ওমিক্রন সংক্রমণের আশঙ্কা

করোনাভাইরাসের বেশ কয়েকটি ঢেউয়ে সামাজিক-অর্থনৈতিভাবে বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে বিশ্ব যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলো ঠিক তখন করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নতুন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর ওমিক্রন ইতোমধ্যে অন্তত ১৮টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এ থেকেই এর অতি সংক্রমণের প্রবণতা ধরা পড়ে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার আগেই নেদারল্যান্ডসে প্রথম ওমিক্রন স্ট্রেইন ধরা পড়েছিল বলে কেউ কেউ দাবি করেছেন। প্রকৃত সত্য যা’ই হোক, করোনার ওমিক্রন ধরণ এখন বাংলাদেশেও চোখ রাঙাচ্ছে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো, এ ধরণের অতি সংক্রামক ভাইরাস প্রতিরোধে যে ধরণের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, আমাদের সরকার তা করতে বরাবরই ব্যর্থ হয়েছে। করোনার প্রথম সংক্রমণ কালে ইতালি থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থতা ধরা পড়েছিল। এমনকি ইতালি ফেরত যাত্রির সংখ্যা ও নাম-ঠিকানাও ঠিকমত সংরক্ষণ না করায় বিষয়টি অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছিল। করোনাকালীন দেড়বছর পেরিয়ে এসে এখন করোনার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সংক্রামক ধরণ ওমিক্রনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, গত একমাসে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা ২৪০জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে যে সব দেশে করোনার ওমিক্রন ধরণ শনাক্ত হয়েছে তাদের প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাতায়াত বা দক্ষিণ আফ্রিকার যাত্রিদের সাথে যোগাযোগের যোগসূত্র লক্ষ্য করা গেছে। ওমিক্রণ ধরা পড়ার আগে ভারতে শনাক্ত ডেল্টা ছিল সবচেয়ে বেশি সংক্রামক ধরণ। সেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশকে ততটা কাবু করতে না পারলেও দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের যে ক্ষতি হয়েছে তা থেকে উত্তরণ এখনো সম্ভব হচ্ছে না। ওমিক্রন বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লে তা দেশের অর্থনীতি ও সম্ভাবনাকে অনেকটা পিছিয়ে দিতে পারে বলে দেশে উদ্বেগ ও আশঙ্কা রয়েছে। ওমিক্রনের সংক্রমণ রোধ করতে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ সম্ভাব্য দেশগুলো থেকে আসা বিমান যাত্রীদের ১৪দিনের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক বলে ঘোষিত হওয়ার আগেই গত একমাসে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা ২৪০ জনের কোনো হদিস না থাকার খবরটি দেশের জন্য বড় উদ্বেগ ও আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। দেশে একটি নতুন অতি সংক্রামক করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মত ঝুঁকিপূর্ণ একটি বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ইমিগ্রেশন ও নিরাপত্তা গোয়েন্দা বিভাগের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক দুর্বলতা ও ফাঁক-ফোঁকড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বিষয়ে ব্রিফ করতে গিয়ে খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা ২৪০ জনের কাউকে ট্রেস করা যাচ্ছে না। বিমান বন্দরে এসব ব্যক্তি ভুল মোবাইলফোন নাম্বার ও অসত্য ঠিকানা দাখিল করেছে বলে জানা যায়।

যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা যাত্রিদের সম্পর্কে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও কোয়ারেন্টাইনের মধ্যেও বিভিন্ন দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা ফেরত শত শত ব্যক্তিকে নিখোঁজ রেখে বাংলাদেশে ওমিক্রন প্রতিরোধ সম্ভব কিনা ইতিমধ্যে সে প্রশ্ন জোরালো হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় এখন যতই তৎপর হোক, বিষয়টি ইতিমধ্যে অনেকদূর এগিয়েছে। এটি এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সাধ্যের বাইরে। দক্ষিন আফ্রিকা ফেরত কথিত নিখোঁজ ব্যক্তিরা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের ভুয়া ঠিকানা ও ভুল মোবাইলফোন নাম্বার দিয়ে থাকলে তাদেরকে শনাক্ত করার সম্ভাব্য সব বিকল্প পন্থাগুলো কাজে লাগাতে হবে। বিশেষত তাদের পাসপোর্ট নাম্বার ও ইমিগ্রেশনের সুত্র ধরে নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করা দেশের গোয়েন্দা বিভাগের জন্য খুব কঠিন কাজ নয়। এ ক্ষেত্রে আর সময় ক্ষেপণ করার সুযোগ নেই। সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে এসব ব্যক্তিকে শনাক্ত করে তাদেরকে কোয়ারেন্টাইন ও পিসিআর টেস্টের আওতায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। বিড়ম্বনা বা যে কারণেই হোক, যে সব ব্যক্তি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে এসে আত্মগোপণ করেছেন, তাদের কেউ করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হোন বা না হোন, আমরা আশা করব, তারা নিজেরাই স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে অন্তত ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন পালন করবেন। তবে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে, ওমিক্রনের সম্ভাব্য সংক্রমন ঠেকাতে তাদেরকে চিহ্নিত করে নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়ে আসা। বিমান বন্দরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও নেদারল্যান্ডসসহ যে সব দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে সে সব দেশ থেকে আসা সব যাত্রিদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। ওমিক্রন প্রতিরোধ ও মোকাবেলায় সম্ভাব্য সব উপায় নিয়ে এখনি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More