কাল শুরু এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা : চুয়াডাঙ্গায় এবার পরীক্ষার্থী ১৪০৯৭ জন

নিবন্ধিত হয়েও অংশ নিচ্ছেন না সোয়া ৪ লাখ শিক্ষার্থী : পরীক্ষা ২ ঘণ্টার সময়ে এক ঘণ্টা পেছালো

স্টাফ রিপোর্টার: আগামীকাল ১৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে একযোগে এবং একই প্রশ্নপত্রে ২০২২ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এ পরীক্ষায় সব কয়টি শিক্ষা বোর্ডের (নয়টি সাধারণ এবং দুটি বিশেষায়িত-কারিগরি ও মাদরাসা) অধীনে সর্বমোট ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে নিয়মিত শিক্ষার্থী ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৯২৩ জন। বাকি ১ লাখ ২৭ হাজার ৯৪৫ জন অনিয়মিত ও ফল উন্নয়ন প্রত্যাশী। এ তথ্য আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি সূত্রে। সব বোর্ডের তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে এবং বোর্ডগুলো থেকে দেয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০ সালে নবম শ্রেণিতে সব বোর্ডে নিবন্ধিত হয়েছিল ২৩ লাখ ১৮ হাজার ৯২৫ জন। এরাই ২০২২ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন নিয়েছিল বা নিবন্ধনের আবেদন করেছিল। কিন্তু ২০২২ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে নিয়মিত শিক্ষার্থী ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৯২৩ জন। পরিসংখ্যান বলছে, নিবন্ধিত নিয়মিত ৪ লাখ ২৫ হাজার ২ জন শিক্ষার্থী ২০২২’র চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না। চুয়াডাঙ্গায় এবছর চুয়াডাঙ্গা জেলা মোট ১৪ হাজার ৯৭ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় ১১ হাজার ২১৩ জন, এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় ১ হাজার ৮৬৩ জন এবং দাখিল পরীক্ষায় ১ হাজার ২১ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন জেলার সকল পরীক্ষার্থীর সাফল্য কামনা করে বলেছেন, পরীক্ষাসমূহ শুরু থেকে সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত জেলার সকল কেন্দ্রের সকল সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আজকের শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের ভবিষ্যত। এদের শিক্ষাগ্রহণে আন্তরিক করতে সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ছাড়া অনাকাঙ্খিত কোন ব্যাক্তি প্রবেশ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেনি। আমাদের পরিসংখ্যান তা বলছে না। আমাদের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর এমন হয়, কেউ কেউ রেজিস্ট্রেশন করেও পরীক্ষা দেয় না। পরবর্তীতে তাদের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এ নিবন্ধন দিয়ে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী তিন বছর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।’

শিক্ষা বোর্ডগুলোর দেয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন বিষয়ে গত বছর অনুত্তীর্ণ ২৬ হাজার ৮৬৯ জন আর ফল উন্নয়ন পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৮২৭ জন। নিয়মিত পরীক্ষার্থী ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৯২৩ জন।

বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের তথ্যমতে, কারিগরি বোর্ডের অধীন এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালে এ বছর সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না। মোট ২ লাখ ১১ হাজার ৫১৪ জন রেজিস্ট্রেশন করলেও পরীক্ষা দিচ্ছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৬৪৯ জন। চূড়ান্ত পরীক্ষার বাইরে থাকছে, ৬৯ হাজার ৮৬৫ জন। এ তালিকায় এরপরেই রয়েছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। দাখিলে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৮৮৮ জন রেজিস্ট্রেশন করলেও পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯৯৬ জন। বাদ যাচ্ছে ৭৯ হাজার ৮৯২ জন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে মাদরাসা বোর্ডে আর সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে যশোর বোর্ড। এ বছর যশোর বোর্ডে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৯৭ জন পরীক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করলেও অংশ নিচ্ছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৯০ জন। পরীক্ষা দিচ্ছে না ৩৩ হাজার ৪০৭ জন। চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ না নেয়া সাধারণ বোর্ডের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কুমিল্লা বোর্ড। ওই বোর্ডে ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। এছাড়া ঢাকায় ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ১২ দশমিক ৩১ শতাংশ, বরিশালে ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, সিলেটে ১৪ শতাংশ, দিনাজপুরে ১৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন না।

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিলো গত ১৯ জুন। কিন্তু সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় উজান থেকে ধেয়ে আসা পানিতে পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটায় এসএসসি ও সমমানের সব পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়। পরে ১৫ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা শুরুর নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে, আন্তঃবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার মঙ্গলবার বলেন, পরীক্ষা গ্রহণের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। বোর্ডগুলো এখন পরীক্ষা গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রশ্নফাঁসমুক্ত এবং সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা যেন সম্পন্ন করা যায়- সকল মহলের আন্তরিক সহায়তা দরকার।’ ২০২২ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা হবে বিগত করোনাকালের মতোই সীমিত ও পরিমার্জিত সিলেবাসে এ পরীক্ষা নেয়া হবে। তবে, এবার পাঠ্য সব বিষয়ের ওপর পরীক্ষা হবে।

আন্তঃবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সব বোর্ডের ২৯ হাজার ৫৯১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন শিক্ষার্থী মোট ৩ হাজার ৭৯০টি পরীক্ষা কেন্দ্র পরীক্ষা গ্রহণ করবে। দেশের বাইরে ৮টি দেশে ৩৬৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। এ পরীক্ষা ঢাকা বোর্ডের অধীনে দেশের বাইরেই ৮টি স্থানে অনুষ্ঠিত হবে। এগুলো হচ্ছে- জেদ্দা, রিয়াদ, ত্রিপরী, দোহা, আবুধাবী, দুবাই, বাহরাইন, ওমানের সাহাম। এসব কেন্দ্রে মোট ৩৬৭ জন প্রবাসী শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

এ বছর পরীক্ষা সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত হওয়ার কথা থাকলেও সার্বিক দিক বিবেচনা করে যানজট এড়াতে তা পিছিয়ে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। কেউ দেরি করলে তার কারণ গেটে রেজিস্টার খাতায় উল্লেখ করে প্রবেশ করতে হবে। সে তথ্য পরীক্ষা শেষে সংশি¬ষ্ট শিক্ষা বোর্ডে পাঠাতে হবে। কেন্দ্রের মধ্যে কেউ মোবাইল ব্যবহার করতে পারবে না। কোনো ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস বহন, ব্যবহার বা সঙ্গে রাখতে পারবেন না। প্রশ্নফাঁসের সতর্কতা হিসেবে আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More