দুর্নীতি করেও চাকরি ফিরে পাওয়া সেই পলাশের অনিয়ম তদন্তে এবার দর্শনা পৌরসভায় দুদক

স্টাফ রিপোর্টার: দর্শনা পৌরসভার আলোচিত হিসাবরক্ষক ভাগ্যবান সৈয়দ রুমি আলম ওরফে পলাশ চেক জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত প্রদান করে পদ অবনমনের মাধ্যমে ক্যাশিয়ার পদে যোগদান করেও শেষ পর্যন্ত রেহায় পাচ্ছে না। তার অসংখ্য দুর্নীতি তদন্তে এবার মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। গতকাল বুধবার দুপুরে দুদকের একটি তদন্তদল দর্শনা পৌরসভা, ব্যাংক, রাস্তা নির্মাণে পুকুরচুরি করা দক্ষিণচাঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছে বলে জানাগেছে।
উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের ৩০ আগস্ট তার বিরুদ্ধে বছরের পর বছর পৌরসভার ট্যাক্সের অর্থ আত্মসাৎ, ব্যাংক চেকে মেয়র ও প্রকৌশলীর স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন, আদায়কৃত অর্থ ব্যাংকে জমা না দিয়ে ব্যক্তিগত ব্যবসায় খাটানো, বৈদ্যতিক মালামালের টেন্ডার করে মালামাল ছাড়াই অর্থ পরিশোধসহ বিভিন্ন অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছিল। ওই অভিযোগসমূহ তদন্তের জন্য পৌরসভার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কঠোর গোপনীয়তার মাধ্যমে তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও তদন্তে কি ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তা আজও প্রকাশ করা হয়নি। তবে তদন্তে প্রমাণিত মেয়র ও প্রকৌশলীর স্বাক্ষর জাল করে আত্মসাৎকৃত ১৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা পৌরসভার ফান্ডে ফেরত প্রদান করে পদ অবনমনের মাধ্যমে ক্যাশিয়ার পদে গত বছরের ১৭ নভেম্বর আবারো ভাগ্যবান পলাশ যোগদান করে। তবে সামান্য একজন পৌর কর্মচারী কিভাবে গড়ে তুলেছিল জ্বালনি খড়ির আড়ৎ, ইটভাটার ব্যবসা, নদীর ওপারে জমি ক্রয়সহ তার সম্পদের কোন তদন্ত হয়নি। অভিযোগ রয়েছে এ সবই ছিল পৌরসভার টাকায়। সময়মত ট্যাক্সসহ অন্যান্য টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজে ব্যবহার করতো। ফলে পৌর কর্মচারীদের বছরের পর বছর বেতন হতোনা। সেই সাথে তার জন্য শাপে বর হয় দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার সচিব ও প্রকৌশলীর মতো গুরুত্বপূর্ণপদ দুটি বছরের পর বছর খালি থাকা। ফলে সে একই সাথে সচিবের দায়িত্ব পালন করায় দেখার কেউ ছিলনা। তার বিরুদ্ধে শুধু পৌরসভার বিভিন্ন ট্যাক্সের টাকায় নয়, সেই সাথে পৌরকর্মচারীদের ভবিষ্যত তহবিলের টাকাও পকেটস্থ করার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি মারা যাওয়া কর্মচারীদের জন্য দেয়া সাহায্যের টাকাও হতভাগাদের না দেয়ার অভিযোগ ওঠে।
জানা গেছে, গতকাল দুপুরে হঠাৎ করেই দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের দর্শনা পৌরসভায় আবির্ভাব ঘটে। তারা এসেই সাবেক হিসাব রক্ষক সৈয়দ রুমি আলম ওরফে পলাশের দুর্নীতির তদন্ত রিপোর্ট চেয়ে বসে। কিন্তু পৌরসভার সচিবের দায়িত্বে থাকা বর্তমান সহকারী প্রকৌশলী ঢাকাতে প্রশিক্ষণে থাকায় বিপত্তি বাধে। পরে বাজার থেকে তালাচাবি মেরামতের মিস্ত্রি এনে আলমারীর তালা ভেঙে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সরবরাহ করা হয়। পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীরা বাইরে অবস্থান করায় তারা তদন্তের প্রয়োজনে আবারো আসবে বলে জানাগেছে। এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের সংবাদ প্রচারিত হওয়ায় দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্টরা যেমন দুঃশ্চিন্তায় পড়েছে তেমন সচতনমহল স্বস্তি¡ প্রকাশ করেছে। কারন দুর্নীতি আর চাটুকারদের কবলে পড়ে ৩২ বছর বয়সী দর্শনা পৌরসভার উন্নয়ন কার্যক্রম বর্তমানে মুখ থুবড়ে পড়েছে। বর্তমান সরকার সারাদেশে উন্নয়নের মডেল সৃষ্টি করলেও দর্শনা পৌরসভা যেন পেছনের দিকে হাঁটছে। বর্তমানে পৌরসভার কর্মচারীদের ৩ মাসের বেতন বাকিসহ বিবিধ সমস্যা ক্রমশ প্রকট হচ্ছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More