মহেশপুর সীমান্তের গ্রামে গ্রামে মাদকের অঘোষিত হাট প্রশাসনের নজরদারির অভাবে চোরাকারবারিদের অভয়ারণ্য

স্টাফ রিপোর্টার: সীমান্ত পেরিয়ে আসছে ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা। গ্রামে গ্রামে বসছে মাদকের হাট। বিক্রি করা হচ্ছে খোলামেলা পরিবেশে প্রশাসনের নাকের ডগায়। মাদক এখন আর শুধু শহরের গোপন চত্বরে নয়। পৌঁছে যাচ্ছে প্রত্যন্ত সীমান্ত এলাকার চায়ের দোকান, এমনকি হাট-বাজারে। এভাবেই ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা গ্রামগুলোতে প্রতিনিয়ত বসছে মাদকের অঘোষিত হাট। বিকেল থেকে ভোররাত পর্যন্ত প্রকাশ্যে চলছে বেচাকেনা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব হাট চললেও তাদের তেমন একটা অভিযান চালাতে দেখা যায় না। স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় এসব ব্যবসা আরো জমজমাট হচ্ছে।
তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, সীমান্তে মাদকবিরোধী অভিযানে তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। জানা গেছে, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মধ্যে ৭২ কিলোমিটার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ১২ কিলোমিটার সীমান্তের এপার-ওপার কোনো কাঁটাতার নেই। ফলে কাঁটাতারহীন সীমান্তের ৯টি গ্রাম দিয়ে ভারত থেকে নিয়মিত মাদকের চালান আসছে। এই ৯টি গ্রাম হচ্ছে- মহেশপুরের বাঘাডাঙ্গা, পলিয়ানপুর, যাদবপুর, জুলুলি, শ্যামকুড়, মড়কধ্বজপুর, রায়পুর, কচুয়ারপোতা ও লেবুতলা। এই গ্রামগুলোতে বিকেল থেকে ভোররাত পর্যন্ত বসছে মাদকের অঘোষিত হাট। মাদকের এই হাটগুলো বর্তমানে প্রশাসনের কিছু সোর্স ও রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা নিয়ন্ত্রণ করছেন।
সূত্র জানায়, গেলো বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাদক কারবারিরা মহেশপুর সীমান্তকে মাদকের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। আগে মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে গাঁজা, ফেনসিডিল নিয়মিত আসত। তবে এখন ইয়াবা, হেরোইনের মত মরণঘাতী মাদকদ্রব্য এ সীমান্ত দিয়ে আসছে। মহেশপুর সীমান্ত থেকে এসব মাদক চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বিজিবির যথাযথ নজরদারির অভাবে মহেশপুর সীমান্ত এখন চোরাকারবারিদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সীমান্ত এলাকার এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘বিকেল থেকে আমাদের এলাকায় দামি দামি গাড়ি আসে। এসব গাড়িতে করে মাদকের চালান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যায় কারবারিরা। শুনেছি প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় এসব কাজ চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। স্থানীয়রা এসব নিয়ে প্রতিবাদ করলে তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়। তাই প্রকাশ্যে এ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না।’
জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক গোলক চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। অভিযানে মাদক জব্দ করাসহ কারবারের সঙ্গে জড়িতদের আটক করে শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় মাদক পাচার বিরোধী বিভিন্ন কর্মশালাসহ প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’
মহেশপুর ৫৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল আলম বলেন, ‘ভারত থেকে আসা মাদকের ছোট-বড় সব চালান আমরা আটক করছি। এমনকি বাস-ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালিয়ে মাদক জব্দ করা হচ্ছে। গত সাত মাসে আমরা অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৫ কোটি টাকার মাদক জব্দ করেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘সীমান্তের সুরক্ষার পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্সনীতি অবলম্বন করছি। বিজিবির কোনো সদস্য মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিগগিরই মহেশপুর সীমান্ত এলাকাকে পূর্ণাঙ্গভাবে মাদকমুক্ত করা হবে।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More