মেহেরপুরে এনজিওর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ঋণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সাংবাদিক দেখলে বলে করোনার লিফলেট বিতরণ করছি।

মেহেরপুর প্রতিনিধিঃ করোনার মহামারিতে লকডাউনের কারণে সরকার ঘোষিত সবধরণের ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তির আদায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে সীমিত পরিসরে অফিস-আদালত খুলে দেয়ার পর বিভিন্ন এনজিও’র মাঠকর্মীরা জেলার প্রতিটি উপজেলা ও পৌর এলাকায় কিস্তির টাকা আদায়ের জন্য মাঠে নেমেছে। ফলে এখনও কাজে যোগদান করতে না পারায় ঋণ গ্রহীতা দিনমজুর পরিবারের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। এ নিয়ে সচেতন নাগরিকদের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে সীমিত পরিসরে অফিস-আদালত খুলে দেয়ার পর মেহেরপুর জেলায় ঋণদানকারী সংস্থা (এনজিও) গ্রামীন ব্যাংক ও ব্র্যাকসহ মেহেরপুর জেলায় কর্মরত প্রতিষ্ঠান গুলোর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ঋণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন এলাকা থেকে।
সূত্র মতে, সরকারের নির্দেশে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এনজিও ঋণ শ্রেণিকরণ কার্যকর হবে না বলে নির্দেশনা জারি করে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)। একই সঙ্গে নির্ধারিত সময় শেষে কোন প্রকার জরিমানা ছাড়াই বকেয়া কিস্তি গ্রহণ করা হবে।
কিন্তু মেহেরপুর জেলায় অধিকাংশ নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত এনজিওগুলো এ নির্দেশনা না মেনে কর্মকর্তা, মাঠকর্মীদের দিয়ে সরকার থেকে লকডাউন উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং সরকার কিস্তি আদায়ের অনুমোতি দিয়েছে বলে প্রচার করে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জোরপূর্বক কিস্তির টাকা আদায় করছে। এ নিয়ে দিনমজুর খেটে খাওয়া পরিবার ও সচেতন নাগরিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মেহেরপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড শিশুবাগান পাড়ার স্থানীয় মোছাঃ নেছারন, ছালমা , রশিদা ও নজর আলীর সাথে কথা বলার সময় তারা বলেন- আমাদের কাছে কিস্তি নেওয়ার জন্য এখানে এসেছে। অনেকে কিস্তি দিয়েছে। আমরা কিস্তি দিতে না পারায় আমাদের অনেক চাপ প্রয়োগ করছে এবং আগামী তারিখে কিস্তির টাকা রেডি করে রাখতে বলেছে। রশিদা তিনি বলেন এখন আমাদের কাজ নেই, ঠিকমত পরিবার নিয়ে সংসার চালাতে খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কোন রকমে দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে জীবন-যাপন করছি। এ অবস্থায় কি করে কিস্তির টাকা যোগড় করব। জানিনা কিভাবে সংসার চালাবো আর কিভাবে কিস্তর টাকা দেব ? এমনি কথার প্রেক্ষিতে সি.এস.এস এনজিও প্রতিষ্ঠানের মাঠকর্মী নাদিয়া খাতুন কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন আমি কাউকে কিস্তির টাকা দেওয়ার জন্য চাপাচাপি করিনি। যারা স্বেচ্ছায় দিয়েছে শুধূমাত্র তাদের কাছ থেকেই কিস্তি নিয়েছি। এসময় তিনি তড়িঘড়ি করে স্থান ত্যাগ করার সময় ব্যাগে থাকা লিফলেট বের করে বলেন আমি আমাদের এন.জি.ওর পক্ষ থেকে মানুষকে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জনসচেতন করতে সদস্যদের প্রতি লিফলেট বিতরণ করতে এসেছি।
এদিকে সদর উপজেলার রাজনগরের ফিরোজ আহমেদ বলেন, করোনা থেকে বাঁচতে চরম আতঙ্কের মধ্যে একদিকে আমরা যেমন কর্মহীন হয়ে পড়েছি, তেমনি করোনা থেকে নিজেদের বাঁচাতে সরকারের নির্দেশে ঘরে থেকে মানবেতর জীবন যাপন করছি। এরইমধ্যে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এনজিও’র মাঠকর্মীরা কিস্তির টাকার জন্য এক সপ্তাহ আগে বলে যাচ্ছে ওমকদিনে আসবো।
এখনও ব্যবসা ভালো করে করতে পারছি না। তারপরও না পারায় ঋণ গ্রহীতা পরিবারের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। এই অবস্থায় আমঝুপি গ্রামীন বাংকের দুই কর্মকর্তা এসে জোরপূর্বক কিস্তি আদায় করছে।
ভুক্তভোগী রংগু বিবি বলেন, আমরা লকডাউনের কারণে কাজ করতে পারি নাই। মানুষের কাছে কর্জ ও সুদের উপর টাকা নিয়ে খেয়েছি। সেই টাকাই এখনও দিতে পারি নাই। সবে মাত্র কাজে যোগ দিয়া শুরু করেছি। পরিবার পরিজন নিয়ে চলতেই পারি না । যদি বাড়িতে এস বসে থাকে তাহলে আমরা কি করবো। যেভাবেই হোক অন্য জায়গায় থেকে টাকা ধার করে কিস্তি দিচ্ছি। একই অভিযোগ করেন অনেকে।
অভিযোগের কথা অস্বীকার করে এবিষয়ে আমঝুপি গ্রামীন ব্যংকের ম্যানেজার প্রদিপ কুমার মন্ডল জানান, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) এর মাধ্যমে সরকার আমাদের অনুমতি দিয়েছে। সে মোতাবেক আমরা কিস্তি আদায় করছি। কাউকে জোর করে কিস্তি তুলছি না।
এ ব্যাপারে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক আতাউল গনি বলেন, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এনজিওগুলো কিস্তির টাকা আদায় করবে না বলে এমআরএ থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছিলো। নির্ধারিত তারিখের আগেই মাঠপর্যায়ে কোন ঋণদানকারী সংস্থা কিস্তি আদায় কিংবা চাপ প্রয়োগ করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণকে জানাতে হবে। ওনারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সেক্ষেত্রে সেচ্ছায় কোন ঋণগ্রহীতা যদি কিস্তি দিতে চাই তাহলে এনজিওরা সেই টাকা তুলতে পারে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More