করোনা আরেকটু নিয়ন্ত্রণে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে করোনাভাইরাস এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। পরিস্থিতি আরেকটু নিয়ন্ত্রণে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। এরপর ছেলেমেয়েরা স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করতে পারবে। তিনি বলেন, যারা করোনার টিকা নেবেন জনস্বার্থে তাদেরও মাস্ক পরে চলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে তিনি সবাইকে মাস্ক পরার আহ্বান জানান। সংসদ নেতা বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশে নানাভাবে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা চলছে। তবে যে যাই বলুক শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সমাপনী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করছিলেন। রেওয়াজ অনুযায়ী অধিবেশনে সংসদ নেতার সমাপনী বক্তব্যের আগে বিরোধীদলীয় নেতা বক্তৃতা করেন। এবারের অধিবেশনে একদিনও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরকে দেখা যায়নি। জিএম কাদের করোনা আক্রান্ত হলেও এখন তিনি করোনামুক্ত।

শেখ হাসিনা বলেছেন, মুজিবের বাংলায় কেউ গৃহহীন থাকবে না। ইতোমধ্যে ৭০ হাজার গৃহহীনকে ঘর দেয়া হয়েছে। আরও এক লাখ ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এ ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে। পদ্মা সেতু নিয়ে সমালোচনার জবাবে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে শেষ পর্যন্ত নৌকায় উঠতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতার অনুপস্থিতির কথা তুলে ধরে বলেন, এ অধিবেশন করোনার সময়ে চলছে। সেজন্য হয়তো সব সদস্যকে একই সঙ্গে আনা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের বিরোধীদলীয় নেতার এখানে আসার কথা ছিল। কিন্তু তার বাসায় একজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে তিনি জনগণের কথা চিন্তা করে এখানে আসেননি। আমরা তার বক্তৃতা শুনতে পারলাম না-এজন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু তার ভেতর যে জনগণের প্রতি কল্যাণমূলক চিন্তা এজন্য তাকে ধন্যবাদ। তিনি এলে ভালো হতো-আমরা তার বক্তব্যও শুনতে পেতাম।

সংসদের অধিবেশন সমাপ্তি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সফলভাবে এ অধিবেশন পরিচালনা করা হয়েছে। মনে হচ্ছে আমি একটা বড় কারাগারে বন্দি আছি। সংসদ চলার সময় আমি অধিবেশনে আসি, ভালো লাগে। সংসদে এসে সবার সঙ্গে দেখা হয়। তিনি আরও বলেন, এ অধিবেশনে অল্প সময়ের মধ্যে ১৩২ জন সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তব্য দিয়েছেন। কাজেই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন। করোনাকালে অধিবেশন পরিচালনার জন্য স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে এত কথা অথচ এরকম একটা কাজ নিজস্ব অর্থায়নে করলাম। সেটার প্রশংসা তো করতেই পারল না। উল্টো বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে, কেউ উঠবেন না। তাহলে নদীটা পার হবে কিসে মাননীয় স্পিকার। যদি নৌপথে যেতে হয় তাহলে নৌকায় যেতে হবে। উপায় তো নেই। তাকেও এখন নৌকায় চড়তে হবে। তিনি হাস্যরস করে বলেন, আমাদের নৌকা অনেক বড়, কোনো অসুবিধা নেই, সবাইকে নেব, তবে দেখতে হবে কেউ আবার নৌকায় বসে নৌকা ফুটো না করে। উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১২ বছর সরকার টানা ক্ষমতায় থাকায় উন্নয়নকাজ দৃশ্যমান হয়েছে। এক সময় ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বাংলাদেশ চলত। একেকটা দলের একেকটা নীতি আছে। বিএনপি বলেছিল, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। বিদেশ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না। অনেক প্রশ্ন তারা করেন, সমালোচনা করেন। আয়নায় মনে হয় ভালো করে চেহারা দেখেন না। আয়না দেখেন নিশ্চয়ই সেটা মেকআপের জন্য। কিন্তু নিজেদের কাজগুলো দেখেন না। তিনি আরও বলেন, তার সরকার দেশকে নিজ পায়ে দাঁড় করাতে চেয়েছে। সেটা পেরেছে। জনগণ ভোট দিয়েছে, তাদের মর্যাদা রক্ষা করা, সেবা করা সরকারের দায়িত্ব। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেছেন, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি যখন একটা দলের নেতা, স্বাভাবিকভাবে তাদের ওপর মানুষের আস্থা থাকে না, বিশ্বাস থাকে না। মানুষ এখন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সেবা পাচ্ছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে দেশের মানুষের কল্যাণ হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের আস্থা বিশ্বাস আওয়ামী লীগ অর্জন করেছে। যার প্রতিফলন দেখলাম স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। মানুষ এখন আন্তরিকভাবে ভোট দিচ্ছে। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে নির্বাচন মানে কি ছিল? সবাই জানে। যাদের গায়ে হাজার কালির ছিটা তারা আবার এত বড় কথা বলে কোন মুখে। তিনি আরও বলেন, আমরা ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দিচ্ছি। সেখানে ভোট নিয়ে কারচুপি করার কোনো সুযোগ নেই। যার যার ভোট সে নিজে দিচ্ছে। এখন আর ‘দশটা হোন্ডা বিশটা গু-া নির্বাচন ঠা-া’ সে পদ্ধতি নেই। বা ভোট হয়ে গেছে। ভোট বন্ধ একটা ঘোষণা করে দিল, সেটাও এখন আর নেই। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ছোটখাটো দু-একটা ঘটনা ছাড়া অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সুন্দরভাবে জনগণ ভোট দিয়েছে। ভোট দেয়ার আগ্রহ মানুষের মাঝে আমরা লক্ষ্য করেছি। সেজন্য দেশবাসীকে অভিনন্দন, ধন্যবাদ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার টিকা নিয়ে যখন গবেষণা শুরু হয় তখনই আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলাম কারা গবেষণা করছে, তাদের সঙ্গে আগে থেকে যোগাযোগ রাখার জন্য। টিকা বাজারে এলেই আমরা কিনব। এজন্য আমরা এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখি। যখনই বাজারে আসে তখনই ক্রয় করি। করোনা টিকা নিয়ে অনেকে কথা বলেছিলেন। আসলে টিকাই সেই সমালোচনার উত্তর দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্টাজেনেকার তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আমরা ক্রয় করেছি। টিকা নেয়ার পর খারাপ কোনো রিঅ্যাকশনের কথা শোনা যায়নি। তারপরও আমরা মনিটর করছি। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে শুরু হবে। প্রথম কারা পাবেন সেটাও আমরা ঠিক করে ফেলেছি। এ নিয়ে দেশে প্রশংসা শুনিনি। কিন্তু জাতিসংঘের মহাসচিব প্রশংসা করেছেন।

সংসদ নেতা বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দেশ তখন সারা বিশ্বে দুর্নীতিতে এক নম্বর। ক্ষমতায় থাকতে তারা ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। দুর্নীতির দায়ে এতিমের অর্থ আত্মসাতের দায়ে তাদের কারাবরণ করতে হয়। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলা, গ্রেনেড হামলা করে প্রকাশ্যে বিরোধী দলকে হত্যা বা আমাকে হত্যার প্রচেষ্টার মামলা, এসব মামলায় যারা সাজাপ্রাপ্ত, এরা যখন কোনো দলের নেতৃত্বে থাকে সেই দল জনগণের কাজ করবে কিভাবে? জনগণ তাদের কাছ থেকে আস্তে আস্তে সরে গেছে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More