ভোরে ধানক্ষেতে মিললো লাশ : পরকীয়া প্রেমিকাসহ দুজন আটক

কেএ মান্নান: হরিণাকুণ্ডুর ভবাণীপুরের দিনমজুর আল-আমিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার আন্দুলিয়া গ্রামের গজারিয়া-দোহার বিলের ধানক্ষেত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। যুবকের লাশের সুরতহাল শেষে এটা শ্বাসরোধ করে হত্যা বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হয়।

পুলিশের উপস্থিতেতে মৃতের পরিচয় ও মৃত্যুর নৈপথ্য নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। তবে প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার জের ধরে ওই যুবককে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। এর আগে বুধবার সন্ধ্যার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন তিনি। স্বজনরা বিষয়টি রাতেই থানা পুলিশকে অবহিত করেন। নিহত যুবক আল-আমিন (২৬) হরিণাকু-ু উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের শফিউদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই নারীকে আটক করা হয়েছে।

হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি আবদুর রহিম মোল্লা জানান, গ্রামের বিলের একটি ধানক্ষেতের পানিতে উপুড় হয়ে আল-আমিনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী খবর দেয়। ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে মরদেহের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ওসি আরও জানান, আন্দুলিয়া গ্রামের প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার জের ধরে এ হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে। এর আগে বুধবার রাতে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন আল-আমিন। স্বজনরা গভীর রাতে থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেছিলো মর্মে নিশ্চিত করেন ওসি। এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আন্দুলিয়া গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী হাসিবুল ইসলামের স্ত্রী দুই সন্তানের মা চম্পা খাতুনকে প্রাথমিকভাবে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করছে পুলিশ। হাসিবুলের ছোট ভাই হাবিবুল ইসলাম হবুর স্ত্রী পারুলাকেও থানায় নেয়া হয়েছে।

গ্রামের একাধিকসূত্র জানায়, নিহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তার বাড়ি থেকে চম্পার বাড়ির দূরত্ব অন্তত ৩ কিলোমিটার। ধর্ম আত্মীয়র সূত্রে প্রতিনিয়তই ওই বাড়িতে যাতায়াত করতেন আল-আমিন। এ নিয়ে দুই দফায় ঘরোয়া পরিবেশে সালিস হয়েছে।

নিহত আল-আমিনের মা ফিরোজা খাতুন জানান, বুধবার সন্ধ্যার দিকে বাড়ি থেকে বের হয় ছেলে আল আমিন। দুই সন্তানের জননী স্ত্রী শিলা খাতুন জানতে চান কোথায় যাচ্ছে সে। উত্তর না দিয়েই চলে যান আল আমিন। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। তারপর গভীরে যেতে থাকে রাত। আশপাশের দোকান-পাটে কোথাও না পেয়ে ঘরে সন্তানদের নিয়ে প্রতীক্ষা করতে থাকেন স্ত্রী। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে দুজন বাড়িতে এসে আল আমিনের ধর্ম বোনের পিতা ও ভাই পরিচয় দেন। ধর্ম বোনের পিতা বলেন, আপনার ছেলে আন্দুলিয়ায় আমার জামাই প্রবাসী হাসিবুলের বাড়িতে গিয়েছিলো। তারপর অজ্ঞাত ৪ ব্যক্তি ওই বাড়িতে ঢুকে আল আমিনকে তাড়া করে নিয়ে গেছে। আল আমিন মোবাইল ফেলে রেখে গেছে। এরপর ফিরোজা খাতুন স্বামীকে নিয়ে ভবাণীপুর পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে বিষয়টি জানান। ফাঁড়ির এসআই রফিক বিস্তারিত শুনে রাতেই আদর্শ আন্দুলিয়া গ্রামে কথিত ধর্মবোন পরকীয়া প্রেমিকা চম্পার বাড়িতে যান। সেখান থেকে আল আমিনের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। মোবাইলটি ওই গ্রামের মেম্বার ইউনুস আলীর জিম্মায় রাখেন তিনি।

ফিরোজা খাতুন দাবি করে বলেন, প্রবাসী হাসিবুল ১০ দিন আগে আল আমিনকে ফোন করে হুমকি দিয়েছিলো। স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক তার মান-ইজ্জত রক্ষায় খুনের কথা বলে হুমকি দেয় হাসিবুল। ছেলে কথা শোনেনি। তাই তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, মালয়েশিয়া প্রবাসী হাসিবুলের পানবরজে দিনমজুরের কাজ করার সুবাদে তার স্ত্রী চম্পা খাতুনের সাথে নিহত আল আমিনের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুত্র ধরে তারা পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে হাসিবুলের পরিবারে প্রায়ই অশান্তি লেগে থাকতো।

এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (শৈলকুপা সার্কেল) আরিফুল ইসলাম বলেন, পরকীয়া সম্পর্কের কারণে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটতে পারে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক নারীকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে অন্য কোথাও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ ধানক্ষেতে ফেলে রাখা হয়েছে অথবা ওই ধানক্ষেতের পানিতে মুখ চেপে ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে কীভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা জানা যাবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More