৯ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন ২০১১ সালের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মেম্বার

মেয়াদ শেষ হওয়ার চার বছর পেরিয়ে গেলেও আইনি জটিলতায় আটকে আছে হাউলী ও পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউপি নির্বাচন
দামুড়হুদা অফিস: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ও পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের নির্বাচনের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার চার বছর পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। মেয়াদোত্তীর্ণ চেয়ারম্যান মেম্বররা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ২০১১ সালের পর হাউলী ইউনিয়নে একটি উপ-নির্বাচন ছাড়া পূর্ণাঙ্গ কোনো নির্বাচন হয়নি। এ ইউনিয়ন ভেঙে দুটি করায় সীমানা বিভাজন ও পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের ওয়ার্ড বিভাজনে আদালতে রিটের কারণে বন্ধ হয়ে আছে নির্বাচন। ফলে এক মেয়াদেই একটানা ৯ বছর ধরে প্রতিনিধিত্ব করছেন বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা। এদিকে, মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও চার বছর ধরে নির্বাচন থাকায় আদালতে রিটকারীদের নিয়েও নানা ধরনের মন্তব্য করছেন অনেকেই।
নির্বাচন অফিসসূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১১ সালে ওই নির্বাচনে জামায়াত নেতা মাও. আজিজুর রহমান হাউলী ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থিতা করে চেয়ারম্যান হিসেবেও নির্বাচিত হন তিনি। ফলে হাউলী ইউপি চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হয়ে পড়ায় ২০১৪ সালে চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আলী শাহ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে ইউনিয়নের জয়রামপুর গ্রামের ইউনুছ আলি ইউনিয়ন বিভাজন চেয়ে হাইকোর্টে রিট করলে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। পরে একই গ্রামের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু সাঈদ খোকন স্থগিতাদেশ বাতিল চেয়ে রিট করলে বিভাজনের রিট খারিজ হয়ে যায়। এসময় ইউনিয়নের লোকনাথপুর গ্রামের আকবার আলি বিভাজন চেয়ে হাইকোর্টে একই রিট করেন। একইভাবে সেটিও খারিজ হয়ে যায়। তখন উপজেলা প্রশাসন থেকে হাউলী ইউনিয়ন ভেঙে জয়রামপুর ও রঘুনাথপুর নামে দুটি ইউনিয়ন বিভক্ত করা হয়। হাউলী ইউনিয়নের নাম মুছে যাওয়ায় বিভাজন সঠিক হয়নি এই মর্মে একই গ্রামের মসলেম আলি হাইকোর্টে আবারো রিট করলে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। পরে ৩০/০৭/২০১৬ সালে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হলে প্রার্থীরা প্রচার শুরু হলে নির্বাচনের দুই দিন আগে আবারো নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী শাহ মারা যান। এর দুই দিনপর থেকে প্যানেল চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে চালাচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদ।
হাউলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু সাইদ খোকন বলেন, তিনি একই সময় নির্বাচন স্থাগিতাদেশ বাতিল চেয়ে রিট করলে প্রথম দুটি রিট খারিজ হয়ে যায়। সর্বশেষ সীমানা বিভাজন সঠিক হয়নি বলে রিট করায় নির্বাচনের স্থগিতাদেশ আসে। ক্ষমতায় দীর্ঘদিন থাকার চিন্তায় নিজেদের পক্ষের লোকজন দিয়ে একেরপর এক মামলার কারণে চার বছরের অধিক সময় ইউনিয়ন নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। ইউনিয়নবাসী সঠিকভাবে সেবা পাচ্ছে না, তারা দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছেন, নির্বাচনের জন্য তারা মুখিয়ে আছেন।
ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দীন বলেন, একের পর এক মামলার কারণে নির্বাচন হচ্ছে না। ২০১১ সালে আমরা নির্বাচিত হয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছি। এর মধ্যে ৭ বছর ইউপি সদস্য ও ২ বছর চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছি। তবে নির্বাচন হলেও আমি আর নির্বাচন করবো না।
অপরদিকে, পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউপির একই অবস্থা একই সময় থেকে নির্বাচন আটকে আছে। ইউনিয়নটিতে ওয়ার্ড বিভাজন নিয়ে একই ওয়ার্ডেও শহিদুল ইসলাম হাইকোটে রিট করায় তখন থেকেই নির্বাচন আটকে আছে। একইভাবে ২০১১ সালের পর থেকে ইউনিয়নটিতে আর কোনো নির্বাচন হয়নি। এ ইউনিয়নে ওয়ার্ড বিভাজন নিয়ে শহিদুল ইসলাম ও রুহুল আমিন পর্যায় ক্রমে পৃথক পৃথক রিট করায় নির্বাচন স্থগিত হয়ে থাকে।
পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা এসএম জাকারিয়া আলম বলেন, মামলাজনিত কারণে ইউপি নির্বাচন আটকে আছে। ৩০/০৭/২০১৬ তারিখে ইউপি নির্বাচনের দিনক্ষণ নিধারিত হলেও প্রার্থীদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর নির্বাচনের ২দিন আগে স্থগিতাদেশ আসায় নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। তবে নির্বাচন হলে দলীয় মনোন্নয়ন পেলে অবশ্যয় নির্বাচন করবো।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচন অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা) কামরুল হাসান জানান, মামলাজনিত কারণে উপজেলার এ দুটি ইউনিয়নের নির্বাচন ৪ বছরেরও বেশি সময় ধওে আটকে আছে। মামলা শেষ হলে দ্রুত নির্বাচনের চেষ্টা করা হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More