মণ্ডপে মণ্ডপে দেবী বরণের প্রস্তুতি : কাল ষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে ঘটবে দেবী দুর্গার আগমন

অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পূজাম-প এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা : স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান
আলম আশরাফ: দেবীকে বরণের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। মণ্ডপে মণ্ডপে এখন চলছে শুধু শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা। আগামীকাল সোমবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আগমন ঘটবে। এবার দেবী আসবেন ঘোড়ায় চড়ে এবং বিদায় নেবেন দোলায় চড়ে। করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখেই চলছে ম-পের কাজ। চুয়াডাঙ্গা জেলায় এবার সর্বমোট ১১৭টি ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর থানায় ২৪টি, দামুড়হুদা মডেল থানার মধ্যে ১৪টি, আলমডাঙ্গা থানার মধ্যে ৩৮টি, জীবননগর থানার মধ্যে ২৩টি ও দর্শনা থানার মধ্যে ১৮টি পূজা ম-প রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ২১টি, গুরুত্বপূর্ণ ৩৬টি ও সাধারণ ৬০টি পূজাম-প রয়েছে। অধিক গুরুত্বপূর্ণ পূজা ম-পে পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক, দুজন সদস্য, ১জন পিসি (লাঠি ও বাঁশিসহ), ১জন এপিসি (লাঠি ও বাঁশিসহ), ৩জন পুরুষ আনসার সদস্য (লাঠি ও বাঁশিসহ) ও দুজন মহিলা আনসার সদস্য (লাঠিসহ) মোতায়েন থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ পূজাম-পে ৮ জন ও সাধারণ পূজা ম-পে ৭জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া পূজাম-প এলাকার গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক দল কাজ করবে। জেলার পূজাম-পের নিরাপত্তায় জেলা পুলিশের ৬৩৪ জন সদস্য ও আনসার ভিডিপির ৭৪৭ জন সদস্য কাজ করবে।
হিন্দু পুরাণ মতে, দুর্গাপূজার সঠিক সময় বসন্তকাল। কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ ও বৈশ্য সমাধি সে পর্যন্ত অপেক্ষা না করে, শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগিয়ে পূজা করেন। সেই থেকে অকালবোধন হওয়া সত্ত্বেও শরৎকালেই দুর্গাপূজার প্রচলন হয়ে যায়। সনাতন ধর্ম মতে, যা কিছু দুঃখ-কষ্টের বিষয়, যেমন- বাধাবিঘœ ভয়, দুঃখ-শোক, জ্বালা-যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন দেবী দুর্গা। শাস্ত্রকাররা দুর্গা নামের অর্থ করেছেন ‘খের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা’। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তাদের কষ্ট দূর করেন। মহালয়াতেই দেবী আগমনের ঘণ্টা বাজে, আর বিজয়া দশমি দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর দিন। এই দিনটি শেষ হয় মহা-আরতির মাধ্যমে। এর মধ্য দিয়ে দুর্গা পূজার সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
আগামীকাল সোমবার ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। ১৫ অক্টোবর দশমি তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে ভক্তদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। গত ২৭ সেপ্টেম্বর পূজা কমিটির সাথে মতবিনিময়সভায় পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও পূজা উদযাপন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ ও আনসার সদস্যের পাশাপাশি মন্ডপ এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করবে স্বেচ্ছাসেবকরাও। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ম-প এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের পাশাপাশি সকলকে সচেতন থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই সবার ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই। উৎসবের আনন্দে মেতে উঠি। সভায় আরও জানানো হয়, পূজা উদযাপন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নিরাপত্তা পরিকল্পনা পূজা শুরুর পূর্বে, পূজা চলাকালীন সময় ও প্রতিমা বিসর্জনের দিন এই তিন স্তরে বিভক্ত করা হয়েছে। সভায় পূজা শুরুর পূর্বে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, জেলা পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিট অফিসার পূজা ম-প পরিদর্শন করবেন। পূজা উদযাপন কমিটি, স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) যে কোনো বিরোধ নিষ্পত্তি করবেন। মণ্ডপ এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করবে পূজা উদযাপন কমিটি। ম-প এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করবে পূজা উদযাপন কমিটি। প্রবেশ পথে চেকিং করবে ডিএসবি / পূজা উদযাপন কমিটি। সভায় পূজা চলাকালীন সময়ের জন্য নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, রশি বা বাঁশ দিয়ে আলাদা প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ার দুটি ভিন্ন পথ করতে হবে। ইভটিজিং, হই হুল্লোড়, ধাক্কাধাক্কি বা অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সংশ্লিষ্ট কমিটি ও পুলিশ শক্ত অবস্থানে থাকবে। নারী ও পুরুষ পৃথক স্থানে বসবে। নামাজের সময় সতর্ক ও সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ করতে হবে। ম-প এলাকায় মাদক সেবন/গ্রহণ, বিক্রয়রোধে শক্ত অবস্থানে থাকবে পুলিশ। সভায় পূজা বিসর্জনের দিনের নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, পূজা কমিটি, মেয়র/চেয়ারম্যান ভেন্যু ব্যবস্থাপনা করবেন। পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার মোতায়েন থাকবে। রুট পূর্বেই নির্ধারণ করে জানাতে হবে। মাগরিবের পূর্বে প্রতিমা বিসর্জন দিতে হবে। যদি বিসর্জন না হয় তাহলে পূর্বেই জানাতে হবে।
মণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, প্রতীমাসহ মণ্ডপের যাবতীয় কাজ প্রায় সম্পন্ন। এখন চলছে সাজসজ্জা, সাউন্ড চেক এবং লাইটিংয়ের কাজ। আজ রোববার ম-পগুলো উদ্বোধন করা হবে এবং তারপর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। ম-পগুলোতে দেখা যায়, প্রবেশের এবং বের হওয়ার দু’টি আলাদা রাস্তা করা হয়েছে। এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য সীমিত আকারে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে কিন্তু তা সংখ্যায় অনেক কম।
পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা বলেন, ‘দুর্গা পূজাকে সামনে রেখে আমাদের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এখন শুধু আমরা স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং সামাজিক দূরত্বসহ নিরাপত্তার বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছি। যাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার পায় এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে। পাশপাশি আমাদের সাউন্ড সিস্টেমের কাজ চলছে। আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টার পর ভক্তদের জন্য ম-প উন্মুক্ত করা হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More