দামুড়হুদায় সরকারি নিয়ম-নীতি ও স্বাস্থ্য বিধি না মেনে প্রতিবন্ধী বাছাইকরণ প্রক্রিয়া

রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট করাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে চিরকুট!

দামুড়হুদা অফিস: বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা যখন প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন ঠিক তখনি সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-কে বাঁধাগ্রস্ত করছেন কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। দামুড়হুদা উপজেলায় প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ কাজে উপজেলা সমাজসেবা দফতর থেকে একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিরকুট দিয়ে রক্ত পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এবার দামুড়হুদা উপজেলায় ৯৮৬জন প্রতিবন্ধী ভাতা’র সুবিধা ভোগ করবে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলায় প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণে ও রক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা কাজ শুরু হয় গত শুক্রবার থেকে। নিয়মানুযায়ী যে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে রক্ত পরীক্ষা করার কথা থাকলেও ভুক্তভোগীদের হাতে চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ছানোয়ার হোসেন ও প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ কাজে নিযুক্ত মেডিকেল অফিসার ডা. অমিত কুমার বিশ্বাস নিয়ম-নীতি না মেনে এক প্রকার বাধ্য করছে বলে জানা যায়। চিরকুটে লেখা আছে নিউ ডিজিটাল (প্রা.) হাসপাতাল অ্যান্ড শোভা ডায়াগোনেস্টিক সেন্টার, চিৎলা হাসপাতাল মোড়, দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা। এছাড়াও ভুক্তভোগীদের মোখিকভাবেও বলে দেয়া হচ্ছে চিরকুটে লেখা স্থান থেকে রক্ত পরীক্ষা করার কথা। রক্ত পরীক্ষার জন্য রিপোর্ট প্রতি নেয়া হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা করে। এছাড়াও দামুড়হুদা উপজেলা সমাজসেবা অধিদফতরের কার্যালয়ে ও শোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শনিবার ও রোববার এ কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে শারীরিক দূরুত্ব বজায় না রেখে প্রতিবন্ধীদের গাঁয়ে গাঁ লাগিয়ে লাইনে দাঁড় করানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়টি রোববার দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান জানতে পেরে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহিউদ্দিনকে অবগত করেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষনিক উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে হাজির হয়ে ঘটনার সত্যতা পান। এবং উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ছানোয়ার হোসেনের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি রাগান্বিত হয়ে উচ্চস্বরে বলেন, কে বলেছে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না, ইউনিয়ন পরিষদে চাল দিচ্ছে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি নেই, এখানে কিসের স্বাস্থ্যবিধি? তিনি আরও বলেন, “বিদ্যুত না থাকলে বিকল্প ব্যবস্থায় রক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা জন্য শোভা ডায়াগনস্টিকের চিরকুট দেয়া হয়েছে। অন্য জায়গা থেকেও সে টেস্ট করতে পারবে। এ ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা অন্য কোথাও নেই।” তাই সবাইকে চিরকট দিয়ে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হচ্ছে।
প্রতিবন্ধী শনাক্ত কাজে নিযুক্ত মেডিকেল অফিসার ডা. অমিত কুমার বিশ্বাস তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে বলেন, আমি কাউকে শোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে রক্ত পরীক্ষা করার কথা বলিনি। আর চিৎলা হাসপাতালে কোনো পরীক্ষা হয় না। পরক্ষণেই তিনি আবারও বলেন, তাদেরকে আমি বিনামূল্যে চিৎলা হাসপাতাল থেকে রক্ত পরীক্ষা করার কথা বলেছি।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা জামাল শুভ বলেন, সরকারিভাবে আমাদের নির্দেশনা আছে প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিদেরকে বিনামূল্যে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা। রক্ত পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালের কাজ অবশ্যই প্রতিবন্ধীদের বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষা করে প্রত্যায়ন পত্র দেয়া হবে।
ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক আব্দুল খালেক বলেন, আমার কাছ থেকে সমাজসেবা অধিদফতর তাদের বিভিন্ন রোগীর জন্য বছরের সমস্ত ওষুধ নিয়ে থাকে। সেই সুবাদে সমাজসেবা অফিসার আমাকে ফোন করে বলেন প্রতিবন্ধীদের রক্ত পরীক্ষার রিপোটগুলো করে দিতে হবে। কিছু রিপোর্ট ফ্রি করে দিচ্ছি আর বাকিগুলো টাকা নিচ্ছি। এ পর্যন্ত তিন দিনে আমার এখান থেকে ১৫০জনের পরীক্ষা করা হয়েছে ।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। সেখানে তাদের কাছ থেকে কোনো টাকাও নেয়া যাবে না। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে হবে। আর তারা কোথা থেকে তাদের রক্ত পরীক্ষা করবে সে বিষয়ে তাদেরকে বাধ্যও করা যাবে না।”

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More