মোবাইল আসক্তি থেকে শিশুদের ফেরাতে গ্রাম্য খেলাধুলার আয়োজন 

গাংনীর চেংগাড়ায় হয়ে গেলো ৯ম ক্রীড়া প্রতিযোগিতা

মাজেদুল হক মানিক: স্বামী-স্ত্রী মিলেই সংসারের সব কাজ সম্পাদন করেন। পারস্পারিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে সংসার হয় সুখের। দূর থেকে স্ত্রী ছুঁড়ে দিচ্ছেন বল আর স্বামী সেটিকে আগলে নিচ্ছেন ঝুড়িতে। স্বামী স্ত্রী জুটির এই খেলা যেনো সংসার সুখেরই বার্তা ছড়িয়ে দিলো উপস্থিত দর্শকদের মাঝে। বলছিলাম গাংনী উপজেলার চেংগাড়া গ্রামের শীতকালীন প্রতিযোগিতার একটি ইভেন্টের কথা। বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতার বার্তা তুলে ধরে গ্রাম্য খেলাধুলা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে চেংগাড় গ্রামবাসী।

প্রতি বছরই শীতকালে চেংগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এই খেলার আয়োজন করা হয়। গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপী এ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছিলো ৯ম। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নতুন খেলা যুক্ত করা হয়। মোবাইল আসক্তি থেকে শিশুদের মুক্ত রাখতে গ্রাম্য খেলাধুলার চর্চা এখন সময়ের দাবি বলে জানান দেন আয়োজকরা।

বয়স্কদের জন্য অন্ধ হয়ে হাঁটা, শিশুদের জন্য অংক দৌড়, তরুণদের সচেতনতায় নিরাপদ মোটর সাইকেল চালানো, মেয়েদের জন্য ঘরে বাইরে, যেমন খুশি তেমন সাজ, শক্তির পরীক্ষায় রশি টানাটানি এবং তেল মাখানো কলা গাছে উঠাসহ বিভিন্ন খেলায় গ্রামের শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধরাও অংশগ্রহণ করেন।

খেলার দর্শক গাংনী মাই ওয়ান শো-রুমের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম জানান, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। ২০ বছর আগে গ্রামের ছেলেমেয়েরা ডাংগুলি, বউ তোলা, ঘুড়ি ওড়ানো, হাড়ের গুটি খেলা, কলাগাছে ওঠা, রশি টানাটানিসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় মত্ত থাকতো সারাবেলা। সেই হারানো খেলাগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে অপরিচিত। এ খেলার আয়োজন করায় নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রামীণ খেলাধুলার পরিচিতি পাচ্ছে।

অস্টেলিয়া থেকে চেংগাড়া গ্রামে নানা বাড়িতে বেড়াতে আসা জিসান অংক দৌঁড়ে প্রথম হয়েছে। জিসান জানায়, বিদেশের মাটিতে বসে বাংলাদেশের গ্রামীণ খেলার গল্প শুনেছেন। এবার দেশে এসে খেলা দেখা ও অংশ নিয়ে প্রথম হওয়ায় বেশ আনন্দিত ও উদ্বেলিত। এটি তার স্মরণীয় হবে থাকবে বলেও জানায় এই প্রবাসী।

আয়োজক কমিটির সভাপতি জান মোহাম্মদ মিন্টু জানান, গ্রামীণ খেলাধুলাকে ধরে রাখার জন্য এই খেলাধুলার আয়োজন। এই খেলা প্রতিবছর আয়োজন করা হয়। দূর দুরান্ত থেকে এখানে খেলা উপভোগ করতে আসেন।

১১ বছর আগে চেংগাড়া গ্রামের ইউসুফ আলীর উদ্যোগে এই খেলাধুলা প্রতিযোগিতা শুরু হয়। তিনি এবারও প্রতিযোগিতা পরিচালা করেন। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মকে মাদক ও মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্ত রাখতে গ্রাম্য এইসব খেলাধুলা আয়োজন খুবই দরকার। এই আয়োজন সব জায়গাতেই ছড়িয়ে পড়বে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

খেলার দর্শক গাংনী মহিলা কলেজের ছাত্রী শ্রাবন্তী জানান, বর্তমানে আধুনিক যুগে সব ছেলে মেয়েরা মোবাইল গেমে আসক্ত। এতে অনেকেই বিপদগামী হচ্ছে। গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন ও প্রচলন থাকলে অনেকেই এসব খারাপ পথ থেকে সরে আসবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোর আজ বিলুপ্তির পথে। গ্রামীণ খেলাগুলো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ায় কঠিন। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া গ্রাম বাংলার খেলাধুলা আজ রুপকথার ন্যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শতাধিক গ্রামীণ খেলাধুলার প্রচলন ছিলো। কালের বির্বতনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ডেস্কটপে ভিডিও, এসব খেলার কারণে গ্রামীণ খেলা গুলো বিলুপ্তির পথে। এ আয়োজন একটি ইতিবাচক দিক। প্রতিবছর এমন আয়োজন রাখার অনুরোধ জানান এই অতিথি।

এর আগে সকাল দশটায় আয়োজনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে উদ্বোধন ঘোষণা করেন গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক কমিটির সভাপতি জান মহাম্মদ মিন্টু। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ষোলটাকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান, ষোলটাকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার পাশা,  সাবেক ছাত্রনেতা সাহিদুজ্জামান সিপু, প্রতিযোগিতার পরিচালক আবু ইউসুফ, ইউপি মেম্বর ইদ্রিস আলী, প্রভাষক শান্ত, প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন, জাব্বারুল ইসলাম মাস্টার, আব্দুল মজিদ ও ব্যবসায়ী জিয়া। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন কবির হোসেন মাস্টার।

খেলা পরিচালনায় ছিলেন রেজানুর রহমান লিটু মাস্টার ও রকিবুল ইসলামসহ গ্রামের স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ। প্রতিটি প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

আয়োজনে গ্রামের অর্ধশত দরিদ্র মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ করা হয়। চেংগাড়া গ্রামের প্রবাসীদের অর্থায়নে এ সহযোগিতা প্রদান করেন নাজমুল হোসেন ও আজমাইন হোসেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More