করোনায় হাঁসের খামারে প্রায় ১ কোটি টাকা লোকসান

মাহফুজ মামুন: কর্মব্যস্ততা যেখানে নিয়মিত ছিলো সেখানে এখন শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে। করোনা ভাইরাসের কারণে হাঁসের খামারের কার্মক্রম সীমিত পরিসরে চলছে। হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনের মরসুমে এ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হয় খামারটিতে। লোকসানে বাচ্চা বিক্রি, মাছের খাবার ও মাটির নিচে পুতে ফেলতে হয় একদিন বয়সের হাঁসের বাচ্চাগুলো। নষ্ট হয়েছে কয়েক লাখ ডিম। এসব কারণে তিন মাসে হাঁসের খামারটিতে লোকসান গুণতে প্রায় ১ কোটি টাকা। তার মাঝে খামারে থাকা ৩০ হাজার হাঁসের জন্য খাবার, চিকিৎসাসহ অন্য ব্যবস্থা নিয়মিত করতে হচ্ছে। হাঁসের খামারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে বড় বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হতে পারে খামারটির। সরকারি সহযোগিতা পেলে খামারটির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুলপালা গ্রামে জাকির অ্যান্ড ব্রাদার্স মিক্সড এগ্রো ফার্ম অ্যান্ড হ্যাচারির কার্যক্রম চলছে। সেখানে ৪৮ বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে এ খামার। বেইজিং ও খাঁকি ক্যাম্বেল জাতের হাঁস রয়েছে খামারে। বেইজিং হাঁস ৫ হাজার ও খাঁকি ক্যাম্বেল জাতের হাঁস রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার। খামারে হাঁস রাখার জন্য ১৬টি শেড ও হ্যাচারিতে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য কয়েক ধরনের মেশিন রয়েছে।
হাঁসের খামারে ডিম ও বাচ্চা উৎপাদনের উপযুক্ত সময় মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত। এসময় দেশে ডিম ও বাচ্চার চাহিদা থাকে অনেক বেশি। ৩০ হাজার হাঁস থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৬-১৮ হাজার ডিম পাওয়া যায়। প্রতি মাসে গড়ে ৫ লাখ বাচ্চা উৎপাদন হয়। যা দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়। এখন করোনা ভাইরাসের কারণে ডিম ও একদিনের বাচ্চা বিক্রি হ্রাস পেয়েছে। টানা ২ মাসের বেশি সময় দেশে লকডাউন থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই থেমে যায়। পরিবহন সংকটের কারণে চাহিদা মতো সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। দেশে করোনা প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় হাঁস পালনে আগ্রাহ হারিয়ে ফেলে।
৩ মাসে হ্যাচারি থেকে প্রায় ১৫ লাখ একদিনের বাচ্চা উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত বাচ্চার মধ্যে ৫ লাখ বিক্রি করতে পেরেছি। তাও আবার প্রতিটি বাচ্চা বিক্রি করা হয় ৫-৭ টাকা দরে। যেখানে প্রতিটি বাচ্চা উৎপাদন থেকে বিক্রি পর্যন্ত ২০-২২ টাকা খরচ হয়। বাজারে বিক্রি হয় ৩০-৩৫ টাকায়। ১০ লাখ বাচ্চা অবিক্রিত থাকায় মাটিতে পুঁতে ফেলা ও মাগুর মাছের খাবার হিসেবে দেয়া হয়। ১৫ লাখ বাচ্চায় লোকসান হয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকার মতো।
হাঁসের বাচ্চা বিক্রি করে জেলায় প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো নিয়মিত। তারা বেকার হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে খামারের বেশ কয়েক জন লোক কাজ থেকে বাদ দিতে হবে।
আলমডাঙ্গা কুলপালা গ্রামের হাঁসের বাচ্চা বিক্রিতা হেকমত আলি বলেন, প্রতিদিন ৩শ’ মতো বাচ্চা গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করতাম। করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ কিনতে চাচ্ছে না। হাঁসের বাচ্চা বিক্রি করে প্রতিদিন আয় হতো ১২শ’-১৫শ’ টাকা। সংসার ভালোই চলতো। এখন কর্মহীন হয়ে বাড়িতে রয়েছে। সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।
জাকির অ্যান্ড ব্রাদার্স মিক্সড এগ্রো ফার্ম অ্যান্ড হ্যাচারির ম্যানেজার ইয়াছিন আলি বলেন, হাঁসের বাচ্চা বিক্রির মরসুমে আমাদের দুর্যোগের মধ্যে পড়তে হলো। বাচ্চা ও ডিম নষ্ট হয়েছে। হ্যাচারি ও খামারে প্রায় ৩০ জন লোক কাজ করে। অনেক টাকা লোকসান হয়েছে।
জাকির অ্যান্ড ব্রাদার্স মিক্সড এগ্রো ফার্ম অ্যান্ড হ্যাচারির মালিক জাকির হোসেন জানান, এ বছর খামার ও হ্যাচারিতে এখনও পর্যন্ত ১ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। সামনে যে অবস্থা তাতে করে লোকসান অব্যাহত থাকবে। হাঁসের বাচ্চা মাছের খাবার হিসেবে দেয়া হয়েছে। ৩০ হাজার হাঁস পালন করতে গিয়ে আর্থিক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অনেক খরচ হয়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, জাকিরের হাঁসের খামারটি অনেক বড়। করোনার কারণে খামারটির লোকসানের মধ্যে পড়তে হয়েছে। বাচ্চা ও ডিম বিক্রি কম হচ্ছে। হ্যাচারিতে বাচ্চা বেশি উৎপাদন হয়। সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হয় কি না সেটা চিন্তা করা হচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। খামার থেকে বাচ্চা ও ডিম বিক্রি করতে সমস্যা হচ্ছিলো। পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে কিছু ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More