মেহেরপুরের রুইমারী খাল পুনঃখনন কাজ শেষ হতে না হতেই মাটি বিক্রি

খালটি বিলীনসহ দুই পাড় ধসে পড়ার আশঙ্কা এলাকাবাসীর

স্টাফ রিপোর্টার: মেহেরপুর সদর উপজেলার বিলরুয়াকুলি রুইমারী খাল পুনঃখনন কাজ শেষ না হতেই দুই পাড়ের মাটি বিক্রি করে করা হচ্ছে। আর এতেই খালের দুই পাড় ধসে পড়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের। খালটি খননে খাল পাড়ের মানুষের গোসল ও গৃহপালিত প্রাণিদের গোসল করানো হয়ে থাকে। দেশীয় মাছ ধরে পরিবারের চাহিদা মিটিয়েও জীবিকা নির্বাহ করছে অনেক নিম্নআয়ের মানুষ। কিন্তু মাটি বিক্রি হলে খালের দুই পাড়ের পানি এসে আবারো খালটি বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
তবে মাটি কাটার সাথে জড়িতরা বলছেন, সরকারি সকল নিয়ম মেনে এলাকার কৃষকের কথা বিবেচনা করে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে এ মাটি বিক্রয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাটি বিক্রির সাথে জড়িতরা।
মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বিভাগের তথ্যমতে ৬৪ জেলার অভ্যরন্ত ছোট নদী খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (১ম পর্যায়ে) আওতায় মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বিভাগের এই প্রকল্প । মোল্লা চৌড়হাস কুষ্টিয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি ১ কোটি ৭২ লাখ ১৩ হাজার টাকার চুক্তি মূল্যে কাজ শেষ করে। তবে সিডিউল অনুযায়ী এখনও খালের দুই পাড়ের কৃষি ও বসতভিটা এলাকার বিভিন্ন স্থানের পানি নিষ্কাশনের জন্য কিছু কালভার্ট বসাতে বাকি আছে। তাছাড়াও খালের তীরবর্তী ঘাষ ও গাছ রোপণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ কাজ শেষ না হতেই যদি খালের দুইপাড়ের মাটি বিক্রি হয়ে যায় তাহলে খালটি ভবিষ্যতে ধসে পড়তে পাড়ে। যার ফলে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। মাটি কাটা শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে জেলা পানি উন্নয়ন কর্মকর্তা মেহেরপুরকে অবহিত করা হয়। খাল পাড়ের মদনা গ্রামের আব্দুল্লাহ জানান, আগে এখানে গোসল করতে পারতাম না। খালে নতুন করে মাটি কাটায় আমরা বন্ধুরা মিলে গোসল করি। সাতার কাটি মাছ ধরি।
খাল পাড়ের বিল্লাল হোসেন জানান, খাল খননের মাধ্যমে আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। গৃহপালিত পশুদের গোসল করানো, মাছ পরিবারের সদস্যাদের নিয়ে মাছ ধরে খাওয়া, গরমের সময়ে খালের পাড়ে বসে হাওয়া খাওয়া নানা সুবিধা আমরা ভোগ করি। কিন্তু খননকৃত মাটি কেটে নিয়ে যেতে চাইলে আমরা বাধা দিই। তারা বলছেন, আমরা ডিসি অফিস থেকে টেন্ডার নিয়ে মাটি কাটছি।
মাটি কাটার দায়িত্বে নিয়োজিত বিপ্লব হোসেন বলেন, এলাকার কৃষকরা অভিযোগ করেন, বর্ষা মরসুমে হাজার হাজার বিঘা জমির ক্ষেত পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে তারা ডিসি অফিসে অভিযোগ করলে ডিসি অফিস টেন্ডারের মাধ্যমে এ মাটি বিক্রি করেছে। আমরা সরকারের সকল নিয়মনীতি মেনে খালের পাড়ের মাটি সরাচ্ছি।
ঠিকাদার মো. নাসির উদ্দীন মোল্লা জানান, মাটির কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন শুধু ঘাস, গাছ লাগানো ও ইনলেট তৈরী করা বাকি আছে এবং টাস্কফোর্স কর্তৃক মাটির পরিমাপও হয়নি। এমতা অবস্থায় আমি সরেজমিনে গেলে দেখতে পায় খালের দুপাড়ের মাটি স্থানীয় ইটভাটাই প্রায় ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। আমার কাজ শেষ না হতেই মাটি বিক্রি কোনোভাবে কাম্য নয়। এটা করলে খালের দুপাড় ভেঙে পরবে। এটা ভেবে মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বিভাগের কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ করেছি। মাটি যদি বিক্রি করতে হয় তাহলে আমার খালের পরিমাপ নিয়ে চুড়ান্ত বিল দিয়ে খালটি বুঝে নিয়ে সরকারি বিধি মোতাবেক টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রয় করার অনুরোধ জানাচ্ছি। তা না হলে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহীনুজ্জামান জানান, সরকারি সকল নিয়ম মেনে আমরা মাটি বিক্রি করেছি। এখানে কোনোপ্রকার অনিয়ম করা হয়নি। মেহেরপুর জেলা প্রশাসনসহ সবাই সম্মিলিতভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এলাকার অনেকে জানে না। আবার অনেকে কৃষি জমি বাচাঁতে আমাদের নিকট অভিযোগ করেছেন। যার ফলে সরকারি নিয়ম মেনে মাটি সরানো হচ্ছে। মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মাটি অপসারণ করা হচ্ছে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More