প্রচার-প্রচারণা শেষ : দর্শনা পৌর নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

আজ কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হবে ভোটের সরঞ্জাম

হারুন রাজু/হানিফ ম-ল: আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে তৃতীয় ধাপের দর্শনা পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন। গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা। আজ শুক্রবার দুপুরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হবে ভোটের সরঞ্জাম। দর্শনা পৌরসভায় মোট ভোটারের সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৭ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ৫৭১ ও নারী ১৩ হাজার ৯৪৬ জন। এবারের নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে ১৬ টি ভোটকেন্দ্রে ৮২টি বুথে গোপন ব্যালোটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোটকেন্দ্রসহ সর্বস্থানে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে থাকছে পুলিশের একাধিক বিশেষ টিম। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে স্থানীয় প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে বলে চুয়াডাঙ্গা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা তারেক আহমেমদ জানিয়েছেন। তিনি জানান, নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ও অতিগুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শুক্রবার বেলা ১১টার মধ্যে সকল ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সব ধরনের সরঞ্জাম প্রিসাইটিং অফিসারের মাধ্যমে পৌঁছুনো হবে। ভোট গ্রহণের কিছুক্ষণ আগে ব্যালেট পেপার নেয়া হবে ভোটকেন্দ্রে। আগামীকাল শনিবার ভোটগ্রহণ শুরু হবে সকাল ৮টা থেকে। বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ও আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ৯টি ওয়ার্ডে ৯জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে। ভোট কেন্দ্রগুলোতে থাকবে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। মাঠপর্যায়ে সার্বক্ষণিক মহড়া দিতে থাকছে ৩ প্লাটুন বিজিবি ও ২ প্লাটুন র‌্যাব। এছাড়া দর্শনা অডিটোরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্বাচনী কন্ট্রোল রুম হিসেবে ব্যবহার করা হবে। সেখান থেকেই নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
জানা গেছে, দর্শনা পৌরসভার ৬ষ্ঠ এ নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী করছেন আ.লীগ মনোনীত পরপর তিনবারের নির্বাচিত মেয়র মতিয়ার রহমান। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন বিএনপি মনোনীত সাবেক ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রহমান বুলেট। এছাড়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে মোবাইলফোন প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন জামায়াত নেতা আশকার আলী। গত ১৪ ডিসেম্বর দর্শনা পৌরসভা নির্বাচনী তফসিল করা হয়। মাস দুয়েক আগে থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে নিরব প্রচারণা দেখা গেলেও তা প্রকাশ্যে রূপ নেয় তফসিল ঘোষণার পর। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ৩১ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়ার শেষ দিন ছিলো। শুরু থেকে দর্শনা পৌর মেয়র প্রার্থী হিসেবে ডজন খানেক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও শেষ অবধি ৩জন প্রার্থীতে এসে দাঁড়িয়েছে। এবারের নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে ১৬টি ভোটকেন্দ্রে ৮২টি বুথে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। ৩ জুলাই প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা নির্বাচন অফিসে। যাচাই-বাছাই পর্বে মেয়র ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে কারো মনোনয়ন বাতিল না হলেও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। বাতিলকৃত প্রার্থী ৪নং ওয়ার্ডের মামুন হোসেন।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচন অফিসসূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ প্রকাশিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী দর্শনা পৌরসভায় মোট ভোটারের সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৭ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ৫৭১ ও নারী ১৩ হাজার ৯৪৬ জন। এ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে আম্বিয়া খাতুন ফুট্টরি (আনারস) ও বিলকিস খাতুন (চশমা)। ৪, ৫ ও ৭নং ওয়ার্ডে জাহানারা খাতুন (চশমা) ও শিউলী আক্তার (আনারস) ৬, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে সুরাতন নেছা (আনারস), সেলিনা পারভিন (চশমা), ফাহিমা খাতুন (টেলিফোন), ও শাহিমা বেগম (জবাফুল) প্রতীকে ভোটযুদ্ধে মাঠ চষছেন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১নং ওয়ার্ডে ৩ হাজার ৫৫ ভোটার, প্রার্থী হাসান খালেকুজ্জামান (পানির বোতল), আনোয়ার হোসেন দুলু (গাজর), নাসির উদ্দিন খেদু (উটপাখি) ও আজিজুর রহমান সুজন (ব্রিজ), ২নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৩৬৯জন, প্রার্থী এনামুল কবির (পাঞ্জাবি), আব্দুল কুদ্দুস (টেবিল ল্যাম্প) ও সোহেল রানা মহিউদ্দিন (উটপাখি), ৩নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ১২১জন, প্রার্থী রবিউল হক সুমন (উটপাখি), আনোয়ারুল ইসলাম দোলন (টেবিল ল্যাম্প) ও শহিদুল ইসলাম (ব্লাকবোর্ড), ৪নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ১১০জন, প্রার্থী মনির সরদার (ব্রিজ), আব্দুর রাজ্জাক (উটপাখি), হাবিবুল্লাহ বাহার (ব্লাকবোর্ড), রফিকুল ইসলাম (পাঞ্জাবি) ও সোহেল মিয়া টেবিল ল্যাম্প), ৫নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ১০৯জন, প্রার্থী নজরুল ইসলাম (পাঞ্জাবি) লুৎফর রহমান (পানির বোতল), লাল্টু খান (ব্রিজ), আব্দুল মিয়া (টেবিল ল্যাম্প), রাজিবুল ইসলাম (উটপাখি) ও সাইফুল ইসলাম (ডালিম), ৬নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ২৩জন, প্রার্থী রেজাউল ইসলাম (পানির বোতল), হারুন অর রশিদ (উটপাখি) ও কামরুল হুদা টেবিল ল্যাম্প), ৭নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৪৬৫জন, প্রার্থী কানচু মাতবর (উটপাখি), আয়নাল হক (পানির বোতল), মোস্তাফিজুর রহমান (ডালিম) ও সাবির হোসেন মিকা (পাঞ্জাবি), ৮নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৪৪৪জন, প্রার্থী চান্দু মাস্টার (পানির বোতল), বাবুল আক্তার (ডালিম), শরিফ উদ্দিন টেবিল ল্যাম্প), বিল্লাল হোসেন (উটপাখি) ও নাসির উদ্দিন (পাঞ্জাবি), ৯নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৯২৮জন, প্রার্থী মঈনুদ্দিন মন্টু (গাজর), বাবলুর রহমান (পাঞ্জাবি), আশুর উদ্দিন (উটপাখি), আজিজুল হক (ডালিম), সাইদুর রহমান (পানির বোতল) ও জাহাঙ্গীর আলম (টেবিল ল্যাম্প) প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে মাঠে রয়েছেন। এবারের নির্বাচনে আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী মতিয়ার রহমান রহমানের নৌকা প্রতীকের পক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান আলি মুনছুর বাবু, আ.লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ ভোটার-সমর্থকরা ব্যাপক-উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথেই মাঠে রয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হাবিবুর রহমান বুলেটের ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে দলের কোন নেতৃবৃন্দকে এ পর্যন্ত মাঠে দেখা যায়নি। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আশকার আলীর মোবাইলফোন প্রতীকের পক্ষে জামায়াত-শিবিরের নেতৃবৃন্দকে প্রচারণা দেখা মিলেনি। এখন শুধু অপেক্ষার পালা কে কে হাসবেন বিজয়ের হাসি, গলে পরবেন ফুলেল মালা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More