ভাইস চেয়ারম্যান সহিদুলের কিলঘুষিতে পীরপুরকুল্লার বৃদ্ধ ইসরাফিল নিহত : প্রধান অভিযুক্ত ভাইস চেয়ারম্যান গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের ধাক্কা ও কিলঘুষিতে ইসরাফিল মোল্লা নামের রোজাদার এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। জমি নিয়ে বিরোধের সালিস শেষে বের হওয়ার সময় তাকে কিল-ঘুষি মারেন ভাইস চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলাম। ইসরাফিল হোসেন অসুস্থ হয়ে পড়লে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। নিহত বৃদ্ধ ইসরাফিল মোল্লা উপজেলার পীরপুরকুল্লা গ্রামের মৃত জোনাব আলী ম-লের ছেলে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে দামুড়হুদা মডেল থানার গেটে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দামুড়হুদা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ওরফে টুপি সহিদুলকে আটক করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে জেলাজুড়ে সব মহলেই তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আটক সহিদুল ইসলাম দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দামুড়হুদা বাজারপাড়ার আশর আলীর ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের নাতি আল আমিন মোল্লা বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার প্রধান আসামি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে।

ভা্হিইস চেয়ারম্দুযান শহিদুল মোল্লার ফাইল ছবি

আজ শনিবার তাকে আদালতে সোর্পদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত ইসরাফিল মোল্লার চাচাতো ভাই নস্কর আলী মোল্লা জানান, আমার ভাই ইসরাফিল মোল্লার সাথে প্রতিবেশী শমসের আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম, আব্দুল ওহাব ও লিয়াকত আলীর সাথে পাঁচকাঠা জমি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছিলো। বিষয়টি নিয়ে ইসরাফিল মোল্লা থানায় একটি অভিযোগ করেন। নজরুলরাও পাল্টা অভিযোগ করেন। শুক্রবার দুপুরে সালিস বৈঠকে মীমাংসার জন্য দুইপক্ষকেই থানায় ডাকেন দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি। সালিস বৈঠকে নজরুলদের পক্ষ নিয়ে আসেন দামুড়হুদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আবু তালেব।
নস্কর আলী আরও বলেন, পরে থানা থেকে বের হওয়ার সময় প্রতিপক্ষ নজরুল, ওহাব ও লিয়াকত আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করে। একপর্যায়ে তারা আমাকে ও আমার নাতি আল আমিনকে মারধর করেন। তারা আমাদের মারতে মারতে থানার গেট পর্যন্ত নিয়ে যায়। এ সময় আমাদেরকে ঠেকাতে এলে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলাম আমার ভাই ইসরাফিলকেও মারধর করেন। চেয়ারম্যানের কিল-ঘুষিতে ইসরাফিল রাস্তার ওপর পড়ে যান। তাকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আমার ভাই রোজায় ছিলেন, বাড়ি গিয়ে তার ইফতার করা হলো না। আমি অভিযুক্তের শাস্তি চাই।
আতারুল মোল্লার বড় ছেলে আল আমিন মোল্লা জানান, জমি বিরোধের মীমাংসার জন্য আমার দাদা বৃদ্ধ ইসরাফিল মোল্লা (৮০) গং ও নজরুল মোল্লা গং দুপুরে থানায় উপস্থিত হন। পরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলাম থানায় উপস্থিত হয়ে নজরুল মোল্লার পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু শেষমেষ বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় বেলা দেড়টার দিকে থানা থেকে বের হয়ে যান ইসরাফিলগং। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ভাইস চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলাম থানার বারান্দাতেই আমার দাদা বৃদ্ধ ইসরাফিল মোল্লাকে গালমন্দ করেন এবং ঘুষি মেরে আহত করেন। বৃদ্ধ ইসরাফিল মোল্লা এ সময় ভাইস চেয়ারম্যানের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি তোমার বাপ বয়সী মানুষ, আমাকে তুমি মারছো কেন? এরপর বৃদ্ধ ইসরাফিল মোল্লা থানা থেকে বেরিয়ে যান।
ইসরাফিল মোল্লার নাতি আল আমিন মোল্লা আরও বলেন, তিনি থানার গেটের বাইরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় ফের আক্রমণ করেন ভাইস চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলাম। এ সময় তিনি বৃদ্ধ ইসরাফিল মোল্লাকে কিল-ঘুষি মেরে ও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এতে আমার চাচা বৃদ্ধ ইসরাফিল মোল্লা গুরুতর আহত হন এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।’
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, থানা চত্বরের গোলঘরে সালিস শেষে বের হওয়ার সময় দুইপক্ষ নতুন করে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। থানা চত্বর থেকে তর্কবিতর্ক শুরু হলেও প্রধান ফটক পার হওয়ার পর তা হাতাহাতিতে পরিণত হয়। ভাইস চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলাম প্রতিপক্ষ ইসরাফিল মোল্লার নাতি আল আমিন মোল্লাকে পেটাতে থাকলে ইসরাফিল বাধা দেন। এ সময় ভাইস চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ হয়ে ইসরাফিল মোল্লাকে কিলঘুষি মারেন। এ সময় গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ইসরাফিল মোল্লা। পরে তাকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত ডা. তানভির মোহাম্মদ আসিফ তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ডা. তানভীর মোহাম্মদ আসিফ জানান, হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা যান ইসরাফিল। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ বৃদ্ধ ইসরাফিল হোসেন ম-লের লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
তবে ভাইস চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলামের দাবি, বৃদ্ধ ইসরাফিল মোল্লাকে তিনি কোনো আঘাত করেননি। অল্প বয়সী একটি ছেলের সঙ্গে তর্কবিতর্ক ও হাতাহাতি হয়েছিলো মাত্র।
দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আলি মুনছুর বাবু বিষয়টি নিয়ে প্রথমে কোনো মন্তব্য করতে না চাইলেও পরে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। যেহেতু এখন এটি আইনের বিষয় তাই আমার কোনো মন্তব্য নেই। সবকিছু আইন অনুযায়ী হবে।’
দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। তবে, এ বিষয়ে এখনো কোনো দলীয় নির্দেশনা পাইনি।’
এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল খালেক জানান, নিহতের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সদর হাসপাতালমর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর অভিযুক্ত ভাইস চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের নাতি আল আমিন মোল্লা বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আজ শনিবার তাকে আদালতে সোর্পদ করা হবে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More