সিজারের সময় পেট কেটে মারা যাওয়া নবজাতকের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন : থানায় অভিযোগ

মৃত্যুপুরী আলমডাঙ্গার ইউনাইটেড মেডিকেল সেন্টার ফের বন্ধের নির্দেশ

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: সিজার করার সময় পেট কেটে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় আলমডাঙ্গার ইউনাইটেড মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গতকাল বিকেলে পরিদর্শনে গিয়ে সাথেসাথে ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেন সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান। এছাড়াও আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ দেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাদী জিয়াউদ্দীন আহমেদ সাঈদ। কয়েকজন রোগউ ভর্তি থাকায় দুদিনের সময় দেন তিনি। রোববার সকালে ইউনাইটেড মেডিকেল সেন্টার পরিদর্শন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কান্তি দাস। এদিকে, এ ঘটনায় গতকাল রোববার সকালে আলমডাঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মারা যাওয়া নবজাতকের পিতা সাগর হোসেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, শুক্রবার সকালে আলমডাঙ্গা উপজেলার মাজু গ্রামের সাগর আলীর স্ত্রী রুমা খাতুনের প্রসব বেদনা উঠলে তাকে আলমডাঙ্গার ইউনাইটেড মেডিকেল সেন্টারে নেয়া হয়। দুপুরে প্রসূতির সিজার অপারেশনের সময় মাতৃগর্ভে থাকাবস্থায় শিশুর পেট কেটে যায়। নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে আসার কারণে পরদিন শনিবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় ভূমিষ্ঠ শিশুর।
প্রসূতির স্বামী সাগর আলীর অভিযোগ, একজন বিশেষজ্ঞ সার্জনকে দিয়ে সিজার করানো হবে জানিয়েছিলো ইউনাইটেড ক্লিনিকের কর্তৃপক্ষ। অথচ প্রতিষ্ঠানের মালিক উপসহকারী মেডিকেল অফিসার নাজমুল হক নিজেই সিজার করেন। ডাক্তার সেজে সিজার করতে গিয়েই তিনি সন্তানের পেট কেটে ফেলেন।
তবে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের দাবি, সিজারের সময় পেট কাটা হয়নি। জন্মের সময় ত্রুটির কারণে শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
ডা. বিপাশা ওই প্রসূতির সিজার অপারেশন করেছেন বলে গত শনিবার দাবি করেন ইউনাইটেড মেডিকেল সেন্টারের মালিক উপসহকারী মেডিকেল অফিসার নাজমুল হক। তার এ দাবির সম্পূর্ণই মিথ্যা ছিলো। গতকাল রোববার তিনি বলেছেন, প্রসূতির সিজার করেছেন ডা. আবু সালেহ ইমরান ও ডা. নজরুল। তবে, তারা দুজনও অপারেশনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
এদিকে, আলমডাঙ্গা থানার এসআই সঞ্জীব কুমার অভিযোগের তদন্ত করছেন। তিনি জানান, ক্লিনিক মালিক নাজমুল ইসলাম সংবাদপত্রে বিবৃতি দিতে গিয়ে ডা. বিপাশার নাম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে উল্লেখ করেছেন। অথচ, ডা. বিপাশার ওই ক্লিনিকে কিংবা ওই অপারেশনের সাথে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ডা. বিপাশাও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ক্লিনিক থেকে উদ্ধার করা শিশুটির ছাড়পত্রে উল্লেখ রয়েছে ডাক্তার নজরুল ইসলাম ও ডাক্তার ইমরানের নাম। কিন্তু তদন্তকালে জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুজনেই ওই অপারেশনে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। অর্থাৎ পুরোটাই জালিয়াতি।
ক্লিনিকের কর্মচারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে অপারেশনটি ক্লিনিক মালিক মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট নাজমুল ইসলাম ও ক্লিনিকে কর্মরত তানিয়া যার চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, তিনি করেছেন। নাজমুল ইসলাম ও তানিয়া দুজনই বর্তমানে গা-ঢাকা দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, আলমডাঙ্গায় মোট ১৬টি প্রাইভেট ক্লিনিক রয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র দুটিতে ছাড়া কোনো এমবিবিএস চিকিৎসক কিংবা প্রকৃত নার্স নেই। বছরের পর বছর এমনকি যুগের পর যুগ ধরে দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More