দর্শনায় কণ্ঠশিল্পী-শিক্ষিকা জয়নব পুতুলের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন: মিথ্যা মামলার অভিযোগ, আইনি সহায়তায় বাধা

বিশেষ প্রতিনিধি:চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় আলোচিত স্বর্ণ মামলায় গ্রেফতার কণ্ঠশিল্পী জয়নব পুতুলের মুক্তি ও ন্যায়বিচারের দাবিতে সাধারণ মানুষ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অংশগ্রহণ। পরিবারের অভিযোগ ক্ষমতাধর প্রভাবের কারণে কেউ তার পক্ষে দাড়াতে সাহস পাচ্ছে না।

দর্শনা গার্লস স্কুলের সঙ্গীত শিক্ষিকা এবং এটিএন বাংলার নিবন্ধিত কণ্ঠশিল্পী জয়নব পুতুলের উপর হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদে দর্শনা প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক মানববন্ধন। রোববার বিকেল ৪টার দিকে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে অংশ নেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাধারণ নাগরিক।

মানববন্ধনটি আয়োজন করে ‘দর্শনা পৌরবাসী’, যারা দাবি করেন, একজন শিল্পী ও শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তার জীবন ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। আমরা আইনি সহায়তা চাই

পুতুলের বোনের কান্নাজড়ানো বক্তব্য
মানববন্ধন চলাকালীন অবস্থায় জয়নব পুতুলের ছোট বোন জয়নব তরুণী বলেন, আমরা বিচার চাই, আমরা আইনি সহায়তা চাই। সম্প্রতি জেলা বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতাকে নিয়ে প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের ‘ফিফটিন মিনিটস’-এর প্রতিবেদনে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টি বক্তব্য প্রকাশের পরদিনই আমার বোনকে ষড়যন্ত্রমূলক স্বর্ণ মামলায় ফাসানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন,আমরা থানায় গিয়েছি, উকিলদের দ্বারস্থ হয়েছি, কিন্তু সবাই ভয় পাচ্ছে। কেউ পুতুলের পক্ষে দাড়াতে রাজি নয়।

মামলার প্রেক্ষাপট,দর্শনা থানার একটি স্বর্ণচোরাচালান মামলায় সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয় জয়নব পুতুলকে।
স্থানীয় বিজিবি ও পুলিশের নথি অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে তিনটি স্বর্ণবারসহ আসমা নামের এক নারীসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে বিজিবি সদস্যরা। তবে মামলার প্রাথমিক তালিকায় পুতুলের নাম ছিল না।
পরে হঠাৎই আপডেট তালিকায় তার নাম যুক্ত করে গ্রেফতার দেখানো হয় যা স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রশ্ন ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

সরেজমিনে অসঙ্গতি:

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, যেই বাড়ি থেকে স্বর্ণ উদ্ধারের দাবি করা হয়েছে, সেই পারকৃষ্টপুর গ্রামের বাসিন্দারা বলেছেন, তারা কখনোই জয়নব পুতুলকে দেখেননি।
গ্রেফতারকৃত আসমা খাতুনের স্বামী আশরাফুল (৪৮) বলেন,আমরা গরিব মানুষ। আমি এক্সিডেন্টে বাড়িতে বসে আছি। আমাদের বাড়িতে কোনো স্বর্ণ নেই, পুতুল নামে কাউকে চিনি না। তবুও পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

স্থানীয়দের মতে, এ ধরনের সাক্ষ্য তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছে।

পরিবারের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের ছায়া:

পুতুলের মা অভিযোগ করেন,মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে ফাসানো হয়েছে। গ্রেফতারের সময় বাড়ির দরজা ভেঙে তল্লাশি করা হয়, খাবার ফেলে দেওয়া হয়, ঘর লণ্ডভণ্ড করে ফেলা হয়।

তিনি আরও জানান,বড় বড় উকিলরা বলছেন এই মামলা নেওয়া মানে রাজনৈতিক বিপদে পড়া। তাই কেউ আমাদের পাশে আসছে না।
পরিবারের দাবি, এই অবস্থায় পুতুল আইনি সহায়তা থেকে কার্যত বঞ্চিত এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার কোনো পথ নেই।

মানববন্ধনের প্রতিক্রিয়া ও বাধা

মানববন্ধন চলাকালে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ছাত্রদল ও যুবদলের কিছু নেতাকর্মী এসে সেখানে উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং মানববন্ধন ভাঙার চেষ্টা করে।

আয়োজকদের দাবি,

আমরা কোনো দলের হয়ে নয়,ন্যায়ের দাবিতে দাড়িয়েছি।

ধারাবাহিক প্রতিবাদ

দর্শনায় রবিবার ১৯ অক্টোবর মানববন্ধনের আগে চুয়াডাঙ্গা শহরে পরপর দুই দিন মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শিক্ষক, শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়ে বলেন,একজন শিক্ষিকা ও শিল্পীর বিরুদ্ধে যদি এমন প্রতিহিংসা চলে, তাহলে সমাজে ন্যায়বিচারের আশা কোথায়?

তাদের দাবি জয়নব পুতুলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি পুনঃতদন্ত করতে হবে এবং তার আইনজীবী নিয়োগে যে বাধা তৈরি হয়েছে, তা অবিলম্বে দূর করতে হবে।

দর্শনা গার্লস স্কুলের সঙ্গীত শিক্ষিকা ও কণ্ঠশিল্পী জয়নব পুতুল এখন কারাগারে, তার পরিবার অসহায়, আর দর্শনার মানুষ প্রতিবাদে রাস্তায়।
আইনি সহায়তা না পাওয়া, রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ ও মানববন্ধন ব্যাহত করার ঘটনা সবকিছু মিলিয়ে এই মামলা এখন স্থানীয় থেকে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে।

মানবাধিকার সংগঠন ও নাগরিক সমাজের আহ্বান

যেকোনো প্রভাব বা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে জয়নব পুতুলের মামলাটি স্বচ্ছভাবে তদন্ত করতে হবে এবং একজন শিল্পীকে তার মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More