কঠোর বিধিনিষেধে চললেও এখন প্রায় সবকিছু স্বাভাবিক : রাস্তায় নেমেছে মানুষ

করোনা সংক্রমণরোধে মাঠে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে মাঠে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রশাসন। কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে তৎপরতা দেখা গেছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের। লকডাউন কার্যকর করতে মাঠে রয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। লকডাউনের ১২তম দিনে গতকাল রাস্তায় গাড়ির আধিক্যের কারণে দেখা দিয়েছে যানজট। একই সঙ্গে বেড়েছে বিনা কারণে বাসা থেকে বের হওয়ার অভিযোগে মামলা ও জরিমানার সংখ্যা। চলমান বিধিনিষেধ আগামীকাল ১৪ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এরপর কিছুটা শিথিল করা হতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরশু ১৫ জুলাই থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যে জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। দূরপাল্লার বাস ও সিটি সার্ভিসের বাসও চালুর দাবি জানিয়েছেন বাস মালিক ও শ্রমিকরা। এসব কারণে মানুষ রাস্তায় নেমে আসছে।
চুয়াডাঙ্গায় গত কয়েকদিন কঠোর লকডাউন চললেও এখন সবকিছু স্বাভাবিক দেখা যাচ্ছে। যদিও সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে তৎপর ছিলেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। চুয়াডাঙ্গার বড় বাজারে বিভিন্ন দোকানপাট বন্ধ থাকলেও দোকানের সামনে কর্মচারীদের দাঁড়িয়ে থাকতে এবং দোকানের ভেতরে কেনাবেচা করতে দেখা গেছে। ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখে দোকান বন্ধ করেই পালিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। আর যারা পালাতে পারছেন না তাদের জেল জরিমানা করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল ব্যাংকের ভেতরেও ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। ভিড় ছিল নিচের বাজারেও। এসব জায়গা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে। প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকলেও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বাইরে বের হচ্ছে মানুষ।
এদিকে, জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৪১টি মামলায় ৪৫ জনকে ১ লাখ ৪৪ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া ১ জনকে ১৪ দিনের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বর, গলির বাজার ও নিচের বাজারে অভিযান চালান জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন। এ সময় সড়ক পরিবহণ আইন, স্বাস্থ্যবিধি অমান্য ও সরকারি নির্দেশনা না মানায় ৬ টি মামলায় ১৪ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়। একই সময় অভিযান চালান জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম। অভিযানে ৪টি মামলায় ৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেন তিনি। অভিযানে সহযোগিতা করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। অপরদিকে দামুড়হুদার জুড়ানপুর, হোগলডাঙ্গা, ভগিরথপুর, গোপালপুর, লোকনাথপুর ও দর্শনা এলাকায় অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করায় বেশ কয়েকজনকে জরিমানা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুদীপ্ত কুমার সিংহ।
আসমানখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার আসমানখালী বাজারে মহামারী করোনা ভাইরাসে সরকারি বিধি অবমান্যনা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলা ও মাক্স ব্যবহার না করে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরার অপরাধে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ৬টার দিকে আসমানখালী বাজারে সামিয়া ফেশন ও সু হাউজ ও মিজান স্টোরের মালিক মিজানুর রহমানকে ২০ হাজার, রাহেরা বস্ত্র বিতানের মালিক জিয়াউর রহমানকে ১ হাজার ৫শ বিশ্বাস ফুডে ৩ হাজার ২৪ হাজার ৫শ এবং মোটরসাইকেল চালকের হেলমেড না থাকা ও মাস্ক ব্যবহার না করে বাহিরে চলা চল করার অপরাধে বিভিন্ন জনকে ৪ হাজার টাকা জরিমানা মোট ২৮ হাজার ৫শত টাকা জরিমানা করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা ডিসি অফিসের সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট রিফাত জাহান, ফিরোজ হোসেন, তারিক উর জ্জামান, মো. নজরুল ইসলাম এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন আসমানখালী পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ আনিছুর জামানসহ স্থানীয় ক্যাম্প পুলিশ, জেলা পুলিশের একটি দল ও আনসার সদস্যরা।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, সরকারি আইন অমান্য করায় মেহেরপুরে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা ও চলমান লকডাউনে সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য করে অযথা বাইরে ঘোরাফেরার অপরাধে মেহেরপুরে একজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালের দিকে মেহেরপুর শহরের হোটেল বাজার এলাকায় এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন মেহেরপুর পৌরসভার প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান। তিনি জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চালানোর অপরাধে আনোয়ার হোসেন নামের একজনকে মোটরযান আইন ২০১৮ এর ৬৬ ধারায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তিনি আরও জানান, জনস্বার্থে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ সময় তিনি মাস্কবিহীন পথচারীদের মাস্ক ব্যবহার সহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানান। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে তাকে ট্রাফিক সার্জেন্ট পবিত্রসহ মেহেরপুর পুলিশের সদস্যরা সহায়তা করেন। অপর দিকে কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে দোকান খোলার অপরাধে দোকান মালিকের নিকট থেকে জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদিন সকালের দিকে মেহেরপুর শহরে বড় বাজার এলাকায় ওই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহামুদুল হাসানের নেতৃত্বে পুলিশের সহযোগিতায় শহরে ভ্রাম্যমাণ অভিযান চলাকালে বড় বাজার এলাকার জামান বস্ত্রালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণরোধে চলমান বিধি-নিষেধ মানাতে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি খানম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে নির্দেশনা বাস্তবায়নে সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। এগারো দিনে মোট ৯৮টি মামলায় ৬১ হাজার ৫০০ টাকা অর্থদ- করেছেন তিনি। গেল ১ জুলাই কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ হলে জেলা প্রশাসন বিভিন্ন টিমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব প্রদান করেন। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে গেল ১২ দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত বেশ জোরালো ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। ফলে জরিমানার পরিমাণ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি খানম গাংনী উপজেলা শহরের পাশাপাশি গ্রামের দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দিকে বেশি মনোযোগ দেন। আর এতে গ্রামের চায়ের দোকানসহ অন্যান্য মাচানে আড্ডা নিয়ন্ত্রণে আসে। চলমান লকডাউনে মাস্ক পরার অভ্যেস অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। যা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ও পুলিশের তৎপরতার কারণেই সম্ভব বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মানুষ। থানা পুলিশের একাধিক টিম ও স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পগুলো নিজ নিজ এলাকার মধ্যে নির্দেশনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গেল বছরের লকডাউনের সময় গ্রামের মানুষের মাঝে মাস্ক পরার অভ্যেস ছিল খুবই কম। এবার গ্রামের রাস্তাঘাটে বা হাট-বাজারের বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক পরছেন। প্রশাসন ও পুলিশের জোরালো ভূমিকার কারণে এ পরিবর্তন বলে জানান স্থানীয়রা। গাংনী উপজেলা প্রশাসনসূত্রে জানা গেছে, ১ জুলাই থেকে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপের পর তা বাস্তবায়নে মাঠে নামেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি খানম। সকাল থেকে রাত অবধি এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান পরিচালনা করেন। স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া, মাচানে আড্ডা দেয়া, নির্দিষ্ট সময়ের পরেও দোকান খুলে রাখা, মোটরসাইকেলে দুইজন আরোহীসহ নিষেধাজ্ঞার অন্যান্য বিষয় লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ৯৮টি মামলায় ৬১ হাজার ৫০০ টাকা অর্থদ- করেন তিনি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More