ ঘটনায় গত বুধবার মাথাভাঙ্গা পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হাজির হয়ে নিজের বাল্যবিয়ে রুখে দিলো মেধাবী এক শিক্ষার্থী’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদায় গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সম্মেলন কক্ষে দিবসটি উপলক্ষে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তারের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলি মুনছুর বাবু। দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার আয়োজনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাহিদা খাতুন, দামুড়হুদা মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সেলিম মোল্লা। এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুদীপ্ত কুমার সিংহ, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপার ভাইজার রাফিজুল ইসলাম, ব্যানবেইজ আব্দুল কাদির, প্রেসক্লাব সভাপতি এম নুরুন্নবী, উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম রেজা প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হোসনে জাহান ববি
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগরে জাতীয় কন্যা দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আলোচনাসভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ দিবস পালন করা হয়। সকালে উপজেলা ক্যাম্পাস হতে উপজেলা চেয়ারম্যান হাজি হাফিজুর রহমান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম রাসেলের নেতৃত্বে র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিতে সরকারি বিভিন্ন দফরের প্রধানগণ ও স্কুলের ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন। র‌্যালিটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। উপজেলা হলরুমে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান হাজি হাফিজুর রহমান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম রাসেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম ঈশা, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা সুলতানা লাকি ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সেলিম রেজা। শেষে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী কন্যাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More