ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ নিয়ে কেন এতো আলোচনা

স্টাফ রিপোর্টার: ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে আবার উত্তপ্ত ইডেন ক্যাম্পাস। এখানকার ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সিট-বাণিজ্যসহ চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগে এ ঘটনা নতুন নয়। আগের কমিটির নেত্রীরাও নানাভাবে ছিলেন আলোচনা-সমালোচনায়। দুই গ্রুপের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষসহ নানা নেতিবাচক কর্মকা-ের কারণে এর আগেও স্থগিত করা হয়েছিল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি। তাদের বিরুদ্ধেও আনা হয়েছিল সিট-বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ওই কমিটি স্থগিতের তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আমরা ইডেনের কমিটি স্থগিত করেছিলাম। তবে তখন শুধু ইডেনের কমিটি নয়, যেকোনো শাখা কমিটি কোনো ধরনের নেতিবাচক কর্মকা-ে জড়িত থাকলে আমরা তাদের বিরুদ্ধেও সব সময় কঠোর ব্যবস্থা নিতাম। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন জেসমিন আক্তার নিপা। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ইশরাত জাহান অর্চি। ২০১৪ সালের ২৪ জুন শনিবার রাতে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখাকে কেন্দ্র করে শীর্ষ এই দুই নেতার দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর কমিটি স্থগিত করা হয়। কিন্তু কমিটি স্থগিতের পরেও ক্যাম্পাসে নানা নেতিবাচক কর্মকা-ে জড়িয়েছিলেন ছাত্রলীগ নেত্রীরা। স্থগিত কমিটির শীর্ষ নেতা ও তাদের অনুসারীদের হাতে মারধরের শিকার হতেন সাধারণ ছাত্রীরা। বাদ যাননি ওই কমিটির পদধারীরাও। ওই সময় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক মুনমুন নাহার বৈশাখীকে পিটিয়ে আহত করেছিলেন সাধারণ সম্পাদক ইশরাত জাহান অর্চি। কলেজের রাজিয়া বেগম ছাত্রীনিবাসে এ ঘটনা ঘটেছিল। যদিও তখন নিজের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন অর্চি। এছাড়া ওই সময় ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে ইডেনের রাজিয়া ছাত্রীবাসে প্রবেশের অভিযোগও উঠেছিল। এর পেছনে ইডেন ছাত্রলীগের শীর্ষ এক নেত্রীর প্রশ্রয় ছিল বলেও তখন সমালোচনা হয়েছিল। ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর তাছলিমা আক্তারকে আহ্বায়ক করে ১৫ সদস্যের যুগ্মআহ্বায়ক ও ৪৩ জন সদস্য নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। এরপর দীর্ঘ সময় গেলেও সম্মেলন হয়নি। তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলেছে দীর্ঘ দিন। এই কমিটি নেত্রীদের বিরুদ্ধেও ছিল সিট-বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। এর প্রায় আড়াই বছর পরে ২০১৯ সালে সম্মেলন হলেও কোনো কমিটি হয়নি। প্রায় তিন বছর কমিটিবিহীন ছিল ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ। চলতি বছরের ১৩ মে তামান্না জেসমিন রিভাকে সভাপতি এবং রাজিয়া সুলতানাকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৪৮ সদস্যের ওই কমিটিতে ৩০ জন সহসভাপতি, পাঁচজন যুগ্মসাধারণ সম্পাদক, সাতজন সাংগঠনিক সম্পাদক ও চারজনকে কেন্দ্রীয় সদস্য করা হয়। কমিটি গঠনের পর থেকেই আবার নানা সমালোচনার জন্ম দেন তারা। গত কয়েক দিনের ঘটনায় বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী ও তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী উভয়পক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়েছে। ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়ার বিরুদ্ধে সিট-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, মেয়েদের অনৈতিক প্রস্তাব প্রদানসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে আন্দোলন করেছে একটি গ্রুপ। রোববার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদেরই শুধু স্থায়ী বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এদিকে ইডেনে ছাত্রলীগের এসব ঘটনা যেন স্থায়ী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতি বছরই থেমে থেমে চলে এসব ঘটনা। এর নেপথ্যে কাজ করেছে সিট-বাণিজ্যসহ নানা ধরনের চাঁদাবাজি। এ লক্ষ্যে আধিপত্য বিস্তারে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। বিভিন্ন সময়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও শৃঙ্খলা ফিরছে না। আর রহস্যজনক কারণে সব সময়ই ‘নীরব দর্শকের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। কখনোই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার নজির নেই। ফলে পুনরাবৃত্তি ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতা বলেন, ইডেনের কমিটি গঠনে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের তদবির থাকে। তাদের ‘আর্শীবাদ’ পেয়ে নেতা হওয়ার পর ওই নেত্রীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তারা অনেক সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশনাতেও পাত্তা দেন না। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (১৯৮৮-১৯৯২ কমিটি) এবং আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, আমাদের পরামর্শ থাকবে যেন অতিদ্রুত তদন্তের মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আমরা আশা করি বর্তমান নেতৃত্ব এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে ক্যাম্পাসে ও সংগঠনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে। একইসঙ্গে আরেকটি কথা হলো- যে অনিয়মগুলোর অভিযোগ আসছে, সেগুলো নিয়ে প্রশাসন কী করছে? তাদের নাকের ডগায় এগুলো হলে তাদেরও তো একটা দায় থাকে। এটা যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, তাই এখানে কলেজ প্রশাসন, শিক্ষক, অভিভাবক, গণমাধ্যম সবাইকে মিলে কাজ করতে হবে। যাতে ক্যাম্পাসে সুন্দর পরিবেশ ফিরে আসে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More