বাড়ি লকডাউন আর আক্রান্তরা হাট বাজারে

গাংনী প্রতিনিধি: গাংনী উপজেলায় করোনা ভাইরাস পজিটিভ রোগীর সংখ্যা এখন ২০৩ জন। তবে কোনটি করোনা আক্রান্ত বাড়ি আর কোনটি সাধারণ বাড়ি দেখে বোঝার উপায় নেই। নেই কোন লকডাউনের চিহ্ন। সবাই একসাথে চলাফেরা করছেন। নিয়মিত করছেন নিত্যদিনের কেনাকাটা। ফলে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। স্বাস্থ্য কর্মীরা করোনাক্রান্তদের বাড়িতে খোঁজখবর নিতে গেলে নানা বিড়ম্বনার মুখে পড়লেও উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী এক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। তবে প্রশাসন বলছে নিয়মানুযায়ী সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সরকারি নির্দেশনা পালনে মানুষ ও যানবাহন চলাচল এবং দোকানপাট বন্ধের বিষয়ে কঠোরতা থাকলেও করোনা আক্রান্তদের অবাধে চলাফেরার সুযোগ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কি পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে তা নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে। লকডাউন ঘোষণা আর বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার? এমন প্রশ্নের জবাবে মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা: নাসির উদ্দীন বলেন, প্রশাসন ও পুলিশ অবশ্যই এগুলো বাস্তবায়ন করবে। আমাদের সাথে সমন্বয় নেই তা নয়। করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মীরা খোঁজ খবর নিচ্ছেন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছেন।
জানা গেছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী গণপরিবহন ও দোকানপাট বন্ধ। সীমিত করা হয়েছে মানুষ চলাচল। আর ভিড় ও গণজমায়েতসহ সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় এমন কর্মকা- বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ও পুলিশের টহল জোরদার রয়েছে। প্রতিদিন সকালে স্বাস্থ্য কর্মীরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের নির্দেশে করোনা ভাইরাস পজিটিভ রোগীদের বাড়িতে লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে দিচ্ছেন। এসময় তারা ওই পরিবারের সদস্যদের বিরাগভাজন হচ্ছেন আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে গালমন্দ হজম করতে হচ্ছে। পজিটিভ রোগীর বাড়ির লোকজন তাদেরকে মারধর করতেও উদ্যত হচ্ছে। এত কিছু সহ্য করেও স্বাস্থ্যকর্মীরা পতাকা টানিয়ে দিচ্ছেন এবং পরবর্তীতে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবার ওষুধ দিয়ে আসছেন। এক্ষেত্রে প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা না থাকায় মাঠ পর্যায়ে চরম বাধার শিকার হচ্ছেন এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা।
এখন প্রশ্ন উঠেছে যে, করোনা ভাইরাস পজিটিভ ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যরা যদি সাধারণ চলাফেরা করে তাহলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। সংক্রমক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন অনুযায়ী কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না? এমন প্রশ্ন এখন দায়িত্বশীল অনেক মানুষের মুখেই। শুধুমাত্র সচেতন করে নয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনের কঠোর প্রয়োগ না থাকলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, যারা করোনাক্রান্ত হচ্ছেন ওই পরিবারের লোকজন লাল পতাকা নামিয়ে রাখছেন। প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কোনো তদারকি না থাকায় তারা বেপরোয়া চলাফেরা করছেন।
জানা গেছে, গেলো সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন গাংনীর শিশিরপাড়া গ্রামের গৃহবধু কোহিনুর বেগম। মরদহে কিভাবে দাফন করতে হবে আর কেমনভাবে ওই পরিবারের লোকজন স্বাস্থ্যবিধি মানবে সে ব্যাপারে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কেউ তদারকি করেনি। ফলে বিপুল সংখ্যক আত্মীয় স্বজন ও গ্রামের মানুষ ওই বাড়িতে ভিড় করেছেন আর দাফন-কাফন কাজে অংশ নিয়েছেন।
এদিকে একই সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাঁশবাড়িয়া গ্রামের গৃহবধু জাহানারা। সাধারণ মানুষের মতই দাফন কাফন করা হয়েছে। বাড়িতে আসছেন আত্মীয় স্বজন। নিজেরাও প্রতিবেশীদের সাথে ভাব আদান প্রদান করছেন। হাট বাজারে যাচ্ছেন নিয়মিত। এতে কোন কোন বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে না বলে জানালেন জাহানারা স্বামী হায়দার আলী।
মটমুড়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ জানান, মটমুড়া গ্রামের আব্দুল হান্নান করোনাক্রান্ত হয়ে মারা যান গেল মাসে। কোনো নির্দেশনা না থাকায় মরদেহ দাফন নিয়ে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।
সীমান্তবর্তী তেতুঁলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার ইউনিয়নের তেঁতুলবাড়ীয়া ও হিন্দা গ্রামে উদ্বেগজনকহারে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া লকডাউন ঘোষণা করে প্রশাসন। কিন্তু কোনভাবেই তা মানানো যায়নি। সাধারণ মানুষের সাথে আলাপকালে বিভিন্ন ক্ষোভ জানিয়েছেন তারা। তাদের দাবি, ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশের চলমান অভিযান যদি করোনা আক্রান্তদের বাড়ির দিকে নজর দেয় তাহলে সব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
গাংনী থানার ওসি বজলুর রহমান জানান, করোনা প্রতিরোধ লকডাউনের কারণে প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য সবসময় পুলিশের একটি টিম প্রস্তুত থাকে। স্বাস্থ্য বিভাগ বা প্রশাসন ডাকলেই ওই টিম তাদের সাথে কাজ করবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম জানান, করোনা আক্রান্ত পরিবারের লকডাউন বা বিধি নিষেধ আরোপসহ সব ব্যাপারে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More