ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি অফিস, আদালত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল শেষ কর্মদিবস। অফিস শেষে টানা ছয় দিনের ছুটি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে আজ ও কাল সাপ্তাহিক ছুটি। রোববার মহান মে দিবস। এর সঙ্গে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। আগামী বুধবার পর্যন্ত এ ছুটি চলবে। যারা আগামী বৃহস্পতিবার ছুটি ম্যানেজ করতে পেরেছেন তারা নয় দিনের ছুটিতে যাচ্ছেন। ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনও সিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে বিভিন্ন রুটের ট্রেন। ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন অধিকাংশ যাত্রী। সেই দুর্ভোগের রেশ না যেতেই ট্রেনযাত্রীরা নতুন করে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। যাত্রার দিন সিডিউল বিপর্যয়ের ফাঁদে পড়েছেন তারা।

শেষ কার্যদিবসের পরপরই ঈদ আনন্দে বাড়ি যাওয়ার হিড়িক পড়ে। রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এবং ঢাকা নদীবন্দরে (সদরঘাট) যাত্রীদের ভিড় কম ছিল। তবে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। গভীর রাতে টার্মিনালগুলো মানুষের ঢল নামে। বাস ও লঞ্চে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। অনেককে বাসের বিকল্প হিসাবে ট্রাকেও যেতে দেখা গেছে। তবে আজ শুক্র ও কাল শনিবার যাত্রী ঢল আরও তীব্র হবে বলে ধারণা করছেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। বৃহস্পতিবার কমলাপুর রেলস্টেশনসহ সব স্টেশনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল।

সদরঘাট ঘুরে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর থেকে সদরঘাটে যাত্রীদের ঢল নামে। লঞ্চের ভেতরে যেন হাটার জায়গা নেই। যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদ সামনে রেখে আগের চেয়ে বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। শ্রেণি ভেদে ভাড়া ৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, পরিবহণ সংশ্লিষ্ট ও যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এবার ঈদে উত্তরবঙ্গ, সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের রুটগুলোতে সড়কপথে গাড়ির চাপ থাকলেও উল্লেখযোগ্য যানজট তৈরি হয়নি। ফলে অনেকটা স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন যাত্রীরা। বাস নির্দিষ্ট গন্তব্যে গিয়ে যাত্রী নামিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে আসতে পারছে। তবে বিপত্তি হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের রুটে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি পার হতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগছে। শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ও মাঝিরকান্দি ফেরি রুটে শুধু ছোট ও মাঝারি আকারের গাড়ি পার করায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে গাড়ির চাপ বেশি রয়েছে। এ রুটে ২১টি ফেরিতে গাড়ি পার করা হচ্ছে। অপর দিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের রুটগুলোতে ৭১টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম-পরিচালক শেখ মো. সেলিম রেজা বলেন, পর্যাপ্ত লঞ্চ রয়েছে। শিল্প-কারখানা বন্ধের পর মূলত যাত্রী চাপ অনেক বেড়ে যাবে। ওই চাপ মোকাবেলা করতে লঞ্চের অতিরিক্ত ট্রিপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওভারলোডিং ও বাড়তি ভাড়া যাতে আদায় না করতে পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, সন্ধ্যা থেকে ঘরে ফেরা মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। যাত্রী কম থাকায় সারা দিন এক ধরনের হতাশার সুর ছিল পরিবহণ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। দারুস সালাম থেকে গাবতলী ভেড়িবাঁধ পর্যন্ত মাঝেমধ্যেই যানজট থাকলেও বাস স্টেশনের ভেতরে ছিল প্রায় ফাঁকা। সন্ধ্যার পর থেকে যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে। সাউদিয়া পরিবহণের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ জানান, ঢাকা-ফরিদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠি রুটে চলে তাদের কোম্পানির বাস। এ ছাড়া কুষ্টিয়া রুটেও গাড়ি চলে। সাধারণত সকাল থেকে বেলা ৩টার মধ্যে ৫-৭টি গাড়ি ঢাকা ছেড়ে যায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার যাত্রীর অভাবে মাত্র একটি বাস ছাড়া হয়। তিনি বলেন, যাত্রীরা লোকাল গাড়িতে ভেঙে ভেঙে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রো বাস, মোটরসাইকেল যে যা পারছেন তাতেই ছুটছেন গ্রামের দিকে। এ ছাড়া মাওয়া হয়ে অনেক যাত্রী চলে যাচ্ছেন। বাকিরা গাবতলী হয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে যাত্রী বেড়েছে। এখন গাড়ি ছাড়তে শুরু করেছে। মাগুরার যাত্রী সরকারি চাকরিজীবী রাফিক জানান, টিকিট পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে টিকিটের দাম বেশি নেওয়া হয়েছে। ৫০০ টাকার জায়গায় ৭০০ টাকা নেয়া হয়েছে। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে সকালের দিকে ঘরমুখো মানুষের চাপ থাকলেও দুপুরে তা ছিল না। আবার সন্ধ্যার পর উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। এ টার্মিনালে তাৎক্ষণিকভাবে টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছেন যাত্রীরা। তবে এর জন্য অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়েছে।

এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে যাত্রী সাধারণের যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘœ করতে বিআরটিএ, পুলিশ বিভাগ, সিটি করপোরেশন এবং পরিবহণ মালিক, শ্রমিক ইউনিয়নের সমন্বয়ে ‘ভিজিলেন্স টিম’ গঠন করা হয়েছে। এর সদস্যরা সব সময় টার্মিনালে অবস্থান করছেন। এ ছাড়া র‌্যাব-২ এর কন্ট্রোল রুমও রয়েছে। ভিজিলেন্স টিমের সদস্য বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সহকারী পরিচালক উথোয়াইনু চৌধুরী জানান, বাড়তি ভাড়া নেওয়া বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। বাড়তি ভাড়া যাতে না নিতে পারে, বাসে সিটের বেশি যাতে যাত্রী না নেয়া হয়, স্বাস্থ্যবিধি ও যাত্রীদের নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছুনোর বিষয়গুলো তদারকি করছি আমরা। এখানে সব কিছুই ঠিক আছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More