চুয়াডাঙ্গা শহরে ইজিবাইক এখন গলার কাটা : ডাক পড়লেই রাস্তার মাঝে থামে চাকা

শৃঙ্খলা ফেরাতে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে : মেয়র; সড়ক পরিবহন আইনের আওতায় না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারি না: ট্রাফিক পুলিশ
আফজালুল হক: স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতে চুয়াডাঙ্গাবাসীর ভরসা কেবল ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক। সাশ্রয়ী এ গণপরিবহনে বেকারত্ম ঘুচিয়েছেন বিপুল সংখ্যক বেকারের। তবে অপর্যাপ্ত সড়কে এখানকার যানজটের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব যান। অনেকেই বলছেন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইজিবাইক। চুয়াডাঙ্গা শহরে তিন চাকার ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের (অটোরিকশা) দাপট বেড়েই চলছে। সারা শহরে এখন অল্প ব্রেকের এই যান চলাচল করছে অবাধে। মানছে না কোনো বিধি নিষেধ। যেখানেই যাত্রীর ডাক পড়ে সেখানেই থামে এই যান। হোক রাস্তার মাঝে বা পাশে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। শহরে ইজিবাইকের চাপ কমাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেষ্টার কমতি নেই। পৌর মেয়র বলছেন, সড়কে ইজিবাইকের দাপট ও শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা নানান পদক্ষেপ নিচ্ছি। প্রশাসন ছাড়া কার্যকর সম্ভব নয়। তবে ট্রাফিক পুলিশ বলছে, ইজিবাইকগুলো সড়ক পরিবহন আইনের মধ্যে পড়েনা। এটা পৌরসভা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় ১৫৫টি বৈধ ইজিবাইক থাকলে চলাচল করছে ২ হাজারেও বেশি ইজিবাইক। নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বেড়েই চলছে এই তিন চাকার ইজিবাইকের সংখ্যা। এতে চলাচলে কোনো শৃঙ্খলা থাকছে না। যে যার ইচ্ছা মতো এসব যান চালাচ্ছে। এতে প্রতিদিন শহরে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে ইজিবাইকগুলো। অদক্ষ চালকের কারণে যেখানে-সেখানে ইউটার্ন নেয়া ও যাত্রী ওঠানো-নামানোতে প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। ইজিবাইকের দৌরাত্ম্যের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে বেশ কয়েকবার পৌরসভা মেয়র নানা কর্মসূচি হাতে নিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এতে সাধারণ মানুষের মুক্তি মেলেনি ভোগান্তি থেকে।
অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একমুখী যান চলাচলে নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না চালকেরা। চুয়াডাঙ্গার সাবেক জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দিন আহমেদ হাসপাতাল সড়কে একমুখী সড়ক চালু করলেও তা কিছুদিন চললেও এখন আর তা মানেন না কেউ। ফলে ইজিবাইকের যানজট সমস্যা রয়েই গেছে। সকালে সদর হাসপাতালে রোগীর চাপ থাকায় ইজিবাইকের জন্য জ্যাম বেধেই থাকে। এতে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স এবং জনসাধারণে চলাচলে ব্যপক বিঘœ ঘটছে। আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নির্দেশনা অমান্য করছে এসব ইজিবাইকের চালকেরা। এতে তৈরি হয় যানজট, অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা।
এদিকে, শহরের বড় বাজার শহীদ হাসান চত্বর, কোর্ট চত্বর এলাকা, একাডেমী বাসস্ট্যান্ড, ফেরিঘাট রোড, হাসপাতাল সড়ক, রেলওয়ে স্টেশনসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ইজিবাইকের যানজট দেখা যায়। একদিকে যত্রতত্র দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায় যানজট বাড়ছে। আবার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সেখানে যেতে ৫ মিনিট লাগে, এই ইজিবাইকদের দৌরাত্বের কারণে ২৫-৩০ মিনিট লেগে যায়।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় বৈধ ইজিবাইকের সংখ্যা ১৫৫টি। ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য ইজিবাইক চালকদের জোর দেয়া হচ্ছে। ইউনিয়নের ইজিবাইক পৌরসভা এবং পৌরসভার ইজিবাইকগুলোকে ইউনিয়নে ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইউনিয়ন ও পৌরসভার ইজিবাইকের রঙও আলাদা। যেনো তাদেরকে সহজেই আটকে দেয়া সম্ভব হয়।
আসির উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, বিজ্ঞ আদালত এসব যান অবৈধ ঘোষণা করেছে। তবে পুলিশ এখনো এগুলো বন্ধে কোনো অভিযান শুরু করেনি। সবাই এই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে খুবই অসুবিধায় আছে। যন্ত্রদানবে পরিণত হয়েছে এই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। অঙ্গহানিসহ ছোটখাটো ক্ষতির শিকার হচ্ছে নারী, পুরুষসহ শিশুরা। আইনে অবৈধ হলেও বেপরোয়া এ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে দেদারছে।
শহরের এক বাসিন্দা বলেন, বিশেষ করে কিশোর অটোচালকের সংখ্যা বেড়েছে। এতে সড়কে দুর্ঘটনা অনেক বেড়েছে। এদের কোনো প্রশিক্ষণ না থাকায় বাড়ছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। আবার কেউ কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণ করছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
বেসরকারি চাকরিজিবী আশরাফুল হক বলেন, শহরে অটোচালকদের কোনো শৃঙ্খলা নেই। যে যেভাবে পারছে অটোরিকশা চালাচ্ছে। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। আমার সন্তান পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে একা একা রাস্তা পার হতে পারে না। ভয় পায়। এখনও তাকে রাস্তা পার করে দিতে হয় এই ইজিবাইকের জন্য। আবার যেখানে স্টপেজ না সেখানে যে কেউ হাত ইশারা করলে থেমে যাচ্ছে ইজিবাইক চালকেরা। এতে পেছনে থাকা অন্যান্য গাড়ি তাল সামলাতে না পারায় ঘটছে দুর্ঘটনা।
চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ইজিবাইকের ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। তাদের কোনোমতেই কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না। সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণের অভাবে বাড়ছে দুর্ঘটনা। শহরের ইজিবাইক বাইরে যেতে মানা এবং বাইরের ইজিবাইক শহরে আসা মানা। আমরা মাইকিং করবো। যাদের লাইসেন্স নেই তারা যেনো দ্রুত লাইসেন্স করেন। আমরা তো সড়কে চলাচল বাধা দিতে পারি না। এটা প্রশাসনের কাজ। শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা ইতোমধ্যে নানান পদক্ষেপ নিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, সদর হাসপাতাল সড়কে একমুখি করতে পুলিশ ও পৌরসভা থেকে দুজন কাজ করে। ইজিবাইক চালকেরা তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে যায় বলে আমি অবগত আছি। আমরা দ্রুত বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।
চুয়াডাঙ্গা ট্রাফিকের পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) ফকরুল আলম ইসলাম বলেন, ইজিবাইকগুলো সড়ক পরিবহনের আইনের মধ্যে পড়ে না। ইজিবাইকগুলো পৌরসভা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবে চলাচলের ওপর আমাদের নজরদারি রয়েছে। কিছু চালক বেপরোয়া হয়ে অটোরিকশা চালায়। যাত্রী নামাতে রাস্তার মাঝে দাঁড় করিয়ে দেয়। এ ধরনের অটোরিকশা আটক করে এক দুদিন পুলিশ লাইন্সে রেখে দেয়া হয়। চালকরা সংশোধন হলে ছেড়ে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ইজিবাইক অনিয়ন্ত্রিত চলাচলের কারণে যানজট ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন সকাল না হতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার অটোরিকশা শহরে প্রবেশ করে। এসব অটোরিকশার চালকদের বেশিরভাগেই কোনোরকম প্রশিক্ষণ নেই। এরা ট্রাফিক পুলিশের কোনোরকম সিগন্যালের পরোয়া করে না। এরা যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠায়-নামায়। ইজিবাইক ঘোরানো প্রয়োজন হলে যেখানে আছে সেখান থেকেই ইউটার্ন নিয়ে নেয় এরা। এর ফলেও বেধে যায় যানজট। আমরা পৌর মেয়র ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের কাছে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More