জীবন চলে গেলেও পূর্ব পুরুষের স্মৃতি চাষের জমি ছাড়বো না আমরা

সৌর বিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগের প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভে বক্তারা বলেন
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জীবননগরের রায়পুর ইউনিয়নের যে জমিতে গ্রিন পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের লক্ষ্যে যাচাই বাছাই চলছে, সেই জমি তিন ফসলি দাবি করে প্রকল্প বাতিল চেয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলকারীরা বলেছেন, আমরা আমাদের জীবন চলে গেলেও পূর্ব পুরুষের স্মৃতি চাষের জমি ছাড়বো না। গতকাল মঙ্গলবার মানববন্ধন, স্মারকলিপি পেশ করে এ দাবি জানানো হয়।
বিভিন্ন সেøাগান সংবলিত পোস্টার নিয়ে সৌর বিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে মানববন্ধন করেন কয়েকশ’ আন্দোলনকারী। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সমবেত হন তারা। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন।
মানববন্ধনে অভিযোগ করে বলা হয়, জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের মৌজায় তিন ফসলি জমি রয়েছে ৮১০ বিঘা। এরমধ্যে ৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য জোরপূর্বক ওই মাঠের ৫৪০ বিঘা জমি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে সাইক্লিট এ্যানার্জি লিমিটেড নামের সিঙ্গাপুরের একটি বেসরকারি কোম্পানী। মাঠের ৫৪০ বিঘা তিন ফসলি জমি স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহায়তায় অনাবাদি দেখিয়ে সোলার বিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণের পাঁয়তারা করছে প্রভাবশালীরা। মাসখানেক ধরে এ নিয়ে আন্দোলন করছেন কৃষকরা। কৃষি জমিতে পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণে কৃষকরা আপত্তি জানালেও জোরপূর্বক সেখানে সৌর বিদ্যুত প্লান্ট নির্মাণ করতে কোম্পানীর পক্ষে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রভাবশালী একটি মহল। নিয়মিত পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। মরে গেলেও বাপ-দাদার স্মৃতি একমাত্র চাষের জমি বিক্রি করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন কৃষকরা।
আন্দোলনকারী কৃষকদের অভিযোগ, সাবেক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সৌর বিদ্যুত কোম্পানীর সাথে আঁতাত করে কৃষি সমৃদ্ধ উর্বর ৮১০ বিঘা জমিকে বেলে ও চাষাবাদের অযোগ্য পতিত জমি হিসেবে চিহ্নিত করে গোপনে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। পরে তার বদলি হয় ঝিনাইদহে। মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ খেয়ে তিনি ওই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ কৃষকদের। ওই মাঠে সৌর বিদ্যুত প্লান্ট নির্মাণ হলে শুধু কৃষি জমিই কমবে না, মারাত্মক প্রভাব পড়বে এলাকার পরিবেশের ওপর। ফলে গ্রামে খাদ্য ঘাটতিও দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা কৃষকদের।
বিক্ষোভ শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন কৃষকরা। জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেন তাদের সমস্যা নিয়ে। কৃষি জমি নষ্ট করে ও জনগণের ক্ষতি করে কোনো প্রকল্পের অনুমতি দেয়া হবে না বলে জানান জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। দুই বা তিন ফসলি জমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। বিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণের বিষয়ে কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। জমি অধিগ্রহণের ক্ষমতা জেলা প্রশাসনের। গ্রামের মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কিছু করা হবে না। পরে বিক্ষোভ মিছিল করে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান আন্দোলনরত কৃষকরা। দেখা করে পুলিশি হয়রানি বন্ধে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের সাথে কথা বলেন কৃষকরা। কোনো কৃষককে হয়রানি করা হবে না বলে আন্দোলনরত কৃষকদের আশ্বাস দেন পুলিশ সুপার।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More