দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কালবৈশাখী ও তীব্র বজ্রপাতসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস

চুয়াডাঙ্গাসহ ১৬ জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার: গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হলেও দাপটে রয়েছে তাপমাত্রা। এতে চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের ১৬ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। এই অবস্থায় আজ রোববার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কালবৈশাখী ও তীব্র বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হতে পারে। গতকাল শনিবার রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ভেরিফায়েড আইডি থেকে দেয়া এক পোস্টে এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ। ফেসবুকে দেয়া ওই পোস্টে কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাব্য সময়ের কথাও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো রাজশাহীতে ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিলেটে ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ লিখেছেন, শনিবার রাত ১০টার পর থেকে রোববার সকাল ৮টার মধ্যে দেশের ৮টি বিভাগের উপর দিয়ে তীব্র বজ্রপাতসহ কালবৈশাখি ঝড় অতিক্রমের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। এই সময়ে কালবৈশাখী ঝড় থেকে অনেক তীব্র বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কাও রয়েছে। এই আবহাওয়াবিদ কোন জেলায় কোন সময়ের মধ্যে কালবৈশাখী ঝড় অতিক্রম করতে পারে সেই সময়ও উল্লেখ করে দিয়েছেন তার পোস্টে। রংপুর বিভাগ: সব জেলা রাত ১০টার পর থেকে রাত ৩টার মধ্যে। রাজশাহী বিভাগ: জয়পুরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ রাত ১২টার পর থেকে ভোর ৫টার মধ্যে। ময়মনিসংহ বিভাগ: সব জেলা রাত ১২টার পর থেকে ভোর ৫টার মধ্যে। সিলেট বিভাগ: সব জেলা [রাত ১২টার পর থেকে সকাল ৬টার মধ্যে। ঢাকা বিভাগ: টাঙ্গাইল, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপলাগঞ্জ, শরীয়তপুর রাত ১২টার পর থেকে সকাল ৬টার মধ্যে। খুলনা বিভাগ: দক্ষিণ দিকের বেশিভাগ জেলা যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল রাত ১২টার পর থেকে ভোর ৫টার মধ্যে। বরিশাল বিভাগ: দক্ষিণ দিকের বেশিভাগ জেলা বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী রাত ২টার পর থেকে সকাল ৮টার মধ্যে। চট্টগ্রাম বিভাগ: কুমিল্লা, চাঁদপুর, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্রগ্রাম, খাগড়াছড়ি রাত ২টার পর থেকে সকাল ১০টার মধ্যে।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় টানা কয়েকদিন ধরে চলছে প্রচ- তাপপ্রবাহ। তীব্র গরমে নাকাল হয়ে পড়েছে জেলার সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছেন খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ। তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়ছে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের উপরেও। টানা পাঁচদিন ধরে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে তীব্র তাপপ্রবাহ। গতকাল শনিবার বেলা ৩টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান। তিনি জানান, চুয়াডাঙ্গায় মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ প্রবাহিত হচ্ছে। বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেশি থাকায় গরমের তীব্রতা আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনও একই অবস্থা বিরাজ করতে পারে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বৃহস্পতিবার ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শুক্রবার ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রখর রোদ ও দাবদাহে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। জীবিকার তাগিদে রোদ উপেক্ষা করে রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারে ভ্যানচালক কবির বলেন, গরমে হাঁসফাঁস লাগছে। কিন্তু ভ্যান না চালালে বাসা-পরিবার চালাব কীভাবে? রোদে থাকলে শরীরের পানি শুকিয়ে যায়। দিনমজুর সুজন জানান, কাজ বন্ধ রাখলে আয় হবে না। আবার কাজে গেলেও মনে হয় শরীর আগুনে পুড়ছে। দুপুরের পর কাজ করা খুবই কষ্টকর হয়ে যায়। তবুও পেটের দায়ে নামতে হচ্ছে। কুলি হামিদ বলেন, স্টেশনে মাল টানতে হচ্ছে। এত গরম যে, ৫ মিনিট কাজ করলে মনে হয় সারা শরীর আগুন হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পরপরই বিশ্রাম নিতে হয়। পথচারী শাহীন বলেন, দুপুরে রাস্তায় চলাই যায় না। কয়েক মিনিট হাঁটলেই শরীর ঘেমে ভিজে যায়, মাথা ঘুরে। কিন্তু প্রয়োজনে বের হতেই হয়। এমন গরম আগে কবে লাগছে মনে পড়ে না। এই অস্বাভাবিক আবহাওয়ায় শুধু নিম্নবিত্ত নয়, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগও চরমে পৌঁছেছে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। হাসপাতালগুলোতে হিটস্ট্রোক, পানিশূন্যতা ও ঘামজনিত সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলেও জানা গেছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More