এমসি কলেজে গৃহবধূ গণধর্ষণে ঘটনায় সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড়

বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই মূলত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি : সব ধর্ষণের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি

স্টাফ রিপোর্টার: সিলেট এমসি কলেজে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনায় রাজধানীসহ সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে রোববার দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। তারা ধর্ষণের ঘটনা রুখতে রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি এ ঘটনার প্রতিবাদে গত ৩ দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো তোলপাড় চলছে। সেখানে শুধু এমসি কলেজের ঘটনাই নয়, খাগড়াছড়িতে প্রতিবন্ধী আদিবাসী কিশোরীসহ সব ধর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ১০০ জন ধর্ষকের মধ্যে শাস্তি পাচ্ছে ৩ জন। ৯৭ ভাগ ধর্ষণের ঘটনায় শাস্তি না হওয়ায় দিন দিন এমন অপরাধ বাড়ছে। এমসি কলেজে যে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এটি অমার্জনীয় ও জঘন্য অপরাধ। নৈতিকতার অভাব এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্যই মূলত দিন দিন ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এমসি কলেজে যে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এটি অমার্জনীয় ও জঘন্য অপরাধ। অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করতে হবে। তিনি বলেন, এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। অপরাধ দমনের একটিই উপায়, অপরাধীদের চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা। ধর্ষণের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই সাক্ষীর অভাবে নানা কারণে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত অনেকেই আইনের আওতায় আসে না। ধর্ষণের আইন সংস্কার করে সময়োপযোগী করা প্রয়োজন। যাতে করে ধর্ষণের যে অভিযোগগুলো সাধারণত প্রমাণ করা যায় সেগুলো দিয়েই মামলা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, নৈতিকতার অভাব এবং আইনের শাসন নেই বলেই ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। তিনি বলেন, যারা ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে তারা মনে করে তাদের কিছু হবে না। আসলে দেশে আইন আছে কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। এ কারণে এগুলো হচ্ছে। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা আছে। সর্বোপরি রাজনৈতিক প্রভাবও আছে। অপরাধ বিশ্লেষক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, একটি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা এভাবে বাড়তে থাকা সত্যিই দুঃখজনক। যেভাবে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে এখন দেশের প্রত্যেকটি মানুষের লজ্জায় মুখ ঢাকা উচিত। আমাদের অন্তত একটা দিন ৫ মিনিট মুখ ঢেকে রাখা উচিত। তিনি বলেন, পুরুষের ভেতরে যে একটা নৈতিকতা ছিলো, একটা নিয়ন্ত্রণ ছিলো, সেটা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এখনও এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না যাতে কমবে ধর্ষণ। ধর্ষকদের আটক ও বিচারে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব যাতে আমলে না নেয়া হয়, সেজন্য সব পক্ষকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, এমসি কলেজে ধর্ষণের ঘটনায় সরকার কঠোর অবস্থানে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিলেট এমসি কলেজে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ধর্ষণের ঘটনা ছাত্রলীগের জন্য নতুন কিছু নয়। এর আগেও দেশের বহুপ্রান্তে এমন অপকর্ম করে নজির সৃষ্টি করেছে তারা।

এদিকে এমসি কলেজে গণধর্ষণের ঘটনার পর রোববার সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতারা কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগসহ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছেন। কলেজের অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বামীর সঙ্গে এমসি কলেজে ঘুরতে গিয়েছিলেন এক তরুণী গৃহবধূ। এ সময় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী তাদের জোরপূর্বক কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে তরুণীকে গণধর্ষণ করে তারা। ওই রাত ১১টায় শাহপরান থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। এ ঘটনার পর ৬ জনকে আসামি করে মামলা হয়। এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More