করোনার সব সূচক ঊর্ধ্বমুখী : প্রাণ গেলো আরও ১৮ জনের শনাক্ত ১১৫৯

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে বিপদের আশঙ্কা : বর্তমানে আক্রান্ত ও মৃতের অধিকাংশই যুবক

স্টাফ রিপোর্টার: দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সব সূচক ঊর্ধ্বমুখী। এক সপ্তাহে দেশে নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে ৬৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। মৃত্যু বেড়েছে ৪৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। বর্তমানে আক্রান্ত ও মৃতদের বেশিরভাগই যুবক। অনেকেই মনে করছেন, এবারের সংক্রমণের সঙ্গে নতুন স্ট্রেইনের যোগসূত্র রয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি কেউ মানছে না। এটা মানানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে রাজধানীর এবং দেশের সব বিভাগীয় হাসপাতালকে সব ধরনের প্রস্তুতির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইসিইউ তৈরি রাখতে বলা হয়েছে। এ অবস্থায় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে বড় বিপদের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত জানুয়ারিতেই সংক্রমণের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে এসেছিলো। এক সপ্তাহের ব্যবধানে তা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। আগে যাদের মৃত্যু হতো তাদের বেশিরভাগই ছিলো বয়োবৃদ্ধ এবং নানা রোগে আক্রান্ত। কিন্তু বর্তমানে সংক্রমণের ক্ষেত্রে উলটো চিত্র দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১১৫৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। দৈনিক শনাক্ত রোগীর এ সংখ্যা গত আড়াই মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এর চেয়ে বেশি ১২৩৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিলো। অন্যদিকে একদিনে মৃত্যু এ সংখ্যা গত সাত সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২৪ জানুয়ারি ২০ জনের মৃত্যু হয়। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পরীক্ষার তুলনায় দৈনিক শনাক্তের হারও ৪ জানুয়ারির পর প্রথমবারের মতো ৭ শতাংশ পেরিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিলো ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং মৃত্যু হার ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে দেশের সব বিভাগীয় হাসপাতাল এবং রাজধানীর সব হাসপাতাল পরিচালকদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। নতুন করে করোনা মোকাবিলায় তাদের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে খোঁজ নেয়া হয়েছে। তারা যেসব সমস্যার কথা জানিয়েছেন, সেগুলো সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ওইসব হাসপাতালে যতগুলো আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) শয্যা রয়েছে সেগুলো প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পুনরায় বাড়তে শুরু করেছে। এখন কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে বড় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই তরুণ। আক্রান্তদের অনেককেই আইসিইউতে ভর্তি করতে হচ্ছে।

গত দুমাসে আমার কাছে কখনোই আইসিইউ শয্যার জন্য কোনো অনুরোধ আসেনি। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ফোন পাচ্ছি আইসিইউ শয্যা পাওয়া যাচ্ছে না। আগে আমরা দেখছিলাম যাদের কো-মর্বিডিটি আছে তাদের আইসিইউর প্রয়োজন হয়। এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তারা যুবক, ভালো, সুস্থ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।

সবাইকে সতর্ক করে মহাপরিচালক বলেন, গেলো দুমাস আমরা স্বস্তিতে ছিলাম, তাই এখন আমরা কোনো কিছু মানছি না। সামনের দিকে আমরা আরও বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছি, যদি-না আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানি। মহাপরিচালক জানান, সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ইতোমধ্যে দেশের সব হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সারা দেশের সিভিল সার্জন অফিসগুলোয় চিঠি পাঠানো হয়েছে। সারা দেশে আইসিইউগুলো প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি জোরদার করতে এরইমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কোভিড সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সদস্য এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, আমরা অল্পতেই আত্মতুষ্টিতে ভুগি। আবার একে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে বাঁচার চেষ্টা করি। বর্তমানে করোনা সংক্রমণ বাড়ার দায় জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। তারা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না।

অন্যদিকে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় সংগঠনগুলোও কোনো ধরনের নিয়মনীতি পালন করছে না। শুধু স্বাস্থ্যবিধি মানার মধ্যেই সংক্রমণ বাড়ার বিষয়টি আবদ্ধ করে রাখলে হবে না। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দেশে ছয়জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যাদের শরীরে ভাইরাসটির নতুন স্ট্রেইন পাওয়া গেছে। ভাইরাসের এই স্ট্রেইনটি অতিমাত্রায় সংক্রমণশীল। তাই এটাকে ধরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।

নতুন শনাক্তদের কন্টাক্ট ট্রেসিং নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। পাশাপাশি এখন সময় এসেছে পুথিগত কোয়ারেন্টিন পুরোপুরি নিশ্চিত করা। মনে রাখতে হবে, দেশে করোনা যখন প্রথম সংক্রমণ ঘটে তখন আমাদের নানা সীমাবদ্ধতা ছিল। প্রথমবারের ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়েই নতুন এ ঢেউ মোকাবিলা করতে হবে।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমতে থাকায় গত ১৯ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসে। এক পর্যায়ে তা ৩ শতাংশেরও নিচে নেমে আসে। এর মধ্যে সারা দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদানও শুরু হয়। কিন্তু মার্চের শুরু থেকে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় শনাক্তের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৯ মার্চ তা আবার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। শুক্র ও শনিবার দৈনিক শনাক্তের হার ৬ শতাংশের উপরে উঠে আসে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারায় এক সপ্তাহে দেশে নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে ৬৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, আর মৃত্যু বেড়েছে ৪৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে মোট পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার ২৩৬ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে আট হাজার ৫২৭ জনের।

স্বাস্থ্যবিধি মানতে মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনা: সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সবার মাস্ক পরা নিশ্চিতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) চিঠি দিয়েছে সরকার। রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এই নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ১৪ মার্চ সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়েছে।

দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে পাঠানো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাম্প্রতিক করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার গত কয়েক মাসের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। সংক্রমণের হার রোধে সবক্ষেত্রে সবার মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিষয়টি মনিটরিং করার জন্য সংশ্লিষ্টদের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নির্দেশনা দিয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More