শ্বশুর বাড়ি নয় বিদ্যালয়ে ফিরলো কিশোরী : পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন ওসি

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেয়েছে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। গতকাল শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শ্বশুরবাড়ির পরিবর্তে ওই শিক্ষার্থীকে আবারও স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। সবার পছন্দের এই ছাত্রী বইখাতা নিয়ে শনিবার ফিরে যায় উপজেলার সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। পড়াশোনা ও সহপাঠীদের সঙ্গে হইহুল্লোড় করে কাটিয়েছে আনন্দময় দিন। সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত মেয়েটির বিয়ে ঠেকানোর পাশাপাশি পড়াশোনার খরচ বহনের দায়িত্ব নিয়েছেন। ছাত্রীর দরিদ্র অভিভাবকেরা এতে খুব খুশি।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়া ছাগলাপাড়ার বাসিন্দা ওই কিশোরীর স্বজনেরা গত শুক্রবার দুপুরে বিয়ের আয়োজন করেন। প্রস্তুতিও প্রায় শেষ দিকে ছিলো। অপেক্ষা শুধু বরসহ বরযাত্রী আগমনের। বর এলেই বধূর সাজে কিশোরীকে ছুটতে হবে শ্বশুরবাড়িতে। কিন্তু বরযাত্রী পৌঁছানোর আগেই সেখানে সদর থানার ওসিসহ একদল পুলিশ গিয়ে হাজির হয় কিশোরীর বাড়িতে। পুলিশ পৌঁছানোর খবর পেয়ে বরপক্ষ আর আসেনি। ওসি মোহাম্মদ মহসীন কিশোরীর অভিভাবকদের বুঝিয়ে বাল্যবিয়ের হাত থেকে মেয়েটিকে রক্ষা করেন। ১৪ বছরের দুরন্ত কিশোরী। পড়াশোনায় যেমন মেধাবী, খেলাধুলাসহ সহশিক্ষায় পুরস্কারের তালিকাও দীর্ঘ। নবম শ্রেণির এই ছাত্রী বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহপাঠীদের নয়নের মণি।
কিশোরীর অভিভাবকেরা ওসিকে জানান, পড়াশোনা করতে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের ভাড়া, পোশাক ও বইখাতা কেনা এবং প্রাইভেট পড়াসহ স্কুলের নানান ফিসের জন্য টাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাবার আর্থিক সচ্ছলতা নেই। যে কারণে নবম শ্রেণিতে ওঠার পর মেয়েটির পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো।
এদিকে বাল্যবিয়ে বন্ধের পর সকালে ওসি মোহাম্মদ মহসীন সীমান্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসাম্মাত মেহেজাবীনকে নিয়ে গাড়াবাড়িয়া গ্রামের ছাগলাপাড়ায় কিশোরীর বাড়িতে যান। কিশোরীর অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনার যাবতীয় খরচ বহনের দায়িত্ব নেন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যালয়ের সব ফিসসহ সম্ভাব্য খরচ প্রধান শিক্ষকের হাতে তুলে দেন ওসি।
ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, ওই কিশোরীকে নিশ্চিত বাল্যবিয়ে ও ঝরে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মানবাধিকারকর্মী মানি খন্দকারের তথ্যের ভিত্তিতে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা হয়। এরপর মানবিক কারণে কিশোরীকে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ উপহার দিতে পড়াশোনার যাবতীয় খরচ বহনের দায়িত্ব নিই।’ এ সময় সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছাম্মৎ মেহেজাবিন, স্থানীয় ইউপি সদস্য জিন্না আলী, মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার, চুয়াডাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ ইমরান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More