শীতের আগমনী বার্তায় চলছে খেজুর রস সংগ্রহের প্রস্তুতি

আনোয়ার হোসেন: শীত আসছে। তাই শুরু হয়েছে গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহের কাজ। চুয়াডাঙ্গায় রীতিমতো ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে চুয়াডাঙ্গার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা খেজুর গাছ কাটার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। সকাল থেকে শুরু হয় মধুবৃক্ষ খেজুরের গাছ ঝুড়ার কাজ। কিছুদিন পরে এ সকল গাছ থেকে শুরু হবে রস সংগ্রহের পালা। গাছ ঝুড়া ও রস সংগ্রহকে ঘিরে এ জনপদের গ্রামীণ জীবনে শুরু হয়েছে কর্মচাঞ্চল্য। খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে তৈরি করা হয় হরেক রকমের পিঠা-পুলি, ক্ষির ও পায়েস। তবে কিছু অসাধু মুনাফালোভী গুড় উৎপাদনকারীর কারণে জেলার এই ঐতিহ্য এখন ম্লান হতে চলেছে। বর্তমানে কয়েক হাজার পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে খেজুর গাছের ওপর নির্ভরশীল। সরকারের সুদৃষ্টির মাধ্যমে এ খাতের উন্নয়নের আশা করেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা বলছেন, আর মাত্র কয়েক দিন পর রস সংগ্রহ করে রস থেকে লালি ও গুড় তৈরির পর্ব শুরু হয়ে চলবে প্রায় মাঘ মাস পর্যন্ত। এ জেলায় মধুবৃক্ষ খেজুরের গাছ একটি অন্যতম সম্পদ। হেমন্তের প্রথমে বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করবে সুস্বাদু খেজুরের পাটালি গুড়। মধুবৃক্ষ খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে সরোজগঞ্জ , আলমডাঙ্গা প্রসিদ্ধ। এ অঞ্চলের খেজুর গুড়ের পাটালি রাজশাহী, ঢাকা, চাঁপাই, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, খুলনা, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে। অবহেলায় বেড়ে উঠা খেজুরের গাছের কদর এখন অনেক বেশি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক গাছিই খেজুরের গাছ ঝুড়ছেন। এ সময় কথা হয় সুমিরদিয়া রেলপাড়ার আব্দুল মজিদের সাথে। তিনি বলেন, আগাম রস নামাতে পারলে বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো পাওয়া যাবে। ৪০ বছর ধরে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে আসছি। ১১০টি খেজুর গাছ আছে। যা থেকে বছরে লক্ষাধিক টাকা আয় করি। বর্তমানে রস, গুড় ও পাতালির দামও ভালো। বর্তমান বাজারে আখের গুড় চিনি যে মূল্যে বেচাকেনা হচ্ছে তার চেয়ে মানসম্পন্ন খেজুরের গুড়ের দাম এবছর কিছুটা বেশি হবে এমনটাই আসা করছেন গাছিরা। শীত একটু বেশি পড়তে শুরু করলে আত্মীয়-স্বজন আনা নেয়া ও পিঠা-পুলির উৎসবে খেজুর গুড়ের দাম ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সে সময় আমাদের লাভ একটু বেশি হয়।

চুয়াডাঙ্গার বনানীপাড়ার গাছি আমিরুল ইসলাম বলেন, একটি খেজুর গাছ ঝুড়তে আমরা ৩০ টাকা করে পেয়ে থাকি। প্রতিদিন ১০-১৫টি খেজুর গাছ ঝুড়া যায়। যা থেকে ৬-৭শ টাকা আয় হয়। কার্তিক মাসের শুরু থেকেই গাছ ঝুড়া শুরু হয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলী হাসান জানান, এবারও বিপুল পরিমাণ খেজুরের গুড় উৎপাদন হবে। আশ্বাস দেন, গাছিদের সব ধরনের সহযোগিতার। চলছে খেজুর রস সংগ্রহের প্রস্তুতি। চুয়াডাঙ্গার খেজুরের রস, গুড় ও পাটালী জেলা প্রসিদ্ধ। রস দিয়ে যে গুড় ও পাটালি তৈরি হয় তা নিয়ে রীতিমত কাড়াকাড়ি শুরু হয় শীত মৌসুমে। গাছিরা খেজুরগাছের ডালপালা পরিস্কার করে যাবতীয় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন পুরোদমে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৬০ টি খেজুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরে ৯৩ হাজার ৪৫০, দামুড়হুদা উপজেলায় ৮৩ হাজার ৭০০, জীবননগরে ৩৬ হাজারি ৫০০ এবং আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩৫ হাজার ৩১০টি খেজুর গাছ রয়েছে। যা থেকে এ বছর ২ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন গুড় উৎপাদন করা হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More