আলমডাঙ্গায় ব্যতিক্রমী সাঁতার প্রতিযোগিতার পুরুস্কার বিতরণ 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: নদী হারানো জনপদ আলমডাঙ্গায় মৃতপ্রায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) ক্যানেলের বুকে অনুষ্ঠিত হলো ব্যতিক্রমী এক সাঁতার প্রতিযোগিতা। নদীমাতৃক বাংলাদেশের হারানো জলঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দিতে ও নতুন প্রজন্মের মাঝে নদীর প্রতি সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতা এক উৎসবে রূপ নেয়। গতকাল সোমবার আলমডাঙ্গা নাগরিক উন্নয়ন কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ তুমুল প্রতিযোগিতায় অংশ নেন মোট ৭৩ জন সাঁতারু। স্থানীয়দের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও বিপুল দর্শক সমাগমে মুখর হয়ে ওঠে জিকে ক্যানেলের দুই পাড়। নদীমাতৃক দেশের হারিয়ে যাওয়া বাংলার অন্যতম ঐতিহ্য সাঁতারকে এলাকায় আবারও পুনরুজ্জীবিত করলো আলমডাঙ্গা নাগরিক উন্নয়ন কমিটি। প্রতিযোগিতার পুরো সময়জুড়ে ক্যানেলের দুইপাড়ে শত শত উৎফুল্ল নারী-পুরুষ প্রতিযোগিতা প্রত্যক্ষ করেন। গত ক’দিন ধরে ব্যাপক প্রচারণায় সাঁতার প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে আলমডাঙ্গার মানুষের মাঝে হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ার আনন্দ লক্ষ্য করা যায়। এতে আলমডাঙ্গা নাগরিক উন্নয়ন কমিটির নামের স্বার্থকতা খুঁজে পান মানুষ। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আগ্রহীদের জন্য অনলাইন ও অফলাইন রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ রাখা হয়। প্রতিযোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে গঠন করা হয় রেসকিউ ও মেডিকেল টিম, এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় ক্যানালের নির্ধারিত অংশ। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আলমডাঙ্গা নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজানুর রহমান। এ সময় তিনি বলেন, এসময় তিনি বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েদের সুস্থ ধারার যে বিনোদন বা সহ-শিক্ষা কার্যক্রম সেগুলোর সাথে বর্তমানে আমরা সংযোগ ঘটাতে ব্যর্থ হচ্ছি। এ কারণে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। স্কিন টাইম বলে একটি বিষয় আছে এটি নিয়ে সারা বিশ্বে গবেষণা হচ্ছে। আমরা মোবাইল টেলিফোন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে শুধু সময় ব্যয় করছি। যাদের হাতে স্মার্টফোন আছে তাদের দিনের অর্ধেক সময়ই এর পেছনে চলে যাচ্ছে। এর ফলে চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন মানসিক রোগ তৈরি হচ্ছে। হাঁটাচলা থেকে শুরু করে যে সকল মুভমেন্ট হওয়ার কথা সেগুলো কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি আগে খেলাধুলার যে আগ্রহ ছিলো সেটাও কমে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের। বিশেষ করে যারা স্কুলে পয়ে তাদের হাতে আমরা স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছি যার ফলে তারা বিভিন্ন গেমস এবং এপসে আসক্ত হয়ে পড়ছে। আলমডাঙ্গা নাগরিক উন্নয়ন কমিটি থেকে সাঁতার প্রতিযোগিতার যে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে এটি যদি আমরা প্রত্যেকটি জেলা, উপজেলাসহ সারা দেশে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কমিটির মাধ্যমে করতে পারি তাহলে আমাদের ছেলে মেয়েদের জন্য একটি দারুণ ভবিষ্যৎ আমরা তৈরি করতে পারবো। আলমডাঙ্গা নাগরিক উন্নয়ন কমিটিকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সাঁতার প্রতিযোগীতার আজকের যে প্রশংসনীয় আয়োজন এতে অনেকেই অনুপ্রাণিত হবে। আমরা মনে করি এটা এ অঞ্চলে প্রথমবারের মত আয়োজন হচ্ছে। ছোট খাটো ভুলত্রুটি থাকলেও এটা একটা বড় ধরণের সামাজিক অর্জন। আমরা মনে করি আগামীতে অনেক মানুষ সম্পৃক্ত হবেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম এবং আলমডাঙ্গা থানার ওসি মাসুদুর রহমান পিপিএম, আলমডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন অফিসার আল মামুন। বিশিষ্ট ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম ও আলমডাঙ্গা নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম পিন্টুর উপস্থাপনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজিব হাসান কচি, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, সিনিয়র সাংবাদিক অ্যাড. মানিক আকবর, সময়ের সমীকরণ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন, প্রথম আলো পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি শাহ আলম সনি, নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহসভাপতি সাংবাদিক রহমান মুকুল, উপজেলা জামায়াতের আমির সফিউল আলম বকুল, জেলা জামায়াতের যুব বিষয়ক সম্পাদক নুর মোহাম্মদ হোসাইন টিপু, বণিক সমিতির সভাপতি আরেফিন মিয়া মিলন, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন, নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সহসভাপতি মীর আসাদুজ্জামান উজ্জ্বল, সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন জালাল, ম-ল স্পোর্টসের স্বত্বাধিকারী মামুন অর রশিদ ম-ল। সাঁতার প্রতিযোগিতার প্রধান পরিচালক ইসলাম রকিব, সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিক, ফিরোজ উদ্দিন, হাফিজুর রহমান, বিলকিস নাহার, আইরিন ইসলাম, শুকুর আলী, ইউনুস মাস্টার, সোহাগ, সুজন, আরিফ, ফানি ও রাজু। অপেশাদার গ্রুপে প্রথম হয়েছেন ১ম শুভ্র দেব, ২য় রাব্বি ও ৩য় নাহিদ হাসান। তাছাড়া, পেশাদার গ্রুপে ১ম হয়েছেন কুষ্টিয়ার জুবায়ের আহমেদ, ২য় হয়েছেন রমজান আলী ও ৩য় হয়েছেন আকাশ আহমেদ। প্রতিযোগিতার দুটি গ্রুপেরই প্রথম ১০ জন করে বিজয়ীকে নগদ অর্থ, মেডেল ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকেই পান টি-শার্ট, ক্যাপ ও মেডেল। বিশেষ অতিথি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম বলেন, এই আয়োজন কেবল খেলাধুলা নয়, বরং এটি নদী-জলাধার রক্ষার এক প্রতীকী প্রতিবাদ ও পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা তৈরির মাধ্যম। নদীই এ দেশের কৃষি, সংস্কৃতি ও সভ্যতার মূল উৎস। নদীর প্রবাহহীনতায় একদিকে যেমন মরুকরণ শুরু হয়েছে, তেমনি হারাচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। তাই নদীকে হত্যা করা মানে নিজের অস্তিত্বকে ধ্বংস করা। আলমডাঙ্গা নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাগত বক্তব্যে বলেন, এ সাঁতার প্রতিযোগিতা নতুন প্রজন্মকে নদীর প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ শেখাবে। নদী আমাদের প্রাণপ্রবাহ, এর অস্তিত্ব রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। নদী-বিল-খাল হারা জনপদে, যেখানে জলের স্মৃতি কেবল গল্প হয়ে থাকে, সেখানে এ আয়োজন যেনো হারানো নদীর জলে জেগে ওঠা আশার আলো। এটি শুধু ক্রীড়ানুষ্ঠান নয়, বরং নদীর শোকগাথায় জীবনের জয়গান। এ মন্তব্য অনেকের।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More