আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারলে ছাড় নয়

মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগই দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী একাত্তরে যেভাবে নির্যাতন করেছিল, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে ঠিক একইভাবে অত্যাচার করেছে।’ বিএনপি-জামায়াত জোটের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে কত মেয়েকে নির্যাতন করেছে? বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে তারা অত্যাচার করেনি।’ গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহিলা আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হানাদার বাহিনী মেয়েদের ধরে ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করেছে। তখন জাতির পিতা সুইজারল্যান্ড থেকে নার্স এনে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। জাতির পিতা সবসময় নারী ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ আগস্ট একটি কালো দিন। সেদিন জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়। একইসঙ্গে আমার মাকে হত্যা করা হয়। মেয়েরা স্বামীর কাছে কত কিছু দাবি করে, কিন্তু আমার মা বাবার কাছে কখনো কিছু চাননি। ঘাতক দল যখন আমার বাবাকে হত্যা করে, তখন আমার মা বলেছিলেন-আমার স্বামীকে হত্যা করেছো, আমাকেও হত্যা করো।’ আওয়ামী লীগই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘ডায়ালগ করতে হবে? কাদের সঙ্গে? সেই খালেদা জিয়া, তারেক জিয়ার সঙ্গে, যে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলো। আবার এদের সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে কেন?’ এ সময় আওয়ামী লীগর সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্দোলনের নামে আবার মানুষ পুড়িয়ে মারতে চাইলে তাদের একটাকেও ছাড়বো না। আমরা সহ্য করেছি, এটাকে অনেকে দুর্বলতা বলে। এটা আমাদের দুর্বলতা না।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। গৃহহীনদের ঘরসহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে তেমন কিছুই করেনি। ধর্ষণসহ নারীর বিরুদ্ধে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে।’ সন্তানদের বিষয়ে অভিভাবকদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজের সন্তান যেন জঙ্গিবাদে না জড়ায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তাদেরকে সময় দিতে হবে। ছেলেকে সঠিক পথে রাখতে মাকেই বেশি অবদান রাখতে হবে।’ দেশে খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এক সময় ঘাটতির দেশ ছিল। এখন খাদ্য ঘাটতি নেই। তারপরও আপনাদের কাছে অনুরোধ, যেন কোনো জমি অনাবাদি না থাকে। প্রত্যেকে যা পারেন তাই চাষ করেন। আমি চাই দেশের মানুষের যেনো কষ্ট না হয়।’ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। সম্মেলনে শোক প্রস্তাব উত্থান করেন মহিলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রোজিনা রোজী। এদিকে, মহিলা আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ জাতীয় এ সম্মেলন শেষে নতুন সভাপতি-সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন মেহের আফরোজ চুমকি এবং সভাপতি নির্বাচিত হওয়া মেহের আফরোজ চুমকী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য। সাধারণ সম্পাদক হওয়া শবনম জাহান শিলা ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন সাহেদা খানম দিপ্তী এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন হাসিনা রাবী চৌধুরী। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেরা বেগম স্বপদে বহাল রয়েছে, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন পারুল আক্তার। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছেন সিমিন হোসেন রিমি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে জাহানারা বেগমকে। প্রসঙ্গত, মহিলা আওয়ামী লীগের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১৭ সালের ৪ মার্চ। সে সময় সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্ব পান সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক হন মাহমুদা বেগম।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More