আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে ধাপে ধাপে খুলবে বিশ্ববিদ্যালয়

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী ১৭ অক্টোবরের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এর আগে টিকাসংক্রান্ত তথ্য সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছক আকারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) পাঠাতে হবে। যে বিশ্ববিদ্যালয় শতভাগ টিকার আওতায় আসবে, সে বিশ্ববিদ্যালয় হল খোলাসহ সব কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের এমন পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। ফলে ১৫ অক্টোবর শুক্রবার হওয়ায় ১৭ অক্টোবর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই ছুটি আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেড়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপির সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যদিও আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায়, তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ক্ষেত্রে সংক্রমণের হার ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে কোনো একটি সংখ্যা বিবেচনা করা যায় কি না, সে বিষয়ে টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শ চাওয়া হবে। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় যে স্কুল রিওপেনিং প্ল্যান করেছে, তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী সাত দিনের মধ্যে চূড়ান্ত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কি না, তার জন্য প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান মনিটরিং সেল গঠন করবে এবং প্রতিদিন প্রতিবেদন তৈরি করবে। আগামী সাত দিনের মধ্যে মনিটরিং প্রতিবেদন তৈরির একটি গাইডলাইন তৈরি করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয় তাদের যে সব শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে টিকা নিয়েছে, টিকা গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে, আবার টিকা গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেনি কিন্তু এনআইডি আছে এবং যাদের এনআইডি নেই কিন্তু বয়স ১৮ পেরিয়ে গেছে বা যাদের বয়স এখনো ১৮ হয়নি তাদের একটি তালিকা প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যাদের এনআইডি নেই কিন্তু বয়স ১৮র ওপর তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে এনআইডি পাওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলবে। তারপর সেপ্টেম্বরের শেষনাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সব শিক্ষার্থীর টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। টিকাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের শরীরে অ্যান্টিবডি হওয়ার জন্য ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। তারপর কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
এছাড়া সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, আগামী ১ সেপ্টেম্বর বুধবার আবার যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই যৌথসভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এবং তা গণমাধ্যমকে জানানো হবে।
সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মো. মহিবুল হাসান চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম, কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবিরসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ইতিমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষক ও কলেজের অধ্যক্ষদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো শর্তসাপেক্ষে খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ দেশের প্রতিটি মানুষের দৃষ্টি এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকে। করোনাকালে দেশের সবকিছু চালু থাকলেও টানা ১৭ মাস বন্ধ শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই। এ সময়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ঝরে পড়েছে। অর্থসংকটে অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে আছে। অনেক অভিভাবক হয়েছেন নিঃস্ব। শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে থেকেও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সবার ধারণা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে এ অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More