কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুত সমিতির বিল দুই মাসে ২৪৫ : এক মাসেই ১৫০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: নিজাম আলী। পেশায় একজন রিক্সাচালক। বাড়ি কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার জুগিয়া দাসপাড়া এলাকায়। তিন মাস আগে তিনি তার বাড়িতে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পান। ছেলে রানা আহম্মেদ একজন দিনমজুর। পল্লী বিদ্যুতের মিটারটি তার ছেলে রানার নামেই নিয়েছেন। দুই কক্ষ বিশিষ্ট ঘরে ৩ টা বৈদ্যুতিক বাল্ব আর ২ টা ফ্যান চালান তিনি। বিদ্যুতের আলো পেয়ে বেশ খুশি হয়েছিলেন তিনি। দুই মাস ঠিকঠাক বিদ্যুত বিলও দিয়েছেন। মার্চ মাসে তার বিদ্যুতের বিল আসে ১০২ টাকা, এপ্রিল মাসে আসে ১৪৩ টাকা। যেমন ব্যবহার তেমন বিলে কোনো সমস্যায় হয়নি তার। কিন্তু মে মাসের বিল দেখে মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা তার। মে মাসে বিল এসেছে ১ হাজার ৫শ’ টাকা। দুই মাস মিলিয়ে যেখানে ২৪৫ টাকা সেখানে এক মাসেই ১৫০০ টাকা। বৃহস্পতিবার (০৪ জুন) বেলা ১১টা। কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুত সমিতির কার্যালয়ে দেখা যায় গ্রাহকদের উপচে পড়া ভীড়। বেশিরভাগ গ্রাহকদের অভিযোগ ভুতুড়ে বিল। সেই সাথে পরিশোধিত বিল তুলে দেয়া হয়েছে নতুন বিলের সাথে। নিজাম আলী আর তার পূত্রবধুও এসেছেন এই মাসে একবারে এত বিল আসার কারণ জানতে। ১ ঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরেও কোনো সমাধান হয়নি তাদের। নিজাম আলী বলেন, তিনটা এনার্জি বাল্ব জলে আর ২ টা ফ্যান। প্রথম মাসে ১০২, পরের মাসে ১৪৩। আর এই মাসে একবারেই এসেছে ১৫০০ টাকা। এত টাকা বিল একবারে দেয়ার কোনো সামর্থ আমার নেই। এক মাসে একবারে এত টাকা বিল হলো কিভাবে জানতে চাইলে তিনি জানান, গত দুইমাস যা বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়েছে এবারো তাই। তবে কিভাবে এত টাকা বিল এলো আমি বুঝতে পারছি না। অফিসে এসেছিলাম। ঘুরে ঘুরে কোন লাভ হলো না। বলছে বিল দেয়া লাগবে। যদি সমস্যা মনে করেন তাহলে মিটার পাল্টাতে পারেন। ইতোপূর্বে জমা দেয়া বিদ্যুৎ বিল নতুন বিলের সাথে তুলে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ নিয়ে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে আসেন মিরপুর উপজেলার ছত্রগাছা এলাকার পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক জাহাঙ্গীর আলী। জাহাঙ্গীর আলী বলেন, এপ্রিল মাসের দেয়া বিল এমাসের বিলের সাথে যোগ করে দিয়েছে। এখান থেকে ঠিক না করে নিলে তো বেশি টাকা দেয়া লাগবে। আসতে যেতে আমার ১০০ টাকা খরচ। আবার আজকে কাজেও যেতে পারিনি। মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া এলাকার গ্রাহক ফারুক এসেছে হঠাৎ অতিরিক্ত বিল এসেছে এবং গড় বিল কিভাবে করেছে তা জানতে। সেই সাথে তিনি অভিযোগ করেন এ মাসে বিল অনেক বেশি এসেছে। তিনি বলেন, করোনার সময় জরিমানা নেয়া হবে না এমনটি বলছে কিন্তু ঠিকই একটার ওপর আরেকটা চাপিয়ে দিয়ে জরিমানা নিয়ে নিচ্ছে। একবারে বেশি ইউনিট দেখিয়ে অতিরিক্ত ধাপ দেখিয়ে বেশি টাকা নিচ্ছে। গড় বিল তো ব্যবহারের গড় করার দরকার। কিন্তু তারা ডবল করে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (০৪ জুন) কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে প্রায় ৩-৪শ’ গ্রাহক আসেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষের অভিযোগ ছিলো ভুতুড়ে বিল, গড় বিলে বেশি টাকা নেয়া, দেয়া বিদ্যুত বিল যোগ করা। তবে করোনার মধ্যে সামাজিক দূরত্বের নিদের্শনা থাকলে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে এর চিত্র পুরো ভিন্ন। একে অপরের খুব কাছাকাছি লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে গ্রাহকরা ঘন্টার পর ঘন্টা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বোর্ডের এক এলাকা পরিচালক  জানান, জেনারেল ম্যানেজারের কাছে কুষ্টিয়ার প্রায় ৫ লাখ গ্রাহকই বন্দী। এপ্রিল মাসের বিল অফিসে বসেই করেছে। করোনার কারণে বিল কম করে নিতে পারতো তবে প্রায় সকলেরই ডবল করেছে। সাধারণ মানুষ অভাবে রয়েছে কাজ নেই, সরকার তাই গড় বিল করতে বলেছে, কিন্তু কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ডবল করে গড় বিল লিখে দিয়েছে। ডিমান্ড চার্জ ডবল করেছে। কিন্তু এসব টাকা কোথায় যায় তার কোনো হদিস নেই। করোনার কারণে দুই মাস সমিতির মাসিক মিটিং না হলেও চলছে পুরো দমে কার্যক্রম। তিনি নিজেও ভুক্তভোগী দাবী করে বলেন, অভিযোগ দেবো কার কাছে, আমি নিজেও এই প্রতারণার স্বীকার। আমারও বিল বেশি এসেছে। জেনারেল ম্যানেজারকে এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানালে তিনি বলেন, পরে সমন্বয় করা  হবে। কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী সোহরাব আলী বিশ্বাস জানান, এর আগে আমরা গড় বিল করার কারণে বিলের ভোগান্তি হয়। কিন্তু এবার মিটার দেখে দেখে বিল করার কারণে সঠিক বিল হয়েছে। এতে বেশি বিল ওঠার কোনো ব্যাপার নেই। যেটা ব্যবহার করা হয়েছে সেটাই উঠেছে। করোনায় দূরত্ব মানার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি বলেন, নিরাপদ দূরত্ব মেনেই কাজ করছে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More