করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্বের ৫০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন১। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ভারতসহ প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন দেশে নতুন করে এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ডিসেম্বরে প্রায় ১০ হাজার মানুষ করোনায় মারা গেছে। এর জন্য নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন১-কে দায়ী করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দেশেও বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল করোনা শনাক্ত হয়েছে ২১ জনের। মারা গেছেন একজন। দেশে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৯৯ জন। করোনার থাবায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৯ হাজার ৪৭৯ জন। ডিসেম্বরের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রতিদিন ৫-১০ জন করোনা আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যেত। কিন্তু ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। দেশে এখনো জেএন১ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত না হলেও সতর্ক থাকতে বলেছে করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে আবারও সবাইকে মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়েছে কমিটি। কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটি মাস্ক পরাসহ করোনা প্রতিরোধে অন্যান্য জনস্বাস্থ্যমূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়েও মতামত দেয়। বিশেষ করে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যেমন হাসপাতাল, অন্যান্য চিকিৎসাকেন্দ্র এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের জন্য আলাদা সতর্কবার্তা দিয়েছে কমিটি। এসব জায়গায় গেলে যারা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত এবং বয়স্ক তাদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন১ সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিশ্বের ৫০টি দেশে ছড়িয়েছে এ ভ্যারিয়েন্ট। দ্রুত গতিতে ছড়ানো এ ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত আক্রান্ত করছে মানুষকে। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের সবাইকে পুরনো অভ্যাস স্বাস্থ্যবিধি মানায় জোর দিতে হবে। সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। এখন অধিকাংশ মানুষের টিকা দেওয়া আছে। তাই ঝুঁকি অনেকটা কম। তবে যারা বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা কিংবা রোগে ভুগছেন তাদের টিকা এবং স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। ভারতের কেরালায় এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন১ সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোতেও আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। তবে দ্রুত ছড়ালেও জটিলতা কম হচ্ছে। তাই উদ্বিগ্ন না হয়ে শারীরিক জটিলতা আছে কিংবা দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্বজুড়ে তা-ব ছড়াচ্ছে করোনা। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত কয়েক দফা করোনার ঢেউ সামলেছে দেশ। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। এখনো যারা টিকা নেননি, তারা অবশ্যই টিকা নেবেন। যারা দুই ডোজ নিয়েছেন তারা বুস্টার ডোজ টিকা নিন। করোনাকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ এবং মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাবে। এখন সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখতে হবে। অণুজীব বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তদের ৬২ শতাংশ জেএন.১ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। সিডিসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এর প্রভাবে মৃত্যু বেড়েছে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে?, জেএন১-এর কারণে ডিসেম্বরে ১০ হাজার মানুষ করোনায় মারা গেছে। যা মহামারির থেকে কম কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর চেয়ে বেশি। ৫০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়েছে জেএন১ ভ্যারিয়েন্ট। তিনি আরও বলেন, ফ্রান্স, পর্তুগাল, যুক্তরাজ্য, ভারতেও এ ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনার এ ধরনকে ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। করোনার এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে খুব বেশি ঝুঁকি নেই বলে মনে হচ্ছে। কারণ এখন মানুষের মধ্যে ইমিউনিটি বেড়েছে। প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ করোনা টিকা পেয়েছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যাও অনেক বেশি। টিকা নেওয়া এবং এক বা একাধিকবার আক্রান্ত হওয়া মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি কাজ করছে। কিন্তু যারা বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন, আর্থ্রাইটিস কিংবা শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত এমন রোগীর জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে করোনার জেএন১ ভ্যারিয়েন্ট। ড. বিজন কুমার শীল বলেন, নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়ানোর এক বছর আগে ওমিক্রনের প্রকোপ ছিল। এই এক বছরের মধ্যে করোনার খবর ছিল না। নতুন করে আবার মাথাচাড়া দিয়েছে। কারণ শ্বাস ও পরিপাকতন্ত্রে করোনাভাইরাসের লোকাল প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই নেই। এরই সুযোগ নিয়েছে জেএন১ ভাইরাসটি। সে জন্য দ্রুত বংশবিস্তারের মাধ্যমে সে ছড়িয়ে পড়ছে। টিকা দেওয়া থাকলে কিংবা আগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে শরীরে করোনার জীবাণু প্রবেশের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। জেএন১ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে হালকা জ্বর আসে, শুষ্ক কাশি থাকে, স্বাদ, গন্ধ চলে যায়। অনেক রোগীর রক্তচাপ কমে যেতে পারে, ঘুমের সমস্যা হতে পারে, হাত, পা ব্যথা করবে, ক্লান্তি লাগতে পারে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More