ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪০ জনের প্রাণহানি

 

স্টাফ রিপোর্টার: চলতি বছরের ঈদুল আজহার আগে ও পরে গত ৭ বছরের মধ্যে দেশে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সারাদেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৩১৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৪০ জন। আহত হয়েছেন ৭৯১ জন। গত বছর ঈদুল আজহার তুলনায় এ বছর দুর্ঘটনা বেড়েছে ২৪.৭৬ শতাংশ এবং নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১.৪১ শতাংশ। এ ছাড়া এবারের ঈদে সর্বাধিক ১১৩টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৩১ এবং আহত হয়েছেন ৬৮ জন। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজ্জাম্মেল হক চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব বলেন, করোনা না থাকার কারণে এবারের ঈদে বেশি মানুষের যাতায়াত হয়। রাজধানী থেকে ১ কোটি ২০ লাখ এবং ৪ কোটি মানুষ আন্তঃজেলায় যাতায়াত করেছে। এ ছাড়া এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি ভাড়া নৈরাজ্য হয়েছে এবং ৪ ঘণ্টার যাত্রা ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা সময় লেগেছে। ঈদযাত্রায় সড়কে যানজটের সুযোগ লুফেছে হোটেল ব্যবসায়ীরা। তারা নিম্নমানের খাবার বেশি দামে বিক্রি করেছে। পথে পথে যাত্রী হয়রানি ও ভাড়া নৈরাজ্যের পাশাপাশি ফিটনেসবিহীন বাসের পাশাপাশি ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, মুরগিবাহী প্রিজনভ্যানেও যাত্রী যাতায়াত করতে দেখা গেছে। বরাবরের মতো ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয়, টিকিট কালোবাজারি, টিকিট পেতে বিড়ম্বনাসহ নানা ভোগান্তি রেল যাত্রীদের পিছু লেগেই ছিল। পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রী সংকটে দেশের বিভিন্ন নৌপথে ভাড়া কমানো হলেও ঈদযাত্রায় টিকিট কালোবাজারি, ভাড়া নৈরাজ্য নৌপথের যাত্রীদের আগের মতোই ছিল। তিনি জানান, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদ থেকে তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।

প্রতিবেদন দেখা যায়, ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৩ জুলাই থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৭ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩১৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪০ নিহত এবং ৭৯১ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ নিহত ও ২ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১০টি দুর্ঘটনায় ১৭ নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছেন এবং ৩ জন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার তথ্য মিলেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে ছিল মোটর সাইকেল। এবারের ঈদে ১১৩টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩১ নিহত এবং ৬৮ জন আহত হয়েছেন। তবে মোটর সাইকেল বন্ধ করায় ৯ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে বলে মনে করছেন সমিতির বিশ্লেষকরা।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩২.৯১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৬.৭০ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১৫.৩৬ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়া সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪.৭০ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ঈদে যাতায়াতকারী ব্যক্তিগত যানের চালকদের রাতে এসব জাতীয় সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালানো; জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকা; মহাসড়ক নির্মাণে ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা; উল্টো পথে যানবাহন চালানো; সড়কে চাঁদাবাজি; পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহণ; মোটর সাইকেল, ইজিবাইক এবং অটোরিকশার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ৮টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতে অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা; দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ; যানবাহনের ত্রুটি সারানোর উদ্যোগ গ্রহণ; ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা; সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা; চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা; সড়কে রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা; সড়ক পরিবহণ আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা। এ ছাড়া ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ রোধ; গণপরিবহণ বিকশিত করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা এবং নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More