জীবননগরে ভেজাল সার ও নি¤œমানের বীজ বিক্রি বন্ধে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন : আজ থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং

সালাউদ্দীন কাজল: জীবননগরে কৃষিমোর্চার আয়োজনে এবং এনজিও সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ভেজাল সার ও নিম্নমানের বীজ বিক্রি বন্ধে করণীয় বিষয়ক এক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা ১১ টায় জীবননগর উপজেলা কৃষি প্রশিক্ষণ মিলনায়তনে এ আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। জীবননগর উপজেলা কৃষিমোর্চার সভাপতি আব্দুল হান্নানের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজি মো. হাফিজুর রহমান, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম লিংকন, জীবননগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম ঈশা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা সুলতানা লাকি, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের কামরুজ্জামান যুদ্ধ, জীবননগর উপজেলা লোকোমোর্চার সহ-সভাপতি সালাউদ্দীন কাজল, সাংবাদিক কাজী সামসুর রহমান চঞ্চল, জিএ জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. হাফিজুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, যারা ভেজাল সার ও নিম্নমানের বীজ বিক্রি করে থাকেন তারা দেশের শত্র“। দেশের কৃষিখাতকে ধ্বংস করে তারা দেশের উন্নয়ণকে বাঁধাগ্রস্থ করতে চায়। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি কিছু খুচরা সার ব্যবসায়ী অধিক মুনাফালোভের আশায় সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের থেকে বেশী দামে সার বিক্রি করছে। এ কারণে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এতে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তিনি উপজেলা কৃষি অফিসকে বাজার মনিটরিং করার জন্য আহ্বান জানান,
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম লিংকন তার বক্তব্যে বলেন, কৃষকরা হলো দেশের প্রাণ। খুচরা সার ব্যবসায়ীরা যদি কৃষকদের জিম্মি করে বেশী দামে সার বিক্রি করে থাকে তাহলে ওই দোকানদারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, এখন থেকে নিয়মিত সারের বাজার মনিটরিং করা হবে। অধিক মূল্যে সার বিক্রি, ভেজাল সার, ভেজাল বীজ ও ভেজাল কীটনাশক বিক্রিকারীর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল-জরিমানা করা হবে। কোনোভাবেই কৃষিখাতকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, বেশী দামে সার বিক্রি করার অভিযোগ পেলে ওই সার ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল করা হবে। ইতোমধ্যে সরকারের বেঁধে দেয়া মূল্যে সার বিক্রি করার জন্য উপজেলার বিসিআইসি ও বিএডিসি অনুমোদিত সার ডিলারসহ খুচরা সার বিক্রেতাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ সোমবার) কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করা হবে। আলোচনাসভায় জীবননগর উপজেলার বিসিআইসি ও বিএডিসি অনুমোদিত সার ডিলার, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, খুচরা সার বিক্রেতাসহ এলাকার সুধীবৃন্দরা অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনা শেষে জীবননগর উপজেলা কৃষি মোর্চার পক্ষ থেকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে কৃষকদের স্বার্থে ৪ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো (১) ভেজাল সার ও বীজ বিক্রেতাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। (২) সরকার অনুমোদিত যে সমস্ত ডিলাররা ভেজাল কৃষি পণ্য বিক্রি প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। (৩) যে সমস্ত কোম্পানির বীজের কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। (৪) প্রতিমাসে উপজেলা প্রশাসনও কৃষি অফিসের সমন্বয়ে ভেজাল সার-বীজ ও কীটনাশক বিক্রি বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে।
জীবননগর উপজেলাব্যাপী সারের কৃত্রিম সঙ্কট: জীবননগর উপজেলাব্যাপী টিএসপি সার (ট্রিপল সুপার ফসফেট) এবং ডিএপি সারের (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট) কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করেছে সার ব্যবসায়ীরা। এ কারণে কৃষকরা তাদের জমিতে সার দিতে না পেরে কাঙ্খিত ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। গতকাল রোববার বিকেলে উপজেলার মিনাজপুর বাজার, আন্দুলবাড়িয়া বাজার, রায়পুর বাজার, বাড়ান্দি বাজার ও সুটিয়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ খুচরা সার ব্যবসায়ী সরকারের বেধে দেয়া মূল্যে সার বিক্রি করছেন না। কোনো অপিরিচিত মানুষ সারের দোকানে টিএসপি ও ডিএপি সার কিনতে গেলে তাকে বলা হচ্ছে সার নেই। পরক্ষণেই পরিচিত কৃষক গেলে তাদের কাছে অধিক মূল্যে সার বিক্রি করা হচ্ছে। মিনাজপুর বাজারে এবং বাড়ান্দি বাজারে গতকাল রোববারও প্রতিবস্তা টিএসপি সার (মরক্কো) ১৪০০ টাকা দরে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে বিসিআইসি (বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন) অনুমোদিত জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের জন্য ট্যাগ করা এমএস ট্রেডার্স, রায়পুর ইউনিয়নের জন্য রাসেল এন্টার প্রাইজ এবং আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের জন্য হক ট্রেডার্সের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে আন্দুলবাড়ীয়া বাজারের খুচরা সার ব্যবসায়ী জিনারুল ইসলাম, বজলু হোসেন এবং ইসমাইল হোসেন তিনজনই হক ট্রেডার্সের প্রতিনিধি হিসেবে সার বিক্রি করছেন। এছাড়া আন্দুলবাড়ীয়া বাজার, উথলী বাজার, রায়পুর বাজার, হাসাদাহ বাজারসহ উপজেলার ৯০ ভাগ খুচরা সার বিক্রেতার দোকানে কোনো মূল্য তালিকা টানানো নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মনোহরপুর গ্রামের এক কৃষক বলেন, জীবননগর পৌর শহরের দত্তনগর সড়কের সবগুলো সারের দোকোনে সরকার নির্ধারিত মূল্য ছাড়া ৩ থেকে ৪ শত টাকা মূল্য বেশী দামে টিএসপি সার বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, জীবননগর কৃষি অফিসের বাজার মনিটরিং না থাকার কারণে সারের দোকানিরা অধিক মূল্যে সার বিক্রি করার সাহস পাচ্ছে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More