মামলায় হেরেও মুজিবনগরে সরকারি জমিতে অবৈধ বসবাস ও স্থাপনা নির্মাণ

দখলদার ফিত্তাজ মল্লিক গংদের উচ্ছেদে এলাকাবাসীর আদালতে মামলা
মেহেরপুর অফিস: দুইবার মামলায় হেরেও সরকারি জমিতে অবৈধভাবে বসবাস ও স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার মানিকনগর গ্রামের মৃত নফর মল্লিকের ছেলে মো. ফিত্তাজ মল্লিক ও মৃত আবুল হোসেন মল্লিকের ওয়ারিশগণ। তারা সরকারি খাস খতিয়ানের ওই জমি আকড়ে ধরে থাকার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে সরস্বতী খাল সংলগ্ন খাস খতিয়ানের ওই ১৭ শতক জমি ছেড়ে দেয়ার জন্য ফিত্তাজ মল্লিক ও মৃত আবুল হোসেন মল্লিকের ওয়ারিশগণকে অনুরোধ করার পরও কাজ না হওয়ায় এলাকার একাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ ১৩ জন সচেতন লোক বাদী হয়ে মেহেরপুর বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার নথি হতে জানা যায়, মামলার বাদী হলেন মুজিবনগর উপজেলার মানিকনগর গ্রামের মৃত হিসাব মল্লিকের ছেলে নূরুল ইসলাম, মৃত নাসিরউদ্দিনের ছেলে রফিকুল ইসলাম, মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে বাগোয়ান ইউপির সাবেক ওয়ার্ড সদস্য আক্কাস আলী ও একই গ্রামের বাসিন্দা বাগোয়ান ইউপি সদস্য রোহিত ম-ল, বল্লভপুর গ্রামের নয়ন ম-লের ছেলে আব্দুর রশিদ, মৃত জবেদ মোল্লার ছেলে আব্দুল মোমিন মোল্লা, খুদে সরকারের ছেলে অসিম সরকার, মৃত মুক্তিযোদ্ধা দরুদ আলীর ছেলে আরজ আলী ও মৃত পিরু মল্লিকের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা পটল মল্লিক, নাজিরাকোনা গ্রামের জিয়ার গাইনের ছেলে তাহাজুদ্দিন, শিবপুর গ্রামের মৃত আব্দুস ছাত্তার গাজীর ছেলে আজিমুদ্দিন গাজী, ভবানীপুর গ্রামের মৃত নিহাজ শেখের ছেলে ফিকির সেখ ও রামনগর গ্রামের মৃত গোলাম মোল্লার ছেলে তালেব মোল্লা। তাদের অভিযোগ ভুয়া কাগজপত্র করে সরস্বতী খালের কোদারগঞ্জ বাজারস্থ মেহেরপুর-মুজিবনগর মহাসড়কের ব্রিজের পশ্চিমপাশে ও সরস্বতী খালের উত্তরপাশে কেদারগঞ্জ-নাজিরাকোনা সড়ক সংলগ্ন ১৭ শতক জমি মানিকনগর গ্রামের মৃত নফর মল্লিকের ছেলে ফিত্তাজ মল্লিক ও মৃত আবুল হোসেন মল্লিকের ওয়ারিশগণ জোর দখল করে অবৈধভাবে বসবাস ও স্থাপনা নির্মান করেছেন।
বাদীগণের দাবি মেহেরপুর জেলা ও কালেক্টরের অধীন বর্তমান মুজিবনগর উপজেলার সিএস ৫, ৭ ও ৯ নং খতিয়ানের সিএস ৬১৯ দাগের ৬ একর ২৯ শতক জমির মালিক বাংলাদেশ সরকার। যা আগে থেকে সরস্বতী খাল হিসেবে পরিচিত। এলাকার সাধারণ জনগণ ওই খালের পানি নানাবিধ ব্যবহারসহ উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরে খাবে। এসএ রেকর্ডসহ আরএস রেকর্ডেও ওই জমি সরকারি খাস সম্পত্তি হিসেবে ১ নং খাস খতিয়ানে খাল হিসেবে লিপিবদ্ধ আছে। সরস্বতী খালীটি অদ্যাবধি পূর্ব-পশ্চিম লম্বায় প্রবাহিত হয়ে আসছে। মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কে কেদারগঞ্জ বাজারস্থ ওই খালের উপর নির্মিত ব্রীজের পশ্চিশ-উত্তর সংলগ্ন জেলা পরিষদের আরএস ৮৪২ দাগের এক শতক ও সরস্বতী খালের আরএস ৭০২ দাগের ১৬ শতক জমি বিবাদী পক্ষ অবৈধ দখলে নিয়ে বিগত কয়েক বছরে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এছাড়া তারা ভূয়া কাগজপত্রের বলে সরস্বতী খাল পুনঃখননে বাধা প্রদানসহ জনসাধারণের কাজে বিঘিœ সৃষ্টি করে চলেছেন। বাদীগন আরো বলেন- এলাকাবাসী আদালতে অনুসন্ধান করে জানতে পারেন; জমিদার নীলিমা রানী দেবী বিবাদীদের নামে নালিশী জমি হস্তান্তর করেননি। এরপরও বিবাদী পক্ষ বিতর্কিত ওই জমি নিজেদের দখলে রাখতে মেহেরপুর বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালতে ৩৫৩/৯৪, ২৫০/৯৭ ও ৬৫/২০০৩ নং তিন মামলা দায়ের করেন। কিন্তু প্রথম ২টি মামলায় বিবাদীপক্ষ পরাজিত হন। এ রায়ের পর বাদী পক্ষসহ এলাকাবাসী কয়েক দফা বিবাদীগণের সাথে বিষয়টির নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করেন এবং খাল পুনঃখনন প্রকল্পের কাজ শুরু হলে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে পত্র প্রেরণ করেন। কিন্তু তাতে সম্মতি না দিয়ে বাড়াবাড়ি করেন ও সরকারের বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। এছাড়া বিবাদীপক্ষ পত্রের প্রতি কর্নপাত না করে মেহেরপুর বিজ্ঞ সহকার জজ আদালতে ডেপুটি কমিশনারসহ স্থানীয় প্রশাসনকে বিবাদী করে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের কনেছেন। যান নং-২২/২০২০। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
এমতাবাস্থায় বাদীগণ সরকারি খাস সম্পত্তি ও এলকার জনগনের ব্যবহার্য সম্পত্তি হিসেবে বিবাদীগণের উচ্ছেদ পূর্বক খাস দখলের ডিক্রী পেতে আবেদন করেন। এদিকে মুজিবনগর এলাকাবাসী ওই অবৈধ দখল থেকে ভূমিখোরদের উচ্ছেদ করতে চায়। তারা সরস্বতী খালের প্রস্থ সব জায়গায় ঠিক রেখে খনন করাসহ জনগণের ব্যবহার্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পেতে চায়। এছাড়া সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ ওই স্থানে ঐতিহাসিক স্থান মুজিবনগরের প্রবেশ তোরণ নির্মাণ করতে চান।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More