চুয়াডাঙ্গায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯১টি প্রধান ও ৫৪টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য

নজরুল ইসলাম: জ্ঞান হচ্ছে আত্মার খাদ্য। আর আত্মা পুষ্টির জন্য চাই শিক্ষার প্রাচুর্যতা। মায়ের গর্ভে জন্ম লাভ করেই মানুষের মন্যুষত্ত্ব লাভ ঘটে না। মানবিক গুণাবলী না থাকলে সে ব্যক্তি সত্যিকার মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। শিক্ষা মানুষকে শুধু ব্যক্তিত্বশীল ও স্বনির্ভরই করে গড়ে তোলে না। শিক্ষালব্ধ জ্ঞান মানুষের মনের ঐশর্য ও বাড়িয়ে তোলে। আর শিক্ষা গ্রহণ করতে হলে তাকে অবশ্যই বিদ্যাপীঠে যেতে হয়। বিদ্যাপীঠে যারা শিক্ষা দিয়ে থাকেন তাদেরকে শিক্ষাগুরু হিসেবে সম্বোধন করা হয়ে থাকে। অথচ চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ৯১টি প্রধান শিক্ষক এবং ৫৪টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে ৯১টি বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। অফিসিয়াল কাজে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকেরা জেলা কিংবা উপজেলা শিক্ষ অফিসে গেলে সেদিন আরও সমস্যায় পড়তে হয় বিদ্যালয়গুলোকে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষর মান ঠিক রাখতে শূন্যপদ পূরণের উদ্যোগ গ্রহণের দাবি সচেতন মহলের। যদিও করোনা পরিস্থিতিতে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান বন্ধ আছে।
আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এমন একটি কাঠামোগত পরিবেশে ঘটে থাকে যার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান। সাধারণত: একটি স্কুলের পরিবেশে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সঞ্চালিত হয় যেখানে শ্রেণিকক্ষে একাধিক শিক্ষার্থীদের জন্য একজন প্রশিক্ষিত এবং প্রত্যয়িত শিক্ষকের প্রয়োজন পড়ে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য। বেশিরভাগ স্কুলে একটি মানসম্মত আদর্শ ডিজাইন করা হয়েছে। এই ধরনের পছন্দগুলো পাঠ্যক্রম, সাংগঠনিক মডেল, শারীরিক শিক্ষার স্থানগুলোর (যেমন শ্রেণিকক্ষ) নকশা, ছাত্র-শিক্ষক ইন্টার অ্যাকশন, মূল্যায়ন পদ্ধতি, শ্রেণির আকার, শিক্ষাগত কর্মকা- এবং আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত করে থাকে। তাই শিক্ষাকে অধিকতর গুরু দিয়ে বর্তমান সরকার শিক্ষার মানোন্নয়নে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন কারার পাশাপাশি এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ রেখেছে মোট ব্যয়ের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দশমিক ০৯ শতাংশ। প্রতিটি বিদ্যালয়ে এসব বাস্তবায়ন করে থাকে একজন প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে কয়েকজন সহকারী শিক্ষক মেলে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসসূত্রে জানা গেছে, ৪৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ৯১টি প্রধান শিক্ষক এবং ৫৪টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে ৯১টি বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। অফিসিয়াল কাজে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকেরা জেলা কিংবা উপজেলা শিক্ষ অফিসে গেলে সেদিন আরও সমস্যায় পড়েতে হয় বিদ্যালয়গুলোকে। যার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১২১টি বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য আছে ১৯টি সহকারীর ১৮টি, আলমডাঙ্গায় ১৩৭টি বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষক ২৫টি, সহকারী শিক্ষক ১৩টি, দামুড়হুদায় ১১৬টি বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষক পদ ২৭টি, সহকারী শিক্ষকের ৩টি ও জীবননগর উপজেলায় ৭১টি বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের ২০টি, সহকারী শিক্ষকের ২০টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।
এদিকে শিক্ষাবিদরা মনে করেন, জ্ঞানই আত্মাকে জীবন্ত রাখে, চরিত্র-চৈতন্য এবং নৈতিকতার উন্নয়নে বিরাটভাবে সাহায্য করে। উচ্চতর জীবনবোধ ও মূল্যবোধের পরিস্ফূটন শিক্ষার মাধ্যমেই গড়ে ওঠে। একমাত্র জ্ঞানলাভ ও বিদ্যা শিক্ষার প্রভাবেই মানুষ তার অর্ন্তনিহিত শক্তি, দক্ষতা ও কৌশল লাভ করতে পারে। এর মাধ্যমে অনেক ভালো কাজ দ্বারা শুধু নিজের নয় দেশের ও দশের অনেক উপকার হতে পারে। পুষ্টিহীন আহারেও মানুষ বাঁচতে পারে। কিন্তু এতে নানা রোগে জর্জরিত হয়ে বাঁচাটা যেমন সুখকর হয় না, তেমনি শিক্ষাহীন বাঁচার মধ্যে সম্মান নেই, সুখবোধ নেই আর গৌরব ও নেই। তাই শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হলে ছাত্র-ছাত্রীর আনুপাতিক হারে শিক্ষক থাকা আবশ্যক। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সরকারের হাতে। আমরা প্রয়োজনের তথ্য দিয়ে থাকি। বাস্তবায়ন করার এখতিয়ার আমাদের নেই। বর্তমান মহামারি করোনার কারণে অনেক কিছু স্থবির হয়ে আছে। প্রাথমিকে শিক্ষ নিয়োগ শুরু হলে এ শূন্যতা থাকবে না।
উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ৩ হাজার ২২ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৫০ হাজার ৭০২ জন এবং ছাত্রী ৫২ হাজার ৩২০ জন। যাদেরকে ৩৫২ জন প্রধান শিক্ষক এবং ২ হাজার ৩৯৬ জন সহকারী শিক্ষক পাঠদান করিয়ে থাকেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More