তৌহিদুল ইসলাম তুহিন, মেহেরপুর: মেহেরপুর জেলায় চলতি আম মৌসুমে হঠাৎ করে আমের মধ্যে অজানা এক পচন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। পরিপক্ব আম গাছ থেকে সংগ্রহ করার ২-৩ দিনের মধ্যেই ডাঁটার (বোটার) দিক থেকে পচতে শুরু করছে, ফলে আম দ্রুতই খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এতে আমচাষীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা ও উদ্বেগ। কৃষি বিশেষজ্ঞরা এই রোগটিকে ছত্রাকজনিত ‘স্টেম-এন্ড রট’ বলে ধারণা করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মেহেরপুরে মোট ২৩৬৬ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়ে থাকে এবং এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫,৫১০ মেট্রিক টন। এরমধ্যে যদি মাত্র এক হাজার মেট্রিক টন আমও পচে যায়, তাহলে প্রতি মনের দাম ১৫০০ টাকা ধরলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দেড়শ কোটি টাকা।
সদর উপজেলার আমচাষী রুস্তুম আলী জানান, ‘১৮ মে থেকে ২৭ মে পর্যন্ত টানা বৃষ্টির পর গাছ থেকে আম সংগ্রহ করি, কিন্তু সেগুলো সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। দুই দিনের মধ্যেই পচে যাচ্ছে।’ তিনি ধারণা করছেন এটি আবহাওয়াজনিত কোনো ভাইরাস বা ছত্রাকের সংক্রমণ।
বিভিন্ন বাজার ও বাড়িতে দেখা যাচ্ছে, আম কিনে নিয়ে যাওয়ার দুইদিন পরই পচন ধরছে। অনেকেই আম ফেলে দিচ্ছেন। শহরের গড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা শিখা বেগম জানান, “বাজার থেকে হিমসাগর আম কিনে এনেছিলাম, দু’দিনের মাথায় সব পচে যায়। শেষে বাধ্য হয়ে ডাস্টবিনে ফেলতে হয়েছে।’
কুরিয়ার মাধ্যমে প্রিয়জনদের কাছে পাঠানো আমও নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ভোক্তা। এতে মেহেরপুরের সুস্বাদু আমের খ্যাতি, যা ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, এখন হুমকির মুখে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, ‘আমি নিজেও বাজার থেকে আম কিনে ফ্রিজে রেখেও পচন ঠেকাতে পারিনি।’ তিনি বলেন, ‘গাছ থেকেই এমন পচন শুরু হচ্ছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামসুল আলম বলেন, “আবহাওয়াজনিত ছত্রাকবাহিত ‘স্টেম-এন্ড রট’ রোগে এমনটা হয়ে থাকতে পারে। তবে আম সংগ্রহের অন্তত ১৫ দিন আগে গাছে ওষুধ ব্যবহার বন্ধ রাখতে হয়।” তিনি আরও বলেন, “কোনো চাষী বা ভোক্তা থেকে লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় এখনো মাঠপর্যায়ে কারিগরি টিম প্রেরণ করা হয়নি। তবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এখনই দ্রুত রোগনির্ণয় ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরবর্তী মৌসুমগুলোতেও আম উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে। প্রয়োজন মাঠ পর্যায়ে নজরদারি, কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.