আমার গ্রাম আমার শহর প্রকল্প : বিদেশ সফরের প্রস্তাব বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার: বর্তমান সরকারের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পূরণের অংশ হিসেবে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ শীর্ষক কারিগরি সহায়তা প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ১৯ জানুয়ারি পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এটি অনুমোদন দেন। তবে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে প্রকল্পের বৈদেশিক প্রশিক্ষণের (বিদেশ সফর) প্রস্তাব বাদ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণের জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে ২২ কোটি ২৩ লাখ টাকাই পরামর্শকদের পেছনে ব্যয় হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাকির হিসেন আকন্দ যুগান্তরকে বলেন, একেবারেই একান্ত প্রয়োজন না হলে বিদেশ প্রশিক্ষণ বা সফর নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। আমরা বলেছি, এ বিষয়ে বিদেশে না গিয়ে দেশেই কর্মশালার মাধ্যমে গ্রাম কেমন করে শহর হবে, সেটির ধারণা বেরিয়ে আসবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরামর্শক ব্যয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। যেহেতু এ ধারণাটি আমাদের দেশে নতুন, এজন্য একটি ডিজাইন করতে হবে। তাছাড়া আনুষঙ্গিক কার্যক্রমও করতে হবে। এ কারণেই শেষ পর্যন্ত এই বরাদ্দ রাখা হয়ছে।
সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ে ৩১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ শীর্ষক কারিগরি সহায়তা প্রকল্পটি প্রস্তাব করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (এসপিইসি) সভা। ওই সভায় ব্যাপক আলাপ-আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ৩ কোটি টাকা কমিয়ে প্রকল্পটির মোট ব্যয় চূড়ান্ত করা হয় ২৮ কোটি টাকা। এসপিইসি সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটিতে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে ২ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এবং বৈদেশিক প্রশিক্ষণ সরকারিভাবে নিরুৎসাহিত করার কারণে এ অংশটি বাদ দেয়া যেতে পারে। পরবর্তী সময়ে সর্বসম্মতভাবে এ খাতের ব্যয় এবং খাতটি প্রকল্প থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেটি কার্যকর করা হয়েছে। সভার কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় থোক হিসাবে ২২ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পরামর্শকের সংস্থান রাখা হয়েছে। কিন্তু প্যাকেজভিত্তিক পরামর্শকের ধরন, সংখ্যা এবং পরামর্শকদের জন্য কোনো টিওআর টিএপিপিতে (টেকনিক্যাল প্রজেক্ট প্রপোজাল) সংযোজন করা হয়নি। এছাড়া প্রয়োজনীয় বা কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য পরামর্শক খাতে ব্যয় যথাসম্ভব কমানোর বিষয়ে সভায় গুরুত্বারোপ করা হয়। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট উইংয়ের সঙ্গে আলোচনা করে পরামর্শকের ধরণ, সংখ্যা, জনমাস, সম্মানি ভাতার পরিমাণ নির্ধারণ এবং বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী সম্মানি ভাতা চূড়ান্ত করা এবং পরামর্শকদের কার্যপরিধি টিএপিপিতে সংযোজনের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পরামর্শক খাতের ব্যয় যথাসম্ভব যৌক্তিক করা হয়েছে। এছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের উইংয়ের সঙ্গে আলোচনা করে অন্য বিষয়গুলো নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ খাতে কমেছে মাত্র ৩ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, কারিগরি সহায়তা প্রকল্পটির আওতায় তৈরি করা হবে ৩০টি গাইডলাইন, ৫১টি সমীক্ষা প্রতিবেদন ও উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি)। এছাড়া দেশের ৮৭ হাজার ২৩০টি গ্রাম উন্নয়নের জন্য একটি ফ্রেমওয়ার্কও করা হবে। প্রকল্পের আওতায় যে ৩০টি গাইডলাইন তৈরি করা হবে, এর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মপরিধি সংক্রান্ত ৭টি বিষয় যেমন-গ্রামীণ যোগাযোগ, গ্রামীণ গ্রোথ সেন্টার/হাটবাজার, গ্রামীণ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কমিউনিটি স্পেস ও বিনোদন, উপজেলা মাস্টার প্ল্যান, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও অন্য বিষয়। সেই সঙ্গে ৩৬টি সমীক্ষা পরিচালনা করা হবে এবং ১৫টি পাইলট গ্রামের আলাদা সমীক্ষা করা হবে। পাশাপাশি এসবের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে নাগরিক সুবিধা সম্প্রসারণের চ্যালেঞ্জগুলো এবং উত্তরণের উপায় উদ্ভাবন করা হবে। আরও যেসব কাজ করা হবে সেগুলো হলো-দেশের ৮টি বিভাগের সমতলের ৮টি গ্রাম এবং ডেল্টা প্ল্যানের হটস্পট ও অর্থনৈতিক অঞ্চল সংলগ্ন ১৫টি গ্রামে পাইলট গ্রাম নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More