ভারত থেকে চিকিৎসা শেষে দীর্ঘ ৫ মাস পর আলমডাঙ্গায় ফিরলেন টিলু ওস্তাদ নেতাকর্মীর ভালোবাসায় সিক্ত রাজনীতির হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালা

রহমান মুকুল: শুধু একটি মানুষ ফিরেছেন বলে রেলস্টেশন হয়ে ওঠে রথের মেলা? হ্যাঁ, এটাই আলমডাঙ্গা। আর সেই মানুষটির নাম শহিদুল কাউনাইন টিলু ওস্তাদ। আলমডাঙ্গা জনপদের গণমানুষের ভালোবাসার জারক রসে জারিত টিলু ওস্তাদ। আলমডাঙ্গার হৃদয়জুড়ে লেখা নাম শহিদুল কাউনাইন টিলু ওস্তাদ। বিএনপির রাজনীতিতে তিনি একজন নামমাত্র নেতা নন, বরং দু’তিনটি প্রজন্মের প্রেরণা, নতুন প্রজন্মের আস্থার প্রতীক। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে গতকাল সোমবার দুপুরে ভারতের ভেলোর থেকে ফিরে এলেন এই সর্বজনশ্রদ্ধেয় নেতা। দুপুরে সুন্দরবন এক্সপ্রেস যখন আলমডাঙ্গা স্টেশনে থামে, তখন কেবল একটি ট্রেন থামেনি থেমেছে আবেগ, থমকে দাঁড়িয়েছে ভালোবাসা, জমে উঠেছে এক জনপদের হাজারো প্রতীক্ষা। চিকিৎসা শেষে দীর্ঘ ৫ মাস পর ভারত থেকে ফিরে এসেছেন আলমডাঙ্গা বিএনপির কিংবদন্তি নেতা, জনপ্রিয়তার শিখরে আরোহী সেই মানুষটি যাকে সবাই “ওস্তাদ” বলে ডাকে, ডাকে বুক ভরে, চোখ ভিজিয়ে। রেলস্টেশনের দুই পাশে প্রশস্ত প্ল্যাটফর্ম, নিচ চত্বর এবং চৌরাস্তা জনস্রোতে পরিণত হয়েছিলো। হাজারো নেতাকর্মীর ঢল-কেউ হাতে ফুল, কেউ চোখে জল, কেউ শুধু একবার চেয়ে থাকেন প্রিয় নেতার মুখখানি দেখতে। সুন্দরবন এক্সপ্রেস থামার আগে থেকেই কানায় কানায় ভরে উঠেছিল আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের দুই পাশের প্ল্যাটফর্ম, নিচের চত্বর এবং সংলগ্ন চৌরাস্তা। সব দিক থেকে ছুটে আসা মানুষের ঢল এসে মিলিত হয় স্টেশন মোহনায়-যেন একটি জনসমুদ্রের মিলনস্থল। একটিবার প্রিয় নেতাকে দেখতে, তার কণ্ঠ শুনতে, তার পাশে দাঁড়াতে হাজার হাজার নেতাকর্মী যেন ছুটে এসেছে হৃদয়ের দিগন্ত ছুঁয়ে। টিলু ওস্তাদ নন, যেন এই জনপদের পিতৃপুরুষ ফিরলেন দীর্ঘ নির্বাসন শেষে। তার জন্য দীর্ঘশ্বাস জমা রেখেছিল বাতাস। — এমন এক মৌন স্তুতি আলমডাঙ্গার আকাশে ছড়িয়ে পড়ে। টিলু ওস্তাদ ছিলেন না এমপি, না ছিলেন মন্ত্রী। তবু তিনি হয়েছেন “জনতার প্রতিনিধি”। তার পরিচয় ছিলো না হুইপ, চেয়ারম্যান কিংবা কমিশনার হিসেবে, তার পরিচয় ছিলো, “আমি তোমাদেরই লোক।” দলীয় রাজনীতিতে বিরোধী অবস্থানেও জনপ্রিয়তার ব্যতিক্রমী ছায়াবৃক্ষ হয়ে ওঠেন টিলু ওস্তাদ। বিএনপি যখন ক্ষমতায়, তখনো তিনি ছিলেন ‘ক্ষমতার বাইরে নীরব প্রতিবাদী’; বিএনপি যখন দুর্দিনে, তখন তিনি ছিলেন ‘দলের পাশে দুর্বার প্রতিরোধী’। এই সেই টিলু ওস্তাদ, যিনি রাজনীতির ক্ষমতার আলোতে গা সেঁকাননি কখনো। বরং থেকেছেন সাধারণের পাশে, দাঁড়িয়েছেন মেহনতি মানুষের পক্ষে। ক্ষমতার সুযোগ এলে মুখ ফিরিয়েছেন, কিন্তু বিপদের দিনে নেতা হয়ে বুক পেতে দিয়েছেন। এই সরল, সৎ ও সাহসী মানুষটি অসুস্থ হয়ে ভারতে চিকিৎসাধীন ছিলেন বেশ কয়েকমাস। এই সেই টিলু ওস্তাদ-যিনি একাধারে “রাজনীতির হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালা”, “বিরোধীতার সৌন্দর্যে ভাস্বর এক ব্যতিক্রমী পথিক”, “মানবিকতার ছায়াবৃক্ষ”, এবং “ভোটের মাঠে নির্ভরতার অন্য নাম”। তিনি ছিলেন ক্ষমতার কাছে নয়, মাটির কাছাকাছি। তিনি ছিলেন চেয়ার-পদের প্রতি উদাসীন, কিন্তু মানুষের ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। বিদেশ যাওয়ার আগে তার বাড়ি যেন এক আশীর্বাদপ্রার্থী তীর্থস্থান হয়ে উঠেছিলো। প্রতিদিন বহু মানুষ শুধু একবার চোখে চোখ রাখতে ছুটে এসেছিলেন। ডাক্তারের নিষেধ সত্ত্বেও তিনি সবার সাথে গল্পে-আলাপে সময় কাটাতেন, নাম ধরে ডাকতেন যেনো আজীবনকার আত্মীয়। চিকিৎসাকালে হাসপাতালের বিছানায় থেকেও এলাকা থেকে কারা চিকিৎসার জন্য ভারতে গেছেন, কে কখন ফিরবেন এসব তার কাছে মুখস্থ। যেন এক রাজনৈতিক নেতার চেয়ে বড় হয়ে ওঠেন “একটা জনপদের স্মৃতিবাহী পারিবারিক মানুষ”। আজ সেই মানুষটি ফিরে এসেছেন। আলমডাঙ্গা তাকে স্বাগত জানিয়েছে ভালোবাসায়, করতালিতে, অশ্রুতে। তাকে ভালোবেসে-শ্রদ্ধায় নিবেদন করেছেন আন্তরিকতার অশ্রুত গান্ধার, হৃদয়ের পরিশুদ্ধ সৌরভ। তিনি যখন ফিরে এলেন, তখন আবেগে কেঁপে উঠল পুরো জনপদ। স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা নেতাকর্মীদের চোখে জল, হাস্যোজ্জ্বল মুখ, করতালি। প্রিয় নেতা গাড়ির দরজা থেকে বের হয়ে হাসিমুখে হাত নাড়াতেই মানুষের হৃদয় থেমে গেল একটুখানি। তিনি বলেন, “তোমরা কেউই আমাকে একা ফেলে দাওনি। এতদিন আমার জন্য যে দোয়া করেছো, যে ভালোবাসা পাঠিয়েছো, পরম দয়ালু আল্লাহ তায়ালা তা-ই আমাকে সুস্থ করে দেশে ফিরিয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ-আমি এই জনপদেরই লোক।” বিপুল এই ভালোবাসার স্রোতকে সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় বিএনপির বিদ্রোহী কমিটির অপর দুই শীর্ষ নেতা শেখ সাইফুল ইসলাম ও আসিরুল ইসলাম সেলিমকে। আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিরুল ইসলাম সেলিম বলেন, “টিলু ভাই ফিরেছেন মানে শুধু একজন ব্যক্তি নয়, একটি যুগ, একটি নীতির ফেরা। আমরা আজ নতুন ভরসা পেলাম।” উপজেলা বিএনপির আরেক সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলাম বলেন, “ওস্তাদ হলেন সেই বাতিঘর, যে আলো দেন, অথচ নিজে গোপনে থাকেন।” এক তরুণ ছাত্রদল কর্মী বলছিলেন, “আমার বাবারও নেতা ছিলেন টিলু ভাই, আজ আমি নিজেও ওনার হাত ধরে চলছি। ওস্তাদ একদিনের নয়, প্রজন্মের সম্পদ।” এছাড়াও, অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ইফতেখারুজ্জামান খান লুডু, উপজেলা কৃষকদলের সাবেক সভাপতি বোরহান উদ্দিন, বিএনপি নেতা মাহমুদুল কাউনাইন, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান, সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ডা. আলা উদ্দিন, সাবেক কাউন্সিলর নাসির উদ্দিন, পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হক, ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সোনা, জেলা যুবদলের সহসভাপতি মাগরিবুর রহমান, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের মধ্যে মহিনুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন, আব্দুল ওহাব মাস্টার, ইউনুস আলী, আব্দুল হালিম, তোজাম্মেল হোসেন, সাহিবুল ইসলাম সন্টু, আক্তার হোসেন, আব্দুল হান্নান, জমির উদ্দিন, ডা. আক্তারুজ্জামান, মফিজ উদ্দিন, লিয়াকত আলী, রফি মেম্বার, জহুরুল, আলিহীম মেম্বার, নওজেস, খাকছার, লিয়াকত মেম্বার, মমতাজ, আব্দুল মজিদ, চান্দ আলী, শরিফ, হাবিবুর, ডাবলু, আজিমদ্দিন, হ্যাবা, ইউনুস, কাতব, ঝন্টু মিয়া, আব্দুল গণি, আজিজুর, ফজলু, আব্দুল মালেক, ওয়াহেদ, জাইদুল, শমসের আলী, রেজা, ডা. শাজাহান, মন্টু, রবজেল, হায়দার, ঠান্ডু, সিতাব, শওকত, রশিদুল ইসলাম, শুভ, উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. আশরাফুল আলম (ডালিম), নাসির উদ্দিন, ভাংবাড়িয়া ৯ ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি আমিরুল ইসলাম, সদস্য হযরত আলী, উকিল মিয়া, মজিবর রহমান, ঝন্টু, হেলাল, জাহাঙ্গীর, যুবদলের সদস্য সুন্নত আলী, যুবদলের পান্না চৌধুরী, চিনির উদ্দিন, প্রভাষক আব্দুস সাত্তার, বিল্লাল মাস্টার, মুকুল, শমসের আলী, আশরাফুল, আব্দুস সালাম, মনিয়ার ডাক্তার, শফিকুল আজম ডালিম, রহিদুজ্জামান রহিত, শরিফুল ইসলাম মেম্বার, আব্দুল্লাহ আল মামুন, ফারুকুজ্জামান ফারুক, শেখ উজ্জল, গাউসুল কাওনাইন সুষম, হাসান, হযরত, মিশকা, জাফফার মনা, আব্দুস সালাম, সুলতানুল আরেফিন তাইফু, সাদ্দাম, শাকিল, লিটন, সেলিম, কালাম, আজাদ, বকুল, রিমন, ইলিয়াস, ময়েন, সালাম, হাসান, মন্টু, স্বেচ্ছাসেবক দলের জেড এম তৌফিক আজিজ খান, সোহেল রানা, রাসেল, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের মিঠু বিশ^াস, রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি কায়সুল কাউনাইন রুবেল, আলমডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক সামিউল হাসান সানী, উপজেলা ছাত্রদল নেতা শামীম রেজা সাগর, লিটন আলী, লিখন, রাশেদ, জাহিদ হাসান, সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক আশিকুর রহমান আশিক, আকরাম, ফিরোজ, বাধন, আকাশ, স্বপ্নীল, সবুজ, সুমন, ইউসুফ, জাহাঙ্গীর, রাসেল, অনিক, শিপন, চান মিয়া, শামীম, চপল, জাহিল, ফয়সাল, আইনাল, শহিদ, সাব্বির, উপজেলা ও পৌর বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজারও নেতাকর্মী ও সাধারণ জনতা।ফেরার পর বিশাল মোটরসাইকেল র‌্যালি তাকে নিয়ে যায় তার চিরচেনা বাবুপাড়ার বাড়িতে। পথে পথে সেøাগানে সেøাগানে উচ্চারিত হয় তার নাম “টিলু ভাই” “আমাদের ওস্তাদ” “জনতার নেতা” শেষ কথা? না, শেষ নয়। কারণ, এই ফিরে আসা শুধুই একটি ট্রেনযাত্রার পরিসমাপ্তি নয়, এ এক ভালোবাসার রাজনীতির প্রত্যাবর্তন। এ এক জনতার হৃদয়ের বিজয়। জীবনের এই পুনরাগমনে রবীন্দ্রনাথ যেন নতুন করে উচ্চারিত হলেন টিলু ওস্তাদের হৃদয়ে, “মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক।”

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More